২০২৫ নির্বাচন: তেজ প্রতাপের বিদ্রোহ, লালু পরিবারের উদ্বেগে বিহারের রাজনীতি

২০২৫ নির্বাচন: তেজ প্রতাপের বিদ্রোহ, লালু পরিবারের উদ্বেগে বিহারের রাজনীতি
সর্বশেষ আপডেট: 8 ঘণ্টা আগে

বিহারের রাজনীতিতে লালু প্রসাদ যাদবের পরিবার কয়েক দশক ধরে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে লালু পরিবারের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদব আবার খবরের শিরোনামে।

পাটনা: বিহারের রাজনীতিতে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং লালু প্রসাদ যাদবের পরিবার বহু বছর ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। কিন্তু ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবারও লালু পরিবারের অভ্যন্তরে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। এর কারণ হয়েছেন দলের সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদবের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদব, যাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্য, পোস্ট এবং দল থেকে বহিষ্কার রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

তেজ প্রতাপের বিদ্রোহী মনোভাব এবং তাঁর অস্পষ্ট রাজনৈতিক দিশা আরজেডির ঐক্য এবং কৌশলের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। এখানে আমরা সেই ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি, যা প্রমাণ করে যে তেজ প্রতাপ যাদব সত্যিই আরজেডি এবং লালু পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারেন।

১. অনুষ্কা বিতর্ক এবং দল থেকে বহিষ্কার

মে ২০২৫-এ তেজ প্রতাপ তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় এক মহিলার সঙ্গে ১২ বছর আগের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে একটি পোস্ট করেন, যা রাজনৈতিক এবং পারিবারিক ক্ষেত্রে তোলপাড় সৃষ্টি করে। পরে তিনি এটিকে হ্যাকিং বলেছিলেন, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। লালু যাদব এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে তাঁকে দল এবং পরিবার থেকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করেন। 

এই প্রথমবার লালু তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এত কঠোর ব্যবস্থা নিলেন। এই পদক্ষেপকে আরজেডির নৈতিক ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টা হিসেবে দেখা হলেও, এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায় যে পরিবারের মধ্যে ফাটল এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

২. বহিষ্কারের পর বিদ্রোহাত্মক মন্তব্য

তেজ প্রতাপ বহিষ্কারের পর চুপ থাকার পরিবর্তে টুইট করে বলেন, ‘আমার নীরবতাকে দুর্বলতা ভেবো না, শুরুটা তুমি করেছ, শেষ আমি করব।’ এই টুইটটি সরাসরি তাঁর পরিবার এবং দলের নেতৃত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে। এটি তাঁর মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ এবং বিদ্রোহের প্রমাণ। যদি তেজ প্রতাপ নির্বাচনের আগে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেন—যেমন নতুন দল তৈরি করা অথবা অন্য কোনো দলের সঙ্গে হাত মেলানো—তাহলে আরজেডির জন্য তা গভীর আঘাত হতে পারে।

৩. তেজস্বীর সঙ্গে পুরনো বিবাদ এবং ‘কৃষ্ণ-অর্জুন’-এর ভাব

তেজ প্রতাপ এবং তেজস্বী যাদবের মধ্যে আগে থেকেই ক্ষমতার লড়াই চলে আসছিল। তেজস্বীকে দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরার পর তেজ প্রতাপ নিজেকে কোণঠাসা অনুভব করতে শুরু করেন। তিনি বহুবার নিজেকে কৃষ্ণ এবং তেজস্বীকে অর্জুন বলে উল্লেখ করে ক্ষমতায় নিজের ভূমিকা বড় করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁর আচরণ বারবার দলের আদর্শের বাইরে গেছে। তেজ প্রতাপের এই অস্থিতিশীলতা কেবল পরিবারকেই নয়, দলের ক্যাডার এবং কর্মীদেরও বিভ্রান্ত করে।

৪. বিরোধী দলগুলির জন্য সুযোগ

তেজ প্রতাপের বিতর্কগুলির সবচেয়ে বড় সুবিধা পাচ্ছে বিরোধী দলগুলি। জেডিইউ এবং বিজেপি আরজেডির কথা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে এটিকে ‘লালু পরিবারের পারিবারিক নাটক’ বলেছে। তেজ প্রতাপের প্রাক্তন স্ত্রী ঐশ্বর্য রাইয়ের বিষয়টিকেও আবারও সামনে আনা হচ্ছে। এই সমস্ত কিছু আরজেডির ভাবমূর্তিকে দুর্বল করতে পারে, বিশেষ করে মুসলিম-যাদব ভোটব্যাঙ্কের মধ্যে, যা দলের ঐতিহ্যবাহী সমর্থন ভিত্তি।

৫. অখিলেশ যাদবের সঙ্গে কথা এবং নতুন রাজনৈতিক জল্পনা

তেজ প্রতাপ সম্প্রতি সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের সঙ্গে ভিডিও কল করে রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তিনি এই কথোপকথনটি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে অখিলেশকে ‘মনের কাছাকাছি’ বলে উল্লেখ করেছেন। যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে তিনি কোথা থেকে নির্বাচন লড়বেন, তখন তিনি ‘লখনউ আসছি’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। 

এই ইঙ্গিত দেয় যে তিনি আরজেডি-র বাইরে নিজের নতুন রাজনৈতিক পথ খুঁজে নিতে পারেন। যদি তিনি নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন লড়েন বা এসপি অথবা অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোট করেন, তাহলে আরজেডি-কে ভোট কাটার মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতে পারে, যার সরাসরি সুবিধা হবে বিজেপি এবং জেডিইউ-এর।

Leave a comment