গত ৪৮ ঘণ্টায় করাচিতে ২১টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুক্রবার-শনিবার বড় ধাক্কা আসতে পারে। ভারতীয় প্লেটের সাথে সংঘর্ষকে এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তান: পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচিতে গত ৪৮ ঘণ্টায় ২১টি হালকা ভূমিকম্পের আঘাত রেকর্ড করা হয়েছে। বিজ্ঞানী ও স্থানীয় ভূগোলবিদরা শুক্রবার এবং শনিবার বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। করাচির সক্রিয় ফল্ট লাইন এবং ভারতীয়, ইউরেশীয় ও আরবীয় প্লেটের ভারসাম্যহীনতাকে এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। সিন্ধু সরকার ও বিশেষজ্ঞরা ক্রমাগত সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
জনগণের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচি বর্তমানে ক্রমাগত ভূমিকম্পের আঘাতে কেঁপে উঠছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় এখানে ২১টি হালকা ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে, যার তীব্রতা রিখটার স্কেলে ২.১ থেকে ৩.৬ এর মধ্যে ছিল। ক্রমাগত আঘাতের ফলে জনগণের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভয়ের প্রভাব স্পষ্ট।
শুক্রবার ও শনিবার বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা
পাকিস্তান ভূমিকম্প ও গবেষণা কেন্দ্রের সিইও শাহবাজ লাঘারী সতর্ক করে বলেছেন, শুক্রবার ও শনিবার রাত করাচিবাসীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দাবি করেছেন যে, তাঁর দল এই ভূমিকম্পগুলির পূর্বাভাস দিয়েছিল। তাঁর মতে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঘাতের ধারাবাহিকতা প্রায়শই বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দেয়।
রিখটার স্কেলে সবচেয়ে তীব্র আঘাত ৩.৬ তীব্রতার
রবিবার রাতে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী আঘাত ছিল ৩.৬ তীব্রতার, যা মালির জেলের দেওয়াল ভেঙে ফেলেছে। এই ঘটনার পর প্রায় ২১৬ জন কয়েদী জেল থেকে পালিয়ে গেছে। এই ঘটনা কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা তুলে ধরেছে তাই নয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরও প্রশ্ন তুলে ধরেছে।
ফল্ট লাইন ও প্লেটের ভারসাম্যহীনতার সাথে জড়িত ঝুঁকি
করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ডঃ ইমরান আহমদ খান মনে করেন, ভারতীয়, ইউরেশীয় ও আরবীয় টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা এই ভূমিকম্পের প্রধান কারণ। তিনি বলেছেন, যতক্ষণ না প্লেটগুলির মধ্যে ভারসাম্য স্থাপিত হয়, ততক্ষণ ভূমিকম্প আসতে পারে। তবে, তিনি এটাও স্পষ্ট করেছেন যে, করাচি সক্রিয় প্লেট সীমানা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত, তাই খুব বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা কম।
করাচিতে সক্রিয় ফল্ট লাইনও একটি কারণ
শাহবাজ লাঘারী জানিয়েছেন, করাচির করংগী ও মালির মতো এলাকায় ছোট ছোট ফল্ট লাইন রয়েছে, যা ক্রমাগত এই ছোট ছোট ভূমিকম্পের কারণ হচ্ছে। তাঁর মতে, সিন্ধু সরকারকে অবিলম্বে সতর্কতা জারি করা উচিত এবং নাগরিকদের সম্ভাব্য বিপদের বিষয়ে সতর্ক করা উচিত।
সরকারি সংস্থার প্রতিক্রিয়া: আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই
পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর (PMD)-এর মহাপরিচালক মাহের সাহিবজাদা খান জনগণের কাছে আবেদন করেছেন, যাতে তারা আতঙ্কিত না হয়। তিনি বলেছেন, এই ভূমিকম্পের কার্যকলাপ আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শহরের ঐতিহাসিক ফল্ট লাইন ধীরে ধীরে তার শক্তি নির্গত করছে, যার ফলে বড় বিপদের সম্ভাবনা এখন কম।
সিএম মুরাদ আলী শাহের বক্তব্য
সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ জানিয়েছেন, তিনি নিজেই ভূমিকম্প প্রকৌশলী (Earthquake Engineering) পড়াশোনা করেছেন এবং তাঁর মতে, ছোট ছোট আঘাত বৃহৎ শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি বলেছেন, মাটি যদি ধীরে ধীরে শক্তি নির্গত করে, তবে এটি ভাল, এর চেয়ে একবারে বড় ধাক্কা আসা ভাল নয়। তবে, তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে, অনেক সময় বড় ধাক্কার আগেও এ ধরনের ছোট ছোট আঘাত দেখা যায়।
USGS ও ভারতের কেন্দ্র ভূমিকম্প রেকর্ড করেনি
এই সম্পূর্ণ ঘটনাক্রমের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ (USGS) এবং ভারতের জাতীয় ভূমিকম্পবিদ্যা কেন্দ্র (NCS) রবিবার থেকে এখন পর্যন্ত করাচি ও এর আশেপাশে কোন ভূমিকম্প রেকর্ড করেনি। এতে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে যে করাচিতে আসলে কি কোন গুরুতর টেকটোনিক हलचल হচ্ছে।
```