সুপ্রিম কোর্ট: সংসদীয় আইনকে আদালত অবমাননা বলে গণ্য করা যাবে না

সুপ্রিম কোর্ট: সংসদীয় আইনকে আদালত অবমাননা বলে গণ্য করা যাবে না
সর্বশেষ আপডেট: 05-06-2025

সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি তাদের এক রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সংসদ বা রাজ্য বিধানসভা কর্তৃক গৃহীত কোনও আইনকে আদালত অবমাননার (Contempt of Court) আওতায় আনা যাবে না।

নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সংসদ বা রাজ্য বিধানসভা কর্তৃক গৃহীত কোনও আইনকে আদালত অবমাননা বলে গণ্য করা যাবে না। কিন্তু যদি সেই আইন সংবিধানের কোনও ধারার সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে তার সাংবিধানিক বৈধতা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে।

এই মন্তব্য সুপ্রিম কোর্ট ছত্তীসগড় সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা অবমাননা মামলার রায় দিতে দিতে করেছে, যেখানে ‘ছত্তীসগড় সহায়ক সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী আইন, ২০১১’-এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

এই মামলা সমাজবিজ্ঞানী এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক নন্দিনী সুন্দরসহ অন্যান্য আবেদনকারীদের দ্বারা ২০১২ সালে দায়ের করা আবেদনের সাথে জড়িত, যেখানে ছত্তীসগড় সরকারের উপর ২০১১ সালের সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ওই আদেশে আদালত আদিবাসীদের বিশেষ পুলিশ কর্মকর্তা (SPO) করে তুলে মাওবাদীবিরোধী অভিযানে ব্যবহার করাকে অসংবিধানিক বলে ঘোষণা করে এবং তৎক্ষণাৎ এ ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল।

কী ছিল মামলা?

ছত্তীসগড় সরকার ২০১১ সালে একটি নতুন আইন তৈরি করেছিল, যার নাম ছিল "ছত্তীসগড় সহায়ক সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী আইন"। এই আইনের অধীনে পূর্বে কর্মরত SPO-দের একটি নিয়মিত সহায়ক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। আবেদনকারীরা এতে আপত্তি জানিয়ে এটিকে আদালত অবমাননা বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের আদেশ পালন করেনি, বরং তাকে উপেক্ষা করে নতুন আইন তৈরি করেছে।

আবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়েছিল যে রাজ্য এখনও পর্যন্ত সেই স্কুল ও আশ্রমগুলিকে সুরক্ষা বাহিনীর দখল থেকে মুক্ত করেনি, যার উপর সালভা জুডুম অভিযানের সময় দখল নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়ায়ও অবহেলা করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট বক্তব্য

বিচারপতি বি.ভি. নাগরত্ন এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মা সমন্বিত বেঞ্চ তাদের রায়ে বলেছে, “বিধানমণ্ডল কর্তৃক গৃহীত কোনও আইনকে আদালত অবমাননা বলে গণ্য করা যাবে না, তা আদালতের পূর্ববর্তী আদেশের সাথে সম্পর্কিত হোক বা না হোক।” কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে যে রাজ্য বিধানসভার আইন প্রণয়নের পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে এবং যতক্ষণ না সেই আইনকে অসংবিধানিক ঘোষণা করা হয়, ততক্ষণ তা কার্যকর থাকবে।

আদালত আরও বলেছে যে, যদি কোনও পক্ষ মনে করে যে আইনটি সংবিধানবিরোধী, তাহলে তাকে বৈধ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করতে হবে, অবমাননা আবেদনের মাধ্যমে নয়।

সুপ্রিম কোর্ট এই আদেশের মাধ্যমে ভারতের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতার বণ্টনকে তুলে ধরেছে। আদালত বলেছে যে বিধানমণ্ডলের এমন অধিকার রয়েছে যে তিনি কোনও আদালতের আদেশের মূল ভিত্তি দূর করতে বা তাকে কার্যকর করার জন্য আইনে সংশোধন করতে পারেন। এটি "চেকস অ্যান্ড ব্যালান্স" বা যাচাই ও ভারসাম্যের মূল উপাদান, যা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।

Leave a comment