২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়ছে, এবং এবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-ও পূর্ণ সক্রিয়তা নিয়ে ঝাঁপিয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, আরএসএস বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ-এর আসন্ন নির্বাচনকে তাদের "সম্মানের প্রশ্ন" হিসাবে বিবেচনা করে সম্পূর্ণ শক্তি নিয়োগের কৌশল নিয়েছে।
নয়া দিল্লি: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে তাদের কৌশল আরও জোরদার করেছে। আগামী বছরগুলিতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, তবে আরএসএস বিহার ও বাংলার নির্বাচনকে "সম্মানের প্রশ্ন" হিসেবে নিয়েছে। উভয় রাজ্যেই বিজেপির অবস্থান শক্তিশালী করতে আরএসএস 'ফর্মুলা ত্রিশূল' নামে একটি বহু-পর্যায়ের অভিযান শুরু করেছে, যা কেবল রাজনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে।
আরএসএস-এর 'ফর্মুলা ত্রিশূল' আসলে কী?
সূত্র অনুযায়ী, আরএসএস তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর তাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছে –
- অসন্তুষ্ট ভোটারদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের সমস্যাগুলি ব্যবহার করা
- সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগকে মেরুকরণের জন্য ব্যবহার করা
- দলিতদের হিন্দু একতার মধ্যে এনে, ওবিসি-ইবিসি-কে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিকভাবে কেন্দ্রে আনা
সংঘ এই তিনটি দিককে 'ত্রিশূল' নাম দিয়েছে – এই ত্রিমুখী কৌশল বিহারে জাতিগত সমীকরণকে প্রভাবিত করতে এবং পশ্চিমবঙ্গে সাংস্কৃতিক পুনরুত্থানের মাধ্যমে বিজেপির জন্য জমি তৈরি করার কাজ করছে।
বিহার-এ জমিদার এবং ওবিসি-দের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা
বিহার-এ আরএসএস-এর প্রধান লক্ষ্য হল উচ্চবর্ণের সামন্ত শ্রেণী, সেইসাথে ওবিসি এবং ইবিসি-দের একত্রিত করা। সংঘের ধারণা, যদি দলিতদের একটি বৃহত্তর হিন্দু গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা যায় এবং ওবিসি-ইবিসি-দের সাথে যুক্ত করা যায়, তাহলে একটি শক্তিশালী সামাজিক জোট তৈরি করা যেতে পারে। এর জন্য সংঘ 'ঘর वापसी প্রোগ্রাম', ধর্মীয় সভা এবং জাতিগত-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে যুবক ও মহিলাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে।
সংঘের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলি নওয়াদা, গয়া, ভোজপুর, চম্পারণ এবং সিওয়ানে নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং অনুপ্রেরণামূলক সম্মেলন করছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, নওয়াদাতে সম্প্রতি দলিতদের মধ্যে হওয়া জাতিগত সহিংসতা সংঘের সামাজিক এজেন্ডাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তবে সংঘ এটিকে সামাজিক বিভাজন হিসেবে না দেখে "হিন্দু ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা"-র উদাহরণ হিসেবে প্রচার করছে।
বাংলায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক মেরুকরণ
পশ্চিমবঙ্গে সংঘের কৌশল কিছুটা ভিন্ন। এখানে আরএসএস-এর পরিকল্পনা হল ২০২৫ সালে ৩০০টির বেশি হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। এর বেশিরভাগ অনুষ্ঠান শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে, যা সংঘের প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পালন করা হচ্ছে। আরএসএস-এর দক্ষিণবঙ্গের প্রধান বিপ্লব রায়-এর মতে, অনুষ্ঠানগুলি মহালয়া থেকে শুরু হয়ে বিজয়া দশমীর দিনে অস্ত্র পূজার মাধ্যমে শেষ হবে।
এই ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ সাধারণ মনে হতে পারে, তবে সংঘের উদ্দেশ্য স্পষ্ট: হিন্দু সমাজকে একত্রিত করা এবং ভোটারদের আবেগগতভাবে যুক্ত করা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরএসএস-এর বিরুদ্ধে আক্রমণ
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংঘের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হিংসা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে, ২০২৪ সালে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা বেড়েছে এবং এর পিছনে আরএসএস ও বিজেপির রাজনীতি দায়ী। সম্প্রতি, কলকাতার কাছে সোনারপুরে হওয়া হিংসার পর মমতা সরাসরি সংঘের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, "আমি আগে আরএসএস-এর নাম নিতাম না, কিন্তু এখন নিতে বাধ্য হচ্ছি। ওরা মিথ্যা ও ঘৃণা ছড়াচ্ছে। আমাদের পারস্পরিক অবিশ্বাস থেকে বাঁচতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে একসঙ্গে থাকতে হবে।"
সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত মার্চ ২০২৫-এ এক সপ্তাহ বাংলা এবং এক সপ্তাহ বিহারে কাটিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের লক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁর মতে, এখন সংঘকে কেবল সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নির্বাচনী প্রভাব বিস্তারেও ভূমিকা রাখতে হবে। দিল্লি, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে সংঘের কৌশলের সফল পরীক্ষার পর, এবার বিহার ও বাংলার অগ্নিপরীক্ষা।
'সেন্টার ফর স্টাডি অফ সোসাইটি অ্যান্ড সেকুলারিজম (CSSS)' এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ৫৯টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৮টি বাংলায় এবং কয়েক ডজন বিহারে ঘটেছে। এটি সংঘের ধর্মীয় অভিযান এবং সামাজিক মেরুকরণের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে।