ভারত ও আমেরিকার মধ্যে নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তির দিকে আলোচনা ত্বরান্বিত হয়েছে, যাকে ‘আরলি ট্রেন্স’ অর্থাৎ চুক্তির প্রাথমিক পর্যায় বলা হচ্ছে।
আরলি ট্রেন্স: ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দ্রুত আলোচনা চলছে। এই চুক্তির নাম ‘আরলি ট্রেন্স’ রাখা হয়েছে এবং সম্ভাবনা রয়েছে যে ৯ জুলাইয়ের আগে এটি চূড়ান্ত রূপ পাবে। এই চুক্তি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যকে আরও শক্তিশালী করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। যদি এটি সফল হয়, তবে এতে ভারতীয় পণ্যের আমেরিকান বাজারে প্রবেশাধিকার এবং প্রতিযোগিতা উভয়ই উন্নত হবে।
কী আরলি ট্রেন্স?
আরলি ট্রেন্স চুক্তি কোনও ব্যাপক বাণিজ্য চুক্তির প্রাথমিক এবং সীমিত সংস্করণ, যাতে কিছু নির্দিষ্ট পণ্য এবং ক্ষেত্রের উপর ধ্যান দেওয়া হয়। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে চলমান বর্তমান আলোচনাও এই দিকেই। এই প্রাথমিক চুক্তির আওতায় উভয় দেশ সীমিত সংখ্যক পণ্যের উপর শুল্ক সুবিধা, বাণিজ্য সুগমতা এবং প্রযুক্তিগত বাধা দূরীকরণের মতো পদক্ষেপে সম্মত হতে পারে।
৯ জুলাইয়ের সময়সীমা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
৯ জুলাইয়ের দিন আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু বাণিজ্যিক শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাবনা রয়েছে। এই তারিখ গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভারত চায় যে এই তারিখের আগেই চুক্তির উপর লিখিত সম্মতি হয়ে যাক, যাতে স্পষ্ট হয় যে উভয় দেশ পারস্পরিক লাভের भावना নিয়ে এই সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, শুধুমাত্র একতরফা ঘোষণার মাধ্যমে নয়।
ভারতের এই অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ কারণ অতীতে আমেরিকার পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব সম্মতি ছাড়াই বাণিজ্যিক ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলে বিভ্রান্তির অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই ভারত এখন লিখিত এবং ব্যবস্থাপিত রূপে সম্মতি চায়, যেমনটা ব্রিটেনের সাথে আমেরিকা করেছিল।
কোন পণ্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে?
আমেরিকা চায় ভারত কিছু আমেরিকান কৃষি পণ্য এবং গাড়ির উপর আমদানি শুল্কে ছাড় দিক। এই পণ্যগুলির কিছু আমেরিকার জন্য রপ্তানির একটি বড় অংশ গঠন করে। অন্যদিকে, ভারত চায় আমেরিকা ভারতীয় কাপড়, জুতা, গাড়ির পার্টস এবং অন্যান্য উৎপাদিত পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করে আনুক। এতে ভারতীয় পণ্য আমেরিকান বাজারে সস্তা হবে এবং তাদের বিক্রি বাড়বে।
বর্তমানে আমেরিকায় এই ভারতীয় পণ্যগুলির উপর মোট মিলিয়ে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক লাগতে পারে, যাতে আমেরিকার ১০ শতাংশ এবং ভারতের রপ্তানি শুল্ক অন্তর্ভুক্ত। তবুও ভারতের পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক রয়েছে। যদি শুল্ক আরও কমে যায় তবে এই প্রতিযোগিতা আরও ভালো হতে পারে।
বাণিজ্যিক প্রযুক্তিগত বাধাও দূর হবে
ভারত-আমেরিকা আলোচনায় শুধুমাত্র শুল্ক কমানোই নয়, বরং বাণিজ্যিক প্রক্রিয়াগুলিকে সহজ করার উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে খাদ্য পণ্য এবং উদ্ভিদ সম্পর্কিত নিয়ন্ত্রক শর্ত, ডিজিটাল বাণিজ্য, কাস্টমস প্রক্রিয়া এবং বাণিজ্যে স্বচ্ছতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারত চায় আমেরিকান বাজারে রপ্তানির সময় যে নিয়ম এবং প্রযুক্তিগত বাধার সম্মুখীন হতে হয় ব্যবসায়ীদের, তা সহজ করা হোক।
ভারতীয় রপ্তানিকারকদের হবে সরাসরি লাভ
এই চুক্তি যদি সময়মতো সম্পন্ন হয়, তবে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য আমেরিকান বাজারে প্রবেশ সহজ হবে। শুল্কে কমার ফলে তাদের পণ্য সস্তা হবে এবং প্রতিযোগিতায় আধিপত্য পাবে। বিশেষ করে কাপড়, জুতা এবং অটো পার্টসের মতো ক্ষেত্রগুলির জন্য এই চুক্তি অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে। ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলিও আমেরিকান বাজারে উন্নত সুযোগ পাবে।
আমেরিকান কংগ্রেসের অনুমোদন একটি বড় বাধা
তবে, এই চুক্তির পথ সম্পূর্ণ পরিষ্কার নয়। আমেরিকায় রাষ্ট্রপতির কাছে বর্তমানে পূর্ণ বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করার স্বাধীন ক্ষমতা নেই। আমেরিকান কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ব্যাপক শূন্য-শুল্ক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা যাবে না। তাই ভারত ও আমেরিকা বর্তমানে একটি সীমিত চুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যাতে সংসদীয় হস্তক্ষেপ ছাড়াই কিছু পণ্যের উপর ছাড় দেওয়া যায়।
বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
কিছু পণ্যের উপর আমেরিকা কর্তৃক আরোপিত শুল্ক নিয়ে আদালতে মামলা লম্বিত রয়েছে। পূর্বে ট্রাম্প প্রশাসন জরুরি নিয়মের আওতায় এই শুল্ক আরোপ করেছিল। ভারত চায় যদি আমেরিকান আদালত এই শুল্কগুলিকে অবৈধ ঘোষণা করেও, তবুও ভারতকে সেসব দেশের তুলনায় প্রাধান্য দেওয়া হোক যাদের সাথে আমেরিকার কোন বিশেষ বাণিজ্য চুক্তি নেই।