বিহার নির্বাচন: বিজেপির নতুন কৌশল - প্রবাসী বিহারী ভোটারদের কেন্দ্রীভূত করা

বিহার নির্বাচন: বিজেপির নতুন কৌশল - প্রবাসী বিহারী ভোটারদের কেন্দ্রীভূত করা
সর্বশেষ আপডেট: 25-05-2025

আগামী বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তৈরি হয়েছে। কিন্তু এবার তাদের কৌশল কিছুটা ভিন্ন। ঐতিহ্যগত জনসভা ও সমাবেশের পাশাপাশি, পার্টির নজর এখন সেই কোটি কোটি বিহারী ভোটারদের উপর যারা বিহারের বাইরে থাকলেও তাদের মূল রাজ্যে ভোটদানের অধিকারী।

বিহার রাজনীতি: বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাজ্যের বাইরে বসবাসকারী বিহারীদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য একটি ব্যাপক প্রচার অভিযান শুরু করেছে। 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত' নামক এই অভিযানের উদ্দেশ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী বিহারের মানুষকে পার্টির সাথে যুক্ত করা, যাতে তারা আগামী নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। মার্চ মাসে পার্টি 'বিহার দিবস' পালন করেছে, যা দেশজুড়ে ৬৫টি স্থানে ব্যাপকভাবে পালিত হয়েছে।

এই অনুষ্ঠানগুলিতে বিজেপির শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং প্রবাসী বিহারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। পার্টি দেশজুড়ে ১৫০টি জেলার সনাক্ত করেছে, যেখানে বিপুল সংখ্যক বিহারের মানুষ বসবাস করে। এই জেলাগুলিতে ৭৫টি দল মোতায়েন করা হয়েছে, যাদের কাজ হল বিহারের ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা।

নতুন রাজনৈতিক কৌশল: বাইরের বিহারী, ভেতরের ভোট

বিজেপির এই কৌশলের মূল কারণ হল একটি সত্য যা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রায়ই উপেক্ষা করে থাকেন – প্রায় ২ কোটি বিহারী এখনও রাজ্যের বাইরে বসবাস করেন, কিন্তু তাদের মধ্যে প্রায় ১.৩ কোটি ভোটার এখনও বিহারের ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত। এই লোকেরা বিভিন্ন রাজ্যে মজুরি, চাকরি, ব্যবসা বা পড়াশোনার জন্য বসবাস করেন, কিন্তু তাদের ভোট বিহারের রাজনীতিকে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

পার্টির মতে, এই সংখ্যা কোন সাধারণ সংখ্যা নয়। প্রায় ৬৫% প্রবাসী বিহারী ভোটার এমন যারা সময় সময় তাদের গ্রামে ফিরে আসেন এবং নির্বাচনের সময় বাড়ি গিয়ে ভোট দেওয়া তাদের অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। বিজেপি বিশ্বাস করে যে, যদি এই ভোটাররা সংগঠিত এবং অনুপ্রাণিত হয়, তাহলে তারা অনেক আসনে গেমচেঞ্জার হতে পারে।

৭৫টি দল, ১৫০টি জেলার তথ্য, 'সরল' অ্যাপে নজর

এই অভিযানের জন্য পার্টি দেশজুড়ে ১৫০টি জেলায় ৭৫টি দল মোতায়েন করেছে, যারা প্রবাসী বিহারী সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে। এই তথ্য পার্টির অভ্যন্তরীণ অ্যাপ 'সরল'-এ আপলোড করা হচ্ছে। সরল অ্যাপ ব্যবহার করে বিজেপি তাদের মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট এবং বুথ লেভেল পরিকল্পনার কাজ করে।

এই দলগুলির কাজ শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ করা নয়, বরং মানুষের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে তাদের বোঝানোও যে তাদের ভোট বিহারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

ভোটার ও সমর্থক শ্রেণী: দ্বৈত কৌশল

এই সম্পূর্ণ অভিযানটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে 'ভোটার' এবং 'সমর্থক'। যারা বিহারে নিবন্ধিত ভোটার, তাদের সরাসরি যোগাযোগ করে বিহারে ফিরে ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। অন্যদিকে যারা বিহারের সাথে সম্পর্ক রাখেন, কিন্তু ভোটার নন, তাদের কাছে অনুরোধ করা হচ্ছে যে তারা তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনকে বিজেপির পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করুক।

হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, পাঞ্জাব এবং তেলেঙ্গানা-র মতো রাজ্যে বিপুল সংখ্যক বিহারী প্রবাসী বাস করেন। শুধুমাত্র হরিয়ানাতেই প্রায় ৫ লক্ষ বিহারী রয়েছে। সেখানে বিজেপির স্থানীয় ইউনিট এই অভিযানকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পরিচালনা করছে। হরিয়ানার ১৪টি জেলাকে এই মিশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে 'বিহারী সম্মেলন'-এর মতো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপন করে পার্টি মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করছে।

কোভিড কালের তথ্যও হয়েছে অস্ত্র

বিজেপি এই অভিযানে কোভিড মহামারীর সময় প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যও ব্যবহার করছে। বিহার সরকার তখন বাইরে আটকে থাকা শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য তথ্য চেয়েছিল। সেই সময় প্রায় ১৩ লক্ষ শ্রমিক আবেদন করেছিল, যার ফলে এখন তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সহজ হয়েছে।

মার্চ মাসে বিজেপি বিহার দিবস দেশের ৬৫টি স্থানে পালন করেছে। এই অনুষ্ঠানগুলিতে শুধুমাত্র বিহারী প্রবাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, বরং পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন এবং ব্যক্তিগত আলাপচারিতা করে এই আবেগগত সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এখন বড় প্রশ্ন হল, এই কৌশল কি শুধু প্রচারণাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি সত্যিই ভোটে রূপান্তরিত হবে? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ১.৩ কোটি প্রবাসী ভোটারের মাত্র ২০%ও সংগঠিত হয়ে বিহারে ভোট দিতে যায়, তাহলে তা প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি আসনের ফলাফল পাল্টে দিতে পারে। বিজেপি এই আশা করছে।

Leave a comment