ভারতের শেয়ার বাজারে অভূতপূর্ব অগ্রগতি: বিশ্বের পঞ্চম স্থানে

ভারতের শেয়ার বাজারে অভূতপূর্ব অগ্রগতি: বিশ্বের পঞ্চম স্থানে
সর্বশেষ আপডেট: 12-06-2025

ভারতের শেয়ার বাজার সম্প্রতি ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং বিশ্বব্যাপী তার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান স্থাপন করেছে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের মতে, ভারতের মার্কেট ক্যাপিটেলাইজেশনে ২১ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

নয়াদিল্লি: ভারতের ইকুইটি বাজার বিশ্বব্যাপী তার শক্তির চমৎকার প্রদর্শন করেছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাস থেকে ভারতীয় শেয়ার বাজারের মার্কেট ক্যাপিটেলাইজেশনে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অভূতপূর্ব বৃদ্ধি হয়েছে। এই অসাধারণ উত্থানের ফলে ভারত এখন আমেরিকা, চীন, জাপান এবং হংকংয়ের পরে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ইকুইটি বাজারে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৃদ্ধি ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি, বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং ঘরোয়া বাজারের ইতিবাচক নীতির ফল।

ভারতের বাজার মূলধনের বৃদ্ধি – এক নজরে

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখা গেছে যে, ভারতের মার্কেট ক্যাপিটেলাইজেশনে ২১ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে, যা শীর্ষ ১০ ইকুইটি বাজারের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই সময়কালে প্রধান বেঞ্চমার্ক সেনসেক্স এবং নিফটিতে যথাক্রমে ১২.৫ শতাংশ এবং ১৩.৫ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাস থেকে ভারতীয় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলি ১ ট্রিলিয়ন ডলার মার্কেট ক্যাপ যোগ করে তাদের অর্থনৈতিক প্রভাব আরও শক্তিশালী করেছে।

এই অগ্রগতি শুধুমাত্র সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের বর্ধনশীল আগ্রহকেও প্রতিফলিত করে। এই চমৎকার সাফল্যের পিছনে ঘরোয়া বিনিয়োগকারীদের আস্থা, সরকারের নীতিগত উদ্যোগ এবং অর্থনৈতিক সংস্কার রয়েছে।

শক্তিশালী ঘরোয়া বিনিয়োগকারী ভিত্তির অবদান

বাজারে এই শক্তিশালী অবস্থার অন্যতম বড় কারণ হল ঘরোয়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (DIIs) ক্রমাগত ক্রয়। ২০২৪ সালের জুন মাসে ঘরোয়া বিনিয়োগকারীরা মোট ২৫,৫১০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন, যার ফলে বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (FIIs) বিক্রয় চাপ অনেকাংশে কমে গেছে।

ঘরোয়া বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাজারকে স্থায়িত্ব এবং শক্তি প্রদান করে, বিশেষ করে যখন বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা বিরাজমান থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘরোয়া বিনিয়োগকারীদের এই আস্থা ভারতীয় বাজারের স্থায়িত্ব এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের দিকে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত।

বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতির প্রভাব

যদিও বিশ্বব্যাপী আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা, বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং তহবিল প্রবাহের উত্থান-পতন অব্যাহত রয়েছে, তবুও ভারতের শেয়ার বাজার এই পরিস্থিতিতেও দৃঢ়ভাবে টিকে আছে।

আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির ফলে বিশ্ববাজারে আশার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে, যার সুবিধা ভারতীয় বাজারও পেয়েছে। এছাড়াও, ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টার্স (FPI) এর ভারতে বিনিয়োগের বর্ধমান প্রবাহ বাজারের উত্থানে অবদান রেখেছে।

নিফটি এবং সেনসেক্সের তথ্যে উন্নতি

২০২৫ সালের মার্চ মাসের পর থেকে সেনসেক্স এবং নিফটি উভয়ই শক্তিশালী উত্থান দেখিয়েছে। সেনসেক্স ৮২,৫১৫ স্তরে পৌঁছেছে, যখন নিফটি ২৫,১৪১ পয়েন্টের উর্ধ্বে গেছে। উভয় সূচকই তাদের পূর্ববর্তী উচ্চতা অতিক্রম করে বিনিয়োগকারীদের ভালো রিটার্ন দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই র‍্যালি শুধুমাত্র বিনিয়োগকারীদের বর্ধনশীল প্রত্যাশাকেই প্রতিফলিত করে না, বরং এটি ভারতীয় অর্থনীতির মৌলিক শক্তিকেও প্রতিফলিত করে।

সরকারের নীতিগত ভূমিকা এবং অর্থনৈতিক সংস্কার

ভারত সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা, বর্ধনশীল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং মেক ইন ইন্ডিয়া যেসব অভিযান, বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

এছাড়াও, সরকারের আর্থিক স্থায়িত্ব বজায় রাখা এবং বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বাজারের দিক ইতিবাচক রেখেছে। এটি বিনিয়োগকারীদের ভারতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য আকৃষ্ট করেছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে তাহলে ভারতের ইকুইটি বাজার আগামী কয়েক বছরে আরও বেশি প্রসারিত হবে। অনুমান করা হচ্ছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের মার্কেট ক্যাপিটেলাইজেশন ১০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

তবে, বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু ঝুঁকিও রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুদের হারের উত্থান-পতন এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অস্থির প্রবাহ বাজারের গতি প্রভাবিত করতে পারে। তাই ঘরোয়া বিনিয়োগকারী এবং সরকারের জন্য সতর্কতা এবং ক্রমাগত সংস্কার অপরিহার্য।

```

Leave a comment