হায়দরাবাদ: অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় বার্ড ফ্লুর প্রভাব সরাসরি পড়েছে খাদ্যবাজারে। মুরগির চাহিদা হঠাৎ করেই কমে গেছে, যার ফলে দাম নেমেছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে নিচে। তবে, বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে মাটন ও মাছের বাজারে। চাহিদার বাড়বাড়ন্তে এসব পণ্যের দাম ছুঁয়েছে নতুন উচ্চতা।
মাটনের বাজারে উল্লম্ফন, ১,২০০-তে কেজি!
বার্ড ফ্লুর কারণে রাজ্যের মাটনের বাজার চাঙা হয়ে উঠেছে। হায়দরাবাদে মাটনের দাম প্রতি কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে ১,২০০ টাকায় পৌঁছেছে, যেখানে মাত্র কিছুদিন আগেও এই দাম ছিল ৮৫০ টাকা। করিমনগরেও মাটনের দাম ৮০০ টাকা থেকে লাফিয়ে ১,০০০ টাকায় পৌঁছেছে।
একজন মাংস ব্যবসায়ী জানালেন, “বার্ড ফ্লুর আতঙ্কে ক্রেতারা মুরগি খেতে চাইছেন না। ফলে বিকল্প হিসেবে মাটনের দিকে ঝুঁকছেন সবাই। বিশেষ করে বিয়ের মৌসুম হওয়ায় চাহিদা আরও বেড়েছে। এই ধারা বজায় থাকলে আগামী দিনে দাম আরও বাড়তে পারে।”
করিমনগরের এক মাংসের দোকান যেখানে আগে প্রতিদিন ৩০০ কেজি মাটন বিক্রি করত, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে ৫০০ কেজিতে দাঁড়িয়েছে।
মাছের বাজারেও লাগামছাড়া দাম
মাটনের পাশাপাশি মাছের বাজারেও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। গোদাবরী অঞ্চলে মাছের দাম প্রতি কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
হায়দরাবাদের মুশিরাবাদ মাছ বাজারে গত রবিবার ৬০ টন মাছ বিক্রি হয়েছে, যেখানে স্বাভাবিক দিনে এই পরিমাণ থাকত ৪০ টনের আশেপাশে। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে মাছের দামও বাড়তি। জনপ্রিয় রাভা ও বোচা মাছের দাম প্রতি কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে, বিশাখাপত্তনমে ভেঞ্জারাম ও কনাম মাছের দাম ৩০০-৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০-৭০০ টাকা প্রতি কেজি হয়েছে।
একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বললেন, “আমরা শুধু মধ্যস্থতাকারী। বড় ব্যবসায়ীরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন, ফলে দামও তাদের ইচ্ছামতো ওঠানামা করছে।”
মুরগির বাজারে ধস, ব্যবসা বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ
বার্ড ফ্লুর কারণে রাজ্যের পোলট্রি শিল্প কঠিন সংকটে পড়েছে। মুরগির প্রতি মানুষের অনাগ্রহের ফলে দাম ২৫০ টাকা থেকে কমে ১০০ টাকায় নেমে এসেছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের পোলট্রি সংস্থাগুলি ‘ফ্রি চিকেন ফেয়ার’-এর মতো উদ্যোগ নিচ্ছে। রাজান্না সিরসিল্লা জেলায় বিনামূল্যে মুরগি বিতরণ করছে ভেঙ্কব চিকেন কোম্পানি। সংস্থার এক মুখপাত্র জানালেন, “মানুষের মধ্যে একধরনের ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে যে বার্ড ফ্লু মুরগির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকরা স্পষ্ট বলেছেন, এটি সত্য নয়। আমাদের প্রচেষ্টা হলো মানুষের মধ্যে এই ভুল ধারণা দূর করা।”
পোলট্রি কোম্পানিগুলোর আশা, এমন উদ্যোগের মাধ্যমে মুরগির বাজার আবার স্বাভাবিক হবে এবং ভোক্তাদের আস্থা ফিরবে। এখন দেখার, কবে কাটে বার্ড ফ্লুর আতঙ্ক, আর কবে ঘুরে দাঁড়ায় মুরগির বাজার!