রাষ্ট্রপতি মুর্মুর ঐতিহাসিক সাবরিমালা সফর

রাষ্ট্রপতি মুর্মুর ঐতিহাসিক সাবরিমালা সফর
সর্বশেষ আপডেট: 07-05-2025

ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ১৯ মে কেরালের বিখ্যাত সাবরিমালা মন্দিরে ভগবান আয়াপ্পার দর্শন ও পূজা-অর্চনা করতে যাবেন। এই মুহূর্তটি ঐতিহাসিক হতে চলেছে কারণ তিনি দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে এই প্রাচীন ও পবিত্র মন্দিরে যাবেন।

নয়াদিল্লি: ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ১৮ ও ১৯ মে কেরালের ঐতিহাসিক সফরে যাবেন। এই সফরকালে তিনি একটি ঐতিহাসিক কাজ করতে যাচ্ছেন, কারণ তিনি দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে কেরালের বিখ্যাত সাবরিমালা মন্দিরে ভগবান আয়াপ্পার দর্শন করবেন। এটি কেবল রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার সফরের গুরুত্বপূর্ণ অংশই নয়, বরং ভারতীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

রাষ্ট্রপতির সফর: কেরালে ঐতিহাসিক মুহূর্ত

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ১৮ মে কেরালের কোট্টায়াম জেলায় একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন এবং ১৯ মে তিনি সাবরিমালা মন্দিরে দর্শন করতে যাবেন। এই সফর দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি প্রথমবার সাবরিমালা মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে যাচ্ছেন। সাবরিমালা মন্দির কর্তৃপক্ষ এই সফরের কথা নিশ্চিত করেছে এবং এটিকে গর্বের মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছে।

ত্রাভণকোর দেবস্বোম বোর্ড (TDB) এর চেয়ারম্যান পিএস প্রশান্ত জানিয়েছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এবং এই সফরের জন্য সকল প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। তিনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সফর নিয়ে এসপিজি (স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ) এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

রাষ্ট্রপতির সফরের নিরাপত্তা দিক

রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে, কারণ মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য তীর্থযাত্রীদের কঠিন আরোহণ করতে হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি মুর্মু পাম্পা বেস ক্যাম্প থেকে মন্দির পর্যন্ত আরোহণ করার পরিকল্পনা করতে পারেন। তবে, তিনি পাহাড়ে উঠবেন কি না তা এসপিজি ঠিক করবে।

টিডিবির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির পাহাড়ে আরোহণ করার বা না করার সিদ্ধান্ত এসপিজি নেবে। তিনি এটাও জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সফরের কারণে ১৮ ও ১৯ মে মন্দিরে সাধারণ ভক্তদের দর্শন করা যাবে না। রাষ্ট্রপতির দর্শনের জন্য কোনও ধরনের ভিড় এড়াতে এই সময়কালের জন্য মন্দিরের কিউআর টিকিট সেবাও বন্ধ রাখা হয়েছে।

সাবরিমালা মন্দির: একটি প্রতিষ্ঠিত তীর্থস্থান

সাবরিমালা মন্দির কেরালের পথাণামথিটা জেলায় অবস্থিত এবং এটি দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত তীর্থস্থানগুলির মধ্যে একটি। এই মন্দির সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। সাবরিমালা দর্শনের জন্য তীর্থযাত্রীদের কঠিন ভ্রমণ করতে হয়, যার মধ্যে ৪১ দিনের উপবাস এবং তারপর পাম্পা নদীর কাছ থেকে খালি পায়ে আরোহণ অন্তর্ভুক্ত।

মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য তীর্থযাত্রীরা নিজেদের সাথে ইরুমুডি (পবিত্র প্রার্থনা কিট) নিয়ে যায়, যার মাধ্যমে তারা ১৮ টি পবিত্র সিঁড়ি পার হয়ে মন্দিরের গর্ভগৃহে পৌঁছায়। এই ভ্রমণ একটি আধ্যাত্মিক তপস্যা বলে মনে করা হয়, যা ধর্মীয় বিশ্বাস এবং কঠোর সাধনার প্রতীক।

রাষ্ট্রপতির সাবরিমালায় ঐতিহাসিক আগমন

রাষ্ট্রপতি মুর্মুর সাবরিমালা মন্দিরে যাওয়া একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এর আগে ১৯৬৯ সালে তৎকালীন কেরাল রাজ্যপাল ভিভি গিরি সাবরিমালা মন্দিরে দর্শন করেছিলেন। তিনি প্রথম এবং একমাত্র রাজ্যপাল ছিলেন যিনি এই প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে পূজা অর্চনা করেছিলেন। এখন, ২০২৫ সালে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই মন্দিরে দর্শন করা প্রথম রাষ্ট্রপতি হবেন।

টিডিবির চেয়ারম্যান পিএস প্রশান্ত জানিয়েছেন, এটি গর্বের মুহূর্ত, কারণ রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথমবার কেউ এই মন্দিরে দর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সাবরিমালা মন্দিরে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা আসেন এবং এটিকে একটি পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে মনে করা হয়।

রাষ্ট্রপতি মুর্মুর সফর থেকে কেরালে বেড়েছে আশা

রাষ্ট্রপতির এই সফর কেবল ধর্মীয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি কেরালের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সাফল্য হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর এই প্রথম সফর রাজ্যের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও সম্মানের প্রতীক। এই সফর কেরাল এবং দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা প্রেরণ করবে, কারণ এটি সাবরিমালা જેવા ধর্মীয় স্থানের দর্শনের সাথে যুক্ত, যা বহু বছর ধরে ভারতীয় সমাজের ধর্মীয় বৈচিত্র্য ও ঐক্যের প্রতীক।

Leave a comment