ভারতের শেয়ার বাজার: বিশ্বে দ্রুততম বর্ধনশীল

ভারতের শেয়ার বাজার: বিশ্বে দ্রুততম বর্ধনশীল
সর্বশেষ আপডেট: 11-06-2025

ভারতীয় শেয়ার বাজার বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল স্টক মার্কেট হিসেবে এক ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন-এর মতো বৃহৎ বাজারগুলিকে পিছনে ফেলে ভারত এখন শীর্ষস্থানে পৌঁছেছে।

শেয়ার বাজার: মার্চ ২০২৫-এর পর থেকে ভারতীয় শেয়ার বাজার যে গতিতে এগিয়েছে, তা শুধুমাত্র দেশীয় বিনিয়োগকারীদেরই নয়, বিশ্বব্যাপী ভারতকে স্টক মার্কেটের নতুন 'সরদার' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো দৈত্যাকার বাজারগুলিকে ছাড়িয়ে ভারতীয় শেয়ার বাজার ১ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি মার্কেট ক্যাপিটাল বৃদ্ধি করেছে, যা অভূতপূর্ব এক সাফল্য। এখন ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম শেয়ার বাজারে পরিণত হয়েছে।

মার্চ থেকে জুন ২০২৫-এর চমৎকার পারফরম্যান্স

মার্চ ২০২৫-এর শুরু থেকে এ পর্যন্ত পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভারতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলির মোট মার্কেট ক্যাপ ৫.৩৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই পরিসংখ্যান মার্চের তুলনায় ২০% এর বেশি বৃদ্ধি দেখায়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো বৃহৎ বাজারগুলির বৃদ্ধি অত্যন্ত নগণ্য ছিল।

যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২.৪% বৃদ্ধি হয়েছে, সেখানে চীন মাত্র ২.৭% বৃদ্ধির সাথে স্থির থেকেছে। এর বিপরীতে, ভারতের অর্থনীতি ও কর্পোরেট সেক্টর মিলে বিনিয়োগকারীদের এতটা আস্থা দিয়েছে যে বাজারে অসাধারণ লাফ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং-এ ভারতের দাপট

এই সময়কালে ভারত শুধুমাত্র এশীয় বাজারগুলিকেই নয়, বহু ইউরোপীয় অর্থনীতিকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। ভারতের পর সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করেছে জার্মানি, যেখানে কোম্পানিগুলির মার্কেট ক্যাপ ১৪% বৃদ্ধি পেয়েছে।

শীর্ষ ১০ বিশ্ববাজারে মার্কেট ক্যাপ বৃদ্ধি (মার্চ-জুন ২০২৫)

  1. ভারত     - ২১.২%
  2. জার্মানি - ১৪%
  3. কানাডা - ১১%
  4. হংকং - ৯.৩%
  5. জাপান - ৮.২%
  6. যুক্তরাজ্য - ৮%
  7. ফ্রান্স - ৩.৯%
  8. তাইওয়ান - ৩.২%
  9. চীন - ২.৭%
  10. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - ২.৪%

সেনসেক্স-নিফটির উত্থান ও বিনিয়োগকারীদের লাভ

ভারতীয় বেঞ্চমার্ক ইন্ডেক্স যেমন সেনসেক্স ও নিফটি মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত যথাক্রমে ১২.৫% ও ১৩.৫% বৃদ্ধি দেখিয়েছে। কিন্তু আসল লাভ হয়েছে মিডক্যাপ ও স্মলক্যাপ সেগমেন্টে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা ২০.৭% ও ২৬% পর্যন্ত রিটার্ন পেয়েছে। এই থেকে আরও স্পষ্ট হয় যে শুধুমাত্র বৃহৎ কোম্পানিগুলিতে নয়, ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলিতেও বিনিয়োগকারীরা আস্থা দেখিয়েছেন, যার ফলে বাজারের ভিত্তি আরও প্রশস্ত হয়েছে।

এই বৃদ্ধির কারণগুলি কি?

  • রাজনৈতিক স্থিরতা: সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনে স্পষ্ট জনমত ও নীতিগত স্থিরতা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছে।
  • উন্নয়নমূলক বাজেট: কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ঘোষিত অগ্রগতিশীল বাজেট অবকাঠামো ও উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগকে প্রসারিত করেছে।
  • নিয়ন্ত্রক সংস্কার: সেবি কর্তৃক তরলতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
  • খুচরা বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ: SIP এবং ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের সংখ্যায় প্রচুর বৃদ্ধি হয়েছে।

যদিও বাজারের এই অসাধারণ বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের জন্য আনন্দের সুযোগ নিয়ে এসেছে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে মূল্যায়ন এখন ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। বহু কোম্পানির শেয়ার তাদের P/E অনুপাতের হিসাবে অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে। তাই নতুন প্রবেশকারী বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Leave a comment