বিহার নির্বাচন ২০২৫: ৩৩ আসনে প্রভাব বিস্তারে চিরাগ পাশওয়ান

বিহার নির্বাচন ২০২৫: ৩৩ আসনে প্রভাব বিস্তারে চিরাগ পাশওয়ান
সর্বশেষ আপডেট: 18-06-2025

বিহারে চিরাগ পাশওয়ান ৩৩টি আসনে প্রভাবের জোরে কিংমেকার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগেরবার এই আসনগুলিতে জেডিইউ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলেন। এখন এনডিএ এবং মহাজোট উভয়ের উপরই চাপ রয়েছে।

Bihar Election 2025: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি ত্বরান্বিত হয়েছে। সরকারী জাতীয় জনতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) নির্বাচনী মোডে চলে এসেছে। নীতীশ কুমার সরকার কমিশন এবং বোর্ডে নিযুক্তি দিয়ে সম্ভাব্য বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে, লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-এর প্রধান এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাশওয়ান ২৪৩টি আসনে নির্বাচন লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর দাবি বিশেষ করে ৭০টি আসনে, যা এনডিএ-র ভিতরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

৩৩টি আসনে চিরাগের বিশেষ নজর

চিরাগ পাশওয়ানের পুরো কৌশল ৩৩টি বিধানসভা আসনে কেন্দ্রীভূত, যেখানে ২০২০ সালের নির্বাচনে তাঁর দল সরাসরি জনতা দল (ইউনাইটেড)-কে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। এই আসনগুলি তাঁর বার্গেনিং পাওয়ারের প্রকৃত শক্তি। আগেরবার এলজেপি (এখন এলজেপি-রামবিলাস) ১৩৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল, কিন্তু মাত্র একটি আসনে জয়লাভ করেছিল। তবুও, ৩৩টি আসনে জেডিইউ পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিল এবং চিরাগের দল এই আসনগুলিতে নির্ণায়ক ভোট পেয়েছিল।

কিভাবে জেডিইউ-কে ক্ষতি হয়েছিল?

২০২০ সালের নির্বাচনে যে আসনগুলিতে এলজেপি প্রার্থী দিয়েছিল, সেই আসনগুলির মধ্যে ২৮টি আসনে জেডিইউ যে ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি ভোট এলজেপির প্রার্থীরা পেয়েছিল। এমনকি পাঁচটি আসনে এলজেপির প্রার্থীরা জেডিইউ-কে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে দিয়েছিল। এই আসনগুলিই এখন চিরাগ পাশওয়ানের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

উদাহরণ: দিনারা এবং ভাগলপুর আসনের সমীকরণ

দিনারা আসন থেকে আরজেডির বিজয় মণ্ডল ৮২২৮ ভোটে জিতেছিলেন। এলজেপির প্রার্থী রাজেন্দ্র সিং ৫১,৩১৩ ভোট পেয়েছিলেন, যেখানে জেডিইউ-র জয় কুমার সিং মাত্র ২৭,২৫২ ভোট পেয়েছিলেন।

এইভাবেই ভাগলপুর আসন থেকে কংগ্রেসের অজিত শর্মা ১১১৩ ভোটে জয়লাভ করেছিলেন, যেখানে বিজেপির রোহিত পাণ্ডে ৬৪,৩৮৯ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। এলজেপির প্রার্থী রাজেশ বর্মাও ২০,৫২৩ ভোট পেয়েছিলেন, যা জয়-পরাজয়ের পার্থক্য নির্ধারণের জন্য যথেষ্ট ছিল।

চিরাগের ইমেজ পরিবর্তনের চেষ্টা

চিরাগ পাশওয়ানের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এখন সেই ‘ভোট কাটোয়া’ ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসা, যা গত নির্বাচনের পর তাঁর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর কৌশল হল তাঁর পিতা রামবিলাস পাশওয়ানের মতো কিংমেকারের ভূমিকা পালন করা। ৩৩টি আসনে শক্তিশালী আধিপত্য এবং প্রভাবের পরিসংখ্যান তাঁর এই দাবিকে বল প্রদান করে।

এনডিএ-ও চিন্তিত

এই ৩৩টি আসনে চিরাগের শক্তিকে এনডিএ ভালোভাবেই বুঝতে পারে। এটাই কারণ বিজেপি এবং জেডিইউ-র মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে কোন চূড়ান্ত সমঝোতা হচ্ছে না। জেডিইউ এবং বিজেপি উভয়ই ১০২-১০২ আসনে নির্বাচন লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যখন বাকি ৩৯টি আসনের মধ্যে চিরাগ পাশওয়ান, জিতেন্দ্র রাম মঞ্ঝি এবং উপেন্দ্র কুশওয়াহা যেসব সহযোগী দল আছে তাদেরকে সামঞ্জস্য করতে হবে।

আসন বণ্টন নিয়ে চিরাগের পরিকল্পনা কি?

চিরাগ পাশওয়ান ৭০টি আসনে দাবি করেছেন, কিন্তু তাঁর প্রধান লক্ষ্য প্রায় ৪০টি আসনে দাবি করা। যদি আলোচনায় ৩৫টি আসনে সমঝোতা হয়, তাহলে চিরাগ বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। অর্থাৎ কিছু আসনে এনডিএ-তে থাকলেও এলজেপি (রামবিলাস) নিজস্ব প্রার্থী দাঁড় করাতে পারে।

এবার আরজেডি এবং মহাজোটের মুখোমুখি

২০২০ সালে জেডিইউ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করা চিরাগ যদি এবার ‘একলা চলো’ কৌশল পুনরাবৃত্তি করেন, তাহলে তাঁর সামনে মহাজোট থাকবে। অর্থাৎ আরজেডি, কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলের সাথে লড়াই হবে। এই ক্ষেত্রে এই ৩৩টি আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যার ফলে ফলাফল অনেকটাই প্রভাবিত হতে পারে।

Leave a comment