মোদী-নীতীশের যৌথ সভায় বিহারের উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বান

মোদী-নীতীশের যৌথ সভায় বিহারের উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বান
সর্বশেষ আপডেট: 24-04-2025

পঞ্চায়েতী রাজ দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৪শে এপ্রিল একদিনের সফরে বিহারের মধুবনী জেলার ঝঞ্ঝারপুরে উপস্থিত ছিলেন। এই উপলক্ষে তিনি লোহনা উত্তর গ্রাম পঞ্চায়েতে আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও উপস্থিত ছিলেন।

বিহার: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার গত ২৪শে এপ্রিল, বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েতী রাজ দিবস উপলক্ষে মধুবনী জেলার ঝঞ্ঝারপুরের লোহনা উত্তর গ্রাম পঞ্চায়েতে যৌথভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। এই অনুষ্ঠানটি কেবলমাত্র বিহারের উন্নয়ন যাত্রায় নতুন শক্তি যোগ করে নাই, বরং জাতীয় ঐক্য এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তাও প্রেরণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনের আগেই লোহনা উত্তরে বিশেষ উৎসাহ ছিল। ঐতিহ্যবাহী লোকগান এবং রঙিন স্বাগত দ্বারে সজ্জিত গ্রামটি যেন এক উৎসবের রূপ ধারণ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং পঞ্চায়েতী রাজের আদর্শকে জোরদার করার দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের বার্তা

মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তার বক্তব্যের শুরুতেই জম্মু-কাশ্মীরের পাহলগাঁওয়ে সম্প্রতি সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, "এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আমরা শোকাহত পরিবারগুলির পাশে আছি এবং পুরো দেশকে এখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।" তিনি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, দেশের নিরাপত্তার জন্য তাঁর নেতৃত্ব সিদ্ধান্তমূলক ও অনুপ্রেরণাদায়ক।

আরজেডির উপর নীতীশের তীব্র আক্রমণ

তার বক্তব্যে নীতীশ কুমার বিরোধী দল, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-কে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "২০০৫-এর আগে বিহারের পঞ্চায়েতগুলির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কোনো কাজ হতো না, নারীদের অংশগ্রহণ ছিল না, উন্নয়নের কোনো কথা ছিল না। যখন এনডিএ সরকার গঠিত হয়, তখন ২০০৬ সালে পঞ্চায়েত এবং ২০০৭ সালে পৌরসভাকে শক্তিশালী করার জন্য আইনে সংশোধন করা হয়। নারীদের ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হয়। আরজেডি কি কখনও নারী বা সাধারণ জনগণের জন্য কিছু করেছে?"

পঞ্চায়েতী উন্নয়নের চিত্র

নীতীশ কুমার জানান, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১,৬৩৯টি পঞ্চায়েত সরকার ভবনের নির্মাণ করা হয়েছে এবং বাকি ভবনগুলির কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তিনি আশ্বাস দেন যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সকল পঞ্চায়েত ভবন তৈরি হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিটি খাতে, শিক্ষা হোক, স্বাস্থ্য হোক, সড়ক, বিদ্যুৎ বা পানি—সর্বত্র কাজ করেছি। পঞ্চায়েতী রাজের উদ্দেশ্য হল গ্রামের সরকার, গ্রামের মানুষের সরকার গঠন করা। এটাই লোকতন্ত্রের সच्च्ा ভিত্তি।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে বিহার নতুন মাত্রা পেয়েছে

মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক বিহারের জন্য করা কাজগুলির প্রশংসা করেন। তিনি মখানা বোর্ডের স্থাপনা, পটনা আইআইটি-র সম্প্রসারণ এবং নতুন মেডিকেল কলেজগুলির স্থাপনার কথা উল্লেখ করে বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যদি একসাথে কাজ করে, তাহলে বিহারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

তিনি জানান, সম্প্রতি 'প্রগতি যাত্রা'-র সময় রাজ্য সরকার ৩৮টি জেলায় গিয়ে উন্নয়ন কাজের পর্যালোচনা করেছে। এতে ৪৩০টি নতুন প্রকল্পকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার উপর এখন দ্রুত কাজ শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের বার্তা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, গ্রামের সরকার, আসল সরকার। পঞ্চায়েতগুলি যখন শক্তিশালী হবে, তখনই দেশ শক্তিশালী হবে। তিনি ডিজিটাল ইন্ডিয়া, আত্মনির্ভর ভারত এবং স্বচ্ছ ভারতের মতো অভিযানে পঞ্চায়েতগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলেন এবং গ্রাম প্রধানদের অনুরোধ করেন যাতে তারা গ্রামের প্রতিটি নাগরিককে পরিকল্পনার সুবিধা পৌঁছে দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

এই অনুষ্ঠানটি আরও একবার প্রমাণ করেছে যে যখন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একসাথে কাজ করে, তখন তার প্রভাব নিম্নস্তরেও দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী মোদী ও নীতীশ কুমারের যৌথ উপস্থিতি কেবলমাত্র বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন দিক নির্দেশ করে নাই, বরং রাজ্যের সাধারণ জনগণকে এই আশ্বাসও দিয়েছে যে সরকার তাদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Leave a comment