বিহার নির্বাচন: চিরাগ কি প্রশান্ত কিশোরের জন্য বাধা হবেন?

বিহার নির্বাচন: চিরাগ কি প্রশান্ত কিশোরের জন্য বাধা হবেন?
সর্বশেষ আপডেট: 2 দিন আগে

বিহারের রাজনীতিতে চিরাগ পাশওয়ান এবং প্রশান্ত কিশোর উভয়েই তৃতীয় বিকল্পের সন্ধানে রয়েছেন। কিন্তু একই ধরণের চিন্তাধারা এবং ভোট ব্যাংকের কারণে তাদের পথ পরস্পরের সাথে সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে। কে হবেন আসল বিকল্প, এটাই বড় প্রশ্ন।

Bihar Assembly Election 2025: বিহারের রাজনীতিতে উত্তেজনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যেখানে একদিকে এনডিএ এবং মহাজোট নির্বাচনী কৌশলে ব্যস্ত, অন্যদিকে দুই নতুন মুখ ক্ষমতার ধারা বদলানোর চেষ্টা করছে। এই দুই মুখ হলেন প্রশান্ত কিশোর এবং চিরাগ পাশওয়ান। একদিকে জনসুরাজের মাধ্যমে পিকে তৃতীয় বিকল্পের কথা বলছেন, অন্যদিকে চিরাগ পাশওয়ানও সমগ্র রাজ্যের ২৪৩টি আসনে নির্বাচন লড়ার ঘোষণা করেছেন। এতে প্রশ্ন উঠছে, কি চিরাগ বিহারের রাজনীতিতে পিকের জন্য বাধা হয়ে উঠতে পারেন?

বিহার প্রাইডের রাজনীতিতে মিল

প্রশান্ত কিশোর এবং চিরাগ পাশওয়ান উভয়ের রাজনৈতিক কৌশল ‘বিহার প্রথম’ ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। পিকে বিহারের ঐতিহাসিক গৌরব পুনঃস্থাপনের কথা বলেন, অন্যদিকে চিরাগের ‘বিহারী ফার্স্ট, বিহার ফার্স্ট’ স্লোগান দীর্ঘদিন ধরে তাঁর রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। উভয় নেতারই প্রাথমিক লক্ষ্য হল বিহারকে উন্নত রাজ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। এই অবস্থায় উভয়ের মতাদর্শের মিল তাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।

তরুণ ভোটারদের উপর উভয়ের নজর

বিহারের রাজনীতিতে তরুণ ভোটাররা একটি সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা পালন করে। পিকে তরুণদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং উন্নয়নের বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে একত্রিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি পিসিএস পেপার ফাঁসের মতো ঘটনায় ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে এই শ্রেণীর মধ্যে নিজের প্রভাব বাড়িয়েছেন। অন্যদিকে চিরাগ পাশওয়ানও তরুণদের কাছে জনপ্রিয় এবং দীর্ঘদিন ধরে এই শ্রেণীর মধ্যে নিজের পরিচয় তৈরি করেছেন। যদি চিরাগ তরুণ ভোট ব্যাংককে নিজের দিকে টেনে আনতে সক্ষম হন, তাহলে জনসুরাজের আত্মপ্রকাশ দুর্বল হতে পারে।

দলিত কার্ডে উভয়ের দাবি

বিহারে দলিত রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চিরাগ পাশওয়ানের পরিবার এই শ্রেণীর একটি শক্তিশালী মুখ। এনডিএ-তে যোগদানের পরও চিরাগের পরিচয় স্বাধীন দলিত নেতা হিসেবেই থেকে গেছে। অন্যদিকে পিকেও এই শ্রেণীতে প্রবেশ করার জন্য তাঁর সংগঠনে একজন দলিত নেতাকে রাজ্য সভাপতি করেছেন। চিরাগ এখন দলিত ভোট ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। যদি তিনি এই শ্রেণীর মধ্যে আবারও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন, তাহলে পিকের দল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কর্মসংস্থান এবং জনসংখ্যা স্থানান্তরের মতো বিষয়ে সংঘর্ষ

প্রশান্ত কিশোর জনসুরাজ অভিযানের সময় বেকারত্ব এবং জনসংখ্যা স্থানান্তরকে প্রধান নির্বাচনী বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাঁর দাবি, বিহারেই ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনের চাকরি সৃষ্টি করা হবে যাতে তরুণদের বাইরে যেতে না হয়। অন্যদিকে চিরাগ পাশওয়ানও এই সমস্যাকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে আসছেন। তাঁর মতে, বাইরে গেলেও মানুষদের ফিরিয়ে আনতে হবে এবং রাজ্যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। উভয় নেতার চিন্তাধারা একই রকম, কিন্তু এটি পরস্পরের কৌশলকে দুর্বল করে তুলতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি

সি ভোটারের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় প্রশান্ত কিশোর এবং চিরাগ পাশওয়ান উভয়কেই মুখ্যমন্ত্রী পদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী তেজস্বী যাদব এবং নীতীশ কুমারের পর পিকে তৃতীয় এবং চিরাগ চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। এই পরিস্থিতি স্পষ্ট করে যে উভয়ের মধ্যে সরাসরি প্রতিযোগিতা রয়েছে এবং একজনের উত্থান অন্যজনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

২৪৩টি আসনে নির্বাচন লড়ার ঘোষণা

চিরাগ পাশওয়ান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করে বলেছেন যে তাঁর দল রাজ্যের সকল ২৪৩টি আসনে প্রার্থী দাঁড় করাবেন। এই বক্তব্য সরাসরি জনসুরাজ এবং প্রশান্ত কিশোরের কৌশলগত গণিতকে প্রভাবিত করতে পারে। উভয়ের ভোট ব্যাংক একই রকম, তাই যদি উভয়ই স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন লড়ে, তাহলে ভোট বিভক্ত হওয়া নিশ্চিত। এতে কেবলমাত্র এই দুজনেরই ক্ষতি হবে না, এনডিএ এবং মহাজোটও পরোক্ষভাবে উপকৃত হতে পারে।

Leave a comment