বিহার নির্বাচন ২০২৫: বসপার বৃহৎ বৈঠক ও ক্ষমতা দখলের দাবী

বিহার নির্বাচন ২০২৫: বসপার বৃহৎ বৈঠক ও ক্ষমতা দখলের দাবী
সর্বশেষ আপডেট: 13-06-2025

বসপার বৃহৎ বৈঠক, বিহার নির্বাচন ২০২৫-এর প্রস্তুতি তীব্রতর

বিহার নির্বাচন ২০২৫: বিহারের রাজনীতিতে বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা) তাদের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করার প্রস্তুতি শুরু করেছে। মধুবনী জেলার বাল্মীকিনগর বিধানসভা ক্ষেত্রের ডিহি চৌকে শুক্রবার দলের বিধানসভা স্তরীয় কর্মী সমীক্ষা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সংগঠনকে বুথ স্তরে শক্তিশালী করার এবং কর্মীদের নির্বাচনের জন্য সক্রিয় করার উপর জোর দেওয়া হয়। এই বৈঠকে দলের জাতীয় ও প্রাদেশিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন, যারা জনগণের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছেন এবং ভবিষ্যতের নীতির এক ঝলক দেখিয়েছেন।

বসপা সরকার গঠনের দাবি

এই বৈঠকের প্রধান অতিথি, রাজ্যসভা সাংসদ এবং বসপার জাতীয় সমন্বয়ক ই. রামজি গৌতম বলেন, বসপা এখন ক্ষমতার দিকে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি দাবি করেন, ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বহুজন সমাজ পার্টি ছাড়া সরকার গঠন সম্ভব নয়। গৌতম তার বক্তব্যে বলেন, "বিহারে আমাদের সরকার গঠিত হলে সর্বপ্রথম সমস্ত ছাত্রছাত্রীর জন্য শিক্ষা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হবে। পাশাপাশি, সরকারি জমি বহুজন সমাজের মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।"

বোন মায়াবতীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার

রামজি গৌতম আরও বলেন, বসপার নীতির কেন্দ্রবিন্দু সর্বদা সমাজের বঞ্চিত ও শোষিত শ্রেণী। তিনি বলেন, "বোন মায়াবতী যেমন উত্তরপ্রদেশে দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন, তেমনি এখন বিহারেও তা দুহরানো হবে। বহুজন সমাজের অংশগ্রহণ কেবল ভোট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না, এখন নেতৃত্বের ভূমিকাতেও বহুজন সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।"

অনিল কুমারের চিনি কল ও বেকারত্বের সমস্যা তুলে ধরা

বৈঠকে বক্তব্য রাখেন বসপার কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত অনিল কুমার। তিনি বিহারের বর্তমান ও পূর্ববর্তী সরকারের উপর তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, "বাল্মীকিনগরের চিনি কলগুলি একসময় এই অঞ্চলের পরিচয় ছিল, কিন্তু লালু-রাবড়ী এবং নীতীশ-মোদীর ডবল ইঞ্জিন সরকারগুলি এগুলিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আজ এখানে বেকারত্ব চরমে রয়েছে এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য অন্যত্র পাড়ি জমানোর প্রয়োজন হচ্ছে।"

তিনি বলেন, বোন মায়াবতীর নেতৃত্বেই এমন নেতৃত্ব পাওয়া যাবে যা বিহারের জমি সংক্রান্ত সমস্যাগুলি বুঝতে পারে এবং তাদের সমাধানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি কর্মীদের আহ্বান জানান যে তারা বুথ স্তরে সংগঠনকে শক্তিশালী করুক এবং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করুক।

বসপার রাজনৈতিক কৌশল: জাতিগত সমীকরণের উপর ফোকাস

বসপার এই বৈঠক থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে দলটি এখন বিহারেও উত্তরপ্রদেশের মতো জাতিগত সমীকরণ এবং সামাজিক ন্যায়ের এজেন্ডা নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছে। বিশেষ করে দলিত, পিছিয়ে পড়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে একত্রিত করে একটি শক্তিশালী ভোটার ব্যাংক গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারি জমি বিতরণ এবং বিনামূল্যে শিক্ষা ইত্যাদি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে এটি বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে বসপা ক্ষমতায় এলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়কে অগ্রাধিকার দেবে।

জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ

বৈঠকে নেতারা কেবলমাত্র সাংগঠনিক নির্দেশনা দেননি, বরং জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগও স্থাপন করেছেন। অনিল কুমার বলেন, "এই সময় সিদ্ধান্তমূলক। যদি বহুজন সমাজ এখনও বিভক্ত থাকে, তাহলে আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া থেকে কেউই বাঁচাতে পারবে না। এখন আমাদের আমাদের ভবিষ্যৎ এবং অধিকারের লড়াই সুদৃঢ়ভাবে লড়াই করতে হবে।"

নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি, কর্মীদের উত্সাহ

এই বৈঠকে বসপার অনেক প্রধান নেতা উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে কনহাইয়া কুমার, মিথিলেশ কুমার, মো. হারুন, ধীরজ চৌহান, শম্ভু রাম, রাম নিবাস রায়, ললন রাম এবং পিন্টু রাম প্রমুখ। জেলা সভাপতি আমিলালা রবিদাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বহু সংখ্যক দলীয় কর্মী ও স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন, যা দলে নতুন উত্সাহের সঞ্চার করেছে।

Leave a comment