এই ফান্ডটি ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩-এ চালু হয়েছিল, অর্থাৎ এই স্কিমটি বাজারে সক্রিয় হয়েছে ৩২ বছরের বেশি সময় ধরে।
টাটা মিউচুয়াল ফান্ডের একটি স্কিম আজকাল আলোচনায় রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপুল পরিমাণ রিটার্ন দিয়েছে। Tata Large & Mid Cap Fund নামক এই ওপেন-এন্ডেড ইক্যুইটি স্কিমটি ২৫ বছরের SIP-এর মাধ্যমে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকার বিনিয়োগকে ৩.৮১ কোটি টাকায় পরিণত করেছে। এই স্কিমটি ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩-এ চালু হয়েছিল এবং ৩২ বছরের বেশি সময় ধরে বাজারে বিদ্যমান রয়েছে।
দীর্ঘ মেয়াদে শক্তিশালী রিটার্ন
ফান্ডটি চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত গড় বার্ষিক রিটার্ন, অর্থাৎ CAGR, প্রায় ১৭.৩০ শতাংশ। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে কেউ যদি ১ জুলাই, ২০০০ থেকে এই ফান্ডে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকার SIP করতেন, তাহলে ২৫ বছর পর তাঁর ভ্যালু হত ৩.৮১ কোটি টাকার বেশি। এই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তাঁদের জন্য, যাঁরা ধৈর্য ও নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে বিনিয়োগ করেন।
ফান্ডের গঠন ও বিনিয়োগ মডেল
Tata Large & Mid Cap Fund একটি ইক্যুইটি ফান্ড, যা লার্জ ক্যাপ এবং মিড ক্যাপ কোম্পানিগুলিতে সমানভাবে বিনিয়োগ করে। ফান্ডের কৌশল অনুসারে, কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ বিনিয়োগ লার্জ ক্যাপে এবং কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ মিড ক্যাপ কোম্পানিগুলিতে করা হয়। বাকি ৩০ শতাংশ ফ্লেক্সি ক্যাপ অ্যাপ্রোচের অধীনে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ, ফান্ড ম্যানেজারের স্বাধীনতা থাকে, তিনি বাজারের গতিবিধি অনুযায়ী যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।
ফান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং কৌশল
এই স্কিমটি চন্দ্রপ্রকাশ পাডিয়ার এবং মিতা শেঠী দ্বারা পরিচালিত হয়, যাঁরা টাটা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের অভিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজারদের মধ্যে গণ্য হন। তাঁদের প্রধান ফোকাস হল GARP অর্থাৎ Growth at Reasonable Price-এর ওপর। অর্থাৎ, তাঁরা এমন কোম্পানি নির্বাচন করেন, যেগুলিতে ভবিষ্যতে ভালো বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে এবং যেগুলির মূল্যায়নও আকর্ষণীয়।
ফান্ডে যে কোম্পানিগুলি নির্বাচন করা হয়, তাদের বৈশিষ্ট্য হল তারা কম ঋণে চলছে এবং শক্তিশালী ফ্রি ক্যাশ ফ্লো তৈরি করছে। এই ধরনের স্টকগুলিকে “compounders” অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রিটার্ন প্রদানকারী স্টক হিসাবে দেখা হয়।
পোর্টফোলিওর পজিশনিং
বর্তমানে ফান্ডটির পোর্টফোলিওতে প্রায় ৫৩টি স্টক রয়েছে। এদের মধ্যে শীর্ষ ১০টি স্টকের ওয়েটেজ প্রায় ৪৫ শতাংশ, যা প্রমাণ করে যে ফান্ড ম্যানেজার হাই-কনভিকশন স্টকগুলির উপর বেশি আস্থা রাখেন। পোর্টফোলিওকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে: একটি অংশ স্থিতিশীল ও শক্তিশালী কোম্পানিগুলির স্টক দ্বারা গঠিত, যা পোর্টফোলিওকে স্থিতিশীলতা ও তারল্য দেয়, যেখানে অন্য অংশটি সেই কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে যেগুলিতে অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো পারফর্ম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোন সেক্টরগুলি থেকে ফান্ড দূরত্ব বজায় রাখে
ফান্ড ম্যানেজার সেই সেক্টরগুলি থেকে দূরে থাকেন যেগুলি চক্রাকার এবং যেখানে ঋণের বোঝা বেশি থাকে। বিশেষ করে কমোডিটি সেক্টরের মতো শিল্পগুলিতে ফান্ডের বিনিয়োগ করা হয় না, কারণ এগুলির উপর বাহ্যিক ও গ্লোবাল ফ্যাক্টরগুলির প্রভাব বেশি থাকে। এর ফলে ফান্ডের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
টার্নওভার ও কৌশল
ফান্ডের পোর্টফোলিও টার্নওভার খুব কম থাকে, যা থেকে স্পষ্ট হয় যে ম্যানেজার বাই অ্যান্ড হোল্ডের স্ট্র্যাটেজি অনুসরণ করেন। অর্থাৎ, একবার স্টক নির্বাচন করা হয়ে গেলে, তাতে বারংবার পরিবর্তন করা হয় না। এই দৃষ্টিভঙ্গি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য খুবই ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়।
বিনিয়োগের সুবিধা ও শর্তাবলী
এই ফান্ডে বিনিয়োগ শুরু করা যেতে পারে মাত্র ৫ হাজার টাকা থেকে, যেখানে SIP শুরু করা যেতে পারে মাত্র ১০০ টাকা থেকে। ফান্ডে কোনও লক-ইন পিরিয়ড নেই, তবে যদি কোনও বিনিয়োগকারী তাঁর পরিমাণের ১২ শতাংশের বেশি ইউনিট ৯০ দিনের মধ্যে তোলেন, তাহলে তাঁর উপর ১ শতাংশের প্রস্থান বোঝা (exit load) চাপানো হবে।
৩১ মে, ২০২৫ পর্যন্ত এই ফান্ডের এক্সপেন্স রেশিও ১.৭৫ শতাংশ ছিল, যা ইন্ডাস্ট্রির গড়ের কাছাকাছি।
বেঞ্চমার্কের থেকে ভালো পারফর্মেন্স
এই ফান্ডের বেঞ্চমার্ক ইনডেক্স হল NIFTY Large Midcap 250 TRI। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে ফান্ডটি কেবল তার বেঞ্চমার্ককে পিছনে ফেলেছে তা নয়, বরং এটি ধারাবাহিকভাবে এটিকে পরাস্ত করেছে। এই কারণেই দীর্ঘ মেয়াদে এটি বিনিয়োগকারীদের ভালো মুনাফা এনে দিয়েছে।
৩২ বছর পুরনো বিশ্বাস
টাটা মিউচুয়াল ফান্ড দেশের প্রাচীনতম মিউচুয়াল ফান্ড হাউসগুলির মধ্যে অন্যতম। ১৯৯৩ সালে চালু হওয়া Tata Large & Mid Cap Fund আজও শক্তিশালী পারফর্মেন্স দেখাচ্ছে। এত বছর ধরে দীর্ঘ ট্র্যাক রেকর্ড এবং বিনিয়োগে নিয়মানুবর্তিতার কারণে, এই ফান্ড সেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশেষ স্থান তৈরি করেছে, যাঁরা SIP-এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে কিন্তু স্থিতিশীল রিটার্নের আশা রাখেন।
রিটার্ন চার্টে আয়ের প্রমাণ
যেসব বিনিয়োগকারী ২০০০ সালে এই ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকার SIP করেছেন, তাঁদের পুঁজি আজ ৩.৮১ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। এই সংখ্যাটি কেবল ফান্ডের শক্তিকেই প্রতিফলিত করে না, বরং এটিও দেখায় যে মিউচুয়াল ফান্ডগুলি দীর্ঘ মেয়াদে কতটা বড় সম্পদ তৈরি করতে পারে।
টাটা লার্জ অ্যান্ড মিড ক্যাপ ফান্ডের এই পারফর্মেন্স নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এটি দেখায় যে নিয়মানুবর্তিত বিনিয়োগ, বিচক্ষণতার সঙ্গে নির্বাচিত স্টক এবং সময়ের সঙ্গে SIP-এর মাধ্যমে কীভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোটিপতি হতে পারেন।