কোটদ্বারস্থিত উচ্চ জেলা ও সেশন আদালত (এডিজে কোর্ট) আজ (৩০ মে) বহুচর্চিত অঙ্কিতা ভান্ডারী হত্যা মামলায় বড়ো রায় দিয়েছে। আদালত প্রধান অভিযুক্ত পুলকিত আর্য এবং তার দুই সহযোগী সৌরভ ভাস্কর ও অঙ্কিত গুপ্তাকে হত্যা, প্রমাণ লোপাট এবং নারীর সতীত্বের উপর আঘাত করার মতো গুরুতর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
অঙ্কিতা হত্যা মামলা: উত্তরাখণ্ড কে কাঁপিয়ে তোলা অঙ্কিতা ভান্ডারী হত্যা মামলায় আজ কোটদ্বারস্থিত উচ্চ জেলা ও সেশন আদালত (এডিজে কোর্ট) ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। আদালত বহুচর্চিত এই মামলায় অভিযুক্ত পুলকিত আর্য, সৌরভ ভাস্কর এবং অঙ্কিত গুপ্তাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০২ (হত্যা), ২০০১ (প্রমাণ লোপাট), ৩৫৪ (ছেনছাড়) এবং অনৈতিক দেহব্যবসায় আইনের অধীনে দোষী সাব্যস্ত করেছে। চূড়ান্ত শাস্তির ঘোষণা কিছুক্ষণের মধ্যেই হবে, কিন্তু এই রায়ে ন্যায় ব্যবস্থায় সাধারণ জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হয়েছে।
কী ছিল মামলা?
২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে বনন্তরা রিসোর্টে রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করার সময় অঙ্কিতা ভান্ডারীকে হত্যা করা হয় এবং তার মৃতদেহ চিলা শক্তি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এই জঘন্য ঘটনার এক সপ্তাহ পর, ২৪ সেপ্টেম্বর তার মৃতদেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়, যা সমগ্র রাজ্যে ক্ষোভের ঝড় তুলে ধরে। হত্যার পিছনে কারণ ছিল অত্যন্ত লজ্জাজনক - পুলকিত এবং তার সঙ্গীরা অঙ্কিতার উপর অনৈতিক কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করছিল। যখন সে এর বিরোধিতা করে, তখন তিনজনে মিলে তাকে নদীতে ঠেলে দিয়ে হত্যা করে।
তদন্ত এবং আদালতের কার্যক্রম
২০২৫ সালের ১৯ মে অভিযোগপক্ষের পক্ষ থেকে বিশেষ জনসাধারণের অভিযোগকারী অবনীশ নেগী প্রতিরক্ষার বক্তব্যের জবাব দিয়ে শুনানি শেষ করেছিলেন। এর পর আদালত ৩০ মে রায় দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করে। মামলার শুনানি ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারী শুরু হয়েছিল এবং অভিযোগপক্ষের পক্ষ থেকে প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই মামলায় ৪৭ জন সাক্ষীকে আদালতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যখন SIT এই মামলায় ৯৭ জন সাক্ষী তৈরি করেছিল। তদন্তের পর ৫০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছিল।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত ক্রম
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২: পুলকিত আর্য অঙ্কিতার নিখোঁজের অভিযোগ রাজস্ব পুলিশ এলাকায় দায়ের করেন।
- ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২: জনসাধারণের চাপের পর মামলা লক্ষ্মণঝুলা থানায় স্থানান্তরিত হয়।
- ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২: পুলকিত, সৌরভ এবং অঙ্কিতকে গ্রেপ্তার করে ন্যায়িক হেফাজতে পাঠানো হয়।
- ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২: অঙ্কিতার মৃতদেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হয় এবং একই দিন এम्स ঋষিকেশে ময়নাতদন্ত করা হয়।
- ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২: পুলিশ অপরাধের স্থান পুনর্নির্মাণ করে।
- ১৬ ডিসেম্বর ২০২২: চার্জশিট দাখিল করা হয়, যাতে অনৈতিক দেহব্যবসায়ের ধারাগুলিও যুক্ত করা হয়।
- ৩০ মে ২০২৫: আদালত তিন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে।
পরিজনদের প্রতিক্রিয়া
আদালতের এই রায়ের পর সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রায়ের প্রশংসা করা হচ্ছে এবং মানুষ অঙ্কিতার জন্য ন্যায় পাওয়াকে ‘ন্যায়ের জয়’ বলে অভিহিত করছে। উত্তরাখণ্ড রাজ্যে এই রায় নারী সম্মান এবং ন্যায় ব্যবস্থার স্বচ্ছতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। রায়ের পর অঙ্কিতার মা-বাবার চোখে জল ছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে ন্যায়ের এক ঝলক দেখা গেছে। তাদের কথা ছিল, “আমরা আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে পারব না, কিন্তু আদালতের এই রায় দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে আইন এখনও জীবন্ত।”