সুপ্রিম কোর্ট ‘ঠগ লাইফ’ ছবির কর্ণাটকে মুক্তি বন্ধের হুমকির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। আদালত সরকারকে নিরাপত্তা দান এবং বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কমল হাসন: সুপ্রিম কোর্ট কর্ণাটকে অভিনেতা ও নেতা কমল হাসনের ‘ঠগ লাইফ’ ছবির প্রদর্শনী বন্ধ করার চেষ্টা করা ব্যক্তিদের কঠোর ভৎর্সনা করেছে। আদালত স্পষ্ট ভাষায় বলেছে যে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সেন্সর বোর্ড (CBFC)-এর দ্বারা প্রত্যয়িত ছবির মুক্তি বন্ধ করার কোন অধিকার রাখে না। আদালত কর্ণাটক সরকারকে এ ধরণের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার এবং তাদের পরিকল্পনা আদালতের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সরকারের উত্তর এবং নিরাপত্তার আশ্বাস
কর্ণাটক সরকার আদালতকে জানিয়েছে যে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং ছবির প্রদর্শনীর জন্য নিরাপত্তা দেওয়া হবে। সরকার এটাও স্পষ্ট করেছে যে, যদি ‘ঠগ লাইফ’ এখন মুক্তি পায়, তাহলে রাজ্যের সকল সিনেমা হলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
কেন হয়েছিল বিতর্ক
কমল হাসন এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে কন্নড় ভাষা তামিল থেকে উদ্ভূত। এই মন্তব্য নিয়ে কন্নড় সমর্থক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা ছবির মুক্তি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল এবং কমল হাসনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছিল। অভিনেতা ক্ষমা চাওয়া থেকে বিরত ছিলেন এবং বলেছিলেন যে তার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
পুলিশের ব্যবস্থা এবং প্রতিবাদকারীদের নোটিশ
এই বিতর্কের পর পুলিশ সেই গোষ্ঠীগুলিকে নোটিশ জারি করেছিল যারা ছবির মুক্তির বিরোধিতার হুমকি দিয়েছিল। আদালত এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যে, যদি কারও মতামতের সাথে মতবিরোধ হয় তাহলে তার অর্থ এই নয় যে তার ছবি বা অনুষ্ঠান বন্ধ করা উচিত।
সুপ্রিম কোর্টের কঠোর অবস্থান
শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট কর্ণাটক সরকারকে প্রশ্ন করেছিল যে রাজ্যে আইনের শাসন আছে নাকি জনতার। আদালত বলেছে যে ভারতে ছবিগুলি অভিব্যক্তির স্বাধীনতার অংশ এবং সেন্সর বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ছবির মুক্তি বন্ধ করা সংবিধান লঙ্ঘন। আদালত রাজ্য সরকারের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত কর্ম পরিকল্পনা চেয়েছে যে তারা এ ধরণের ঘটনার সাথে কীভাবে মোকাবিলা করবে।
আবেদনকারী কেন আবেদন করেছিলেন
প্রধান আবেদনকারী মহেশ রেড্ডি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন দায়ের করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে কর্ণাটক হাই কোর্ট ছবির মুক্তি ব্যাহত না হওয়া নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছিল। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাজ্য সরকারকে নোটিশ জারি করে।
হাই কোর্ট থেকে সুবিধা হয়নি
এর আগে কমল হাসন কর্ণাটক হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, কিন্তু সেখান থেকে তিনি সুবিধা পাননি। আদালত অভিনেতাকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল এবং বলেছিল যে তিনি সাধারণ মানুষ নন, রাজ্যসভা সদস্য হতে চলেছেন। অভিনেতা ক্ষমা চাওয়া থেকে বিরত ছিলেন এবং ছবির মুক্তি স্থগিত করেছিলেন।
ছবি সংস্থাগুলির অবস্থান এবং ইউ-টার্ন
বিতর্কের সময় কর্ণাটক ফিল্ম চেম্বার অফ কমার্স (KFCC) এবং কয়েকটি কন্নড় থিয়েটার সংস্থা হুমকি দিয়েছিল যে যতক্ষণ না হাসন ক্ষমা চান, ততক্ষণ ছবি মুক্তি দেওয়া হবে না। তবে, যখন এই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছে তখন KFCC বলেছিল যে তারা চাপের মধ্যে এমনটা বলেছিল এবং ছবির মুক্তির বিষয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই।
কমল হাসনের প্রতিক্রিয়া
সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রমের পর কমল হাসন বলেছেন যে তিনি রাজ্য সরকারের ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট এবং এই বিতর্ক এখানেই শেষ করতে চান। তিনি পুনরায় জোর দিয়েছেন যে তার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং তিনি কন্নড় ভাষার সম্পূর্ণ সম্মান করেন।