ভারতীয় রেলওয়ে ডিজিটাল টিকিট বুকিংয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ২০২৫ সালের ২২শে মে মাত্র ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে ৩১,৮১৪ টি টিকিট বুক করা হয়েছে। এই রেকর্ড রেলওয়ের নতুন প্রযুক্তিগত উদ্যোগ এবং AI-ভিত্তিক Anti-BOT সিস্টেমের সাফল্যের ফল।
রেলওয়ে: ভারতীয় রেলওয়ে আবারও প্রমাণ করেছে যে, প্রযুক্তিকে যদি সঠিক দিকে ব্যবহার করা যায়, তাহলে বৃহৎতম ব্যবস্থাকেও স্বচ্ছ ও দক্ষ করা সম্ভব। ২০২৫ সালের ২২শে মে রেলওয়ে মাত্র ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে ৩১,৮১৪ টি টিকিট বুক করে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছে। এই ঐতিহাসিক সাফল্য রেলওয়ের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত উদ্যোগ, দ্রুত সার্ভার নেটওয়ার্ক এবং AI-ভিত্তিক Anti-BOT সুরক্ষা ব্যবস্থার ফলে সম্ভব হয়েছে। এটি কেবলমাত্র রেলওয়ের ডিজিটালকরণের দিকে একটি বড় ধাপ নয়, বরং কোটি কোটি যাত্রীর সুবিধার ক্ষেত্রেও গুণগত উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়।
৬০ সেকেন্ডের বুকিংয়ে লুকিয়ে থাকা প্রযুক্তিগত বিপ্লব
রেল মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, ২২শে মে সকাল ১০টার সময় তৎক্ষণাৎ বুকিং শুরু হলে, মাত্র এক মিনিটের মধ্যে রেকর্ড ৩১,৮১৪ টি টিকিট IRCTC পোর্টালের মাধ্যমে বুক করা হয়েছে। এই সংখ্যাটি দেখায় যে, রেলওয়ের ডিজিটাল অবকাঠামো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, দ্রুত এবং দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছে। যেখানে আগে তৎক্ষণাৎ বুকিংয়ের সময় ওয়েবসাইট ক্র্যাশ হওয়া, পেজ লোড না হওয়া অথবা টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিত, সেখানে এখন সেসব সমস্যা প্রায় সম্পূর্ণরূপে দূর হয়েছে।
Anti-BOT প্রযুক্তি কী?
টিকিট বুকিং ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ ও স্বচ্ছ করার জন্য ভারতীয় রেলওয়ে AI-ভিত্তিক Anti-BOT ব্যবস্থা চালু করেছে। এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি ভুয়া লগইন, স্বয়ংক্রিয় সফ্টওয়্যার বুকিং (বটস) এবং এজেন্টদের দ্বারা টিকিটের সাথে ছলনা চালানো বুঝতে পেরে তা অবিলম্বে বন্ধ করে দেয়।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বে তৎক্ষণাৎ টিকিট খোলার সাথে সাথে ৫০% এর বেশি লগইন বটস থেকে হত, যার ফলে আসল যাত্রীদের জন্য টিকিট বুক করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ত। নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এই ভুয়া কার্যকলাপে ৮০% এর বেশি হ্রাস পেয়েছে।
আধার লিঙ্কযুক্ত অ্যাকাউন্টকে অগ্রাধিকার
Anti-BOT ব্যবস্থার অধীনে এখন আধার কার্ডের সাথে লিঙ্কযুক্ত অ্যাকাউন্টগুলিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য আসল ও প্রকৃত ব্যবহারকারীদের সুবিধা দান করা, এজেন্ট বা দালালদের নয়। এই পদক্ষেপ কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, সামাজিক দিক থেকেও প্রশংসনীয় কারণ এটি সরাসরি সাধারণ যাত্রীদের উপকার করে। এখন মধ্যস্থতাকারীদের উপর নির্ভরতা কমেছে এবং যাত্রীরা নিজেই বুকিং করতে বেশি আত্মবিশ্বাস এবং সুবিধা পাচ্ছেন।
ভুয়া আইডি এবং এজেন্ট নেটওয়ার্কের উপর কঠোর আঘাত
গত কয়েক বছরে রেলওয়ে অসংখ্য ভুয়া আইডি, এজেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং বট নেটওয়ার্ককে নিষ্ক্রিয় করেছে। এর ফলে বুকিং প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। এখন যাত্রীরা নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে মিনিটের মধ্যে টিকিট বুক করতে পারেন—কোনও এজেন্ট বা অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই। রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং সময় সময় সিস্টেম আপডেট করে বটসের নতুন রূপগুলিকেও ব্লক করা হবে।
গতি বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব
IRCTC গুগল ক্লাউড, Amazon Web Services (AWS) এবং আরও কিছু প্রধান ইন্টারনেট অবকাঠামো কোম্পানির সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যার ফলে বুকিংয়ের সময় ওয়েবসাইটের লোডিং গতির নাটকীয় উন্নতি হয়েছে। এখন উচ্চ ট্রাফিকের সময়ও ওয়েবসাইট হ্যাং হয় না এবং রিয়েল টাইম প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে টিকিট বুকিং আগের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে।
