এসসিও বৈঠকে রাজনাথ সিং: চীন, সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা

এসসিও বৈঠকে রাজনাথ সিং: চীন, সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা
সর্বশেষ আপডেট: 5 ঘণ্টা আগে

চীনের SCO বৈঠকে রাজনাথ সিং-এর সঙ্গে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আলোচনা, যেখানে পাকিস্তান-প্রশ্রিত সন্ত্রাসবাদ, সীমান্ত বিবাদ এবং কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা নিয়ে আলোচনা হয়।

SCO শীর্ষ সম্মেলন: ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং চীনের চিংদাও শহরে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO)-র প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। এই সময় তিনি চীনা সমকক্ষ অ্যাডমিরাল ডং জুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, পাকিস্তান-প্রশ্রিত সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্ত বিবাদ-এর মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলিতে স্পষ্ট এবং দূরদর্শী আলোচনা করেন। রাজনাথ সিং ভারত-চীন সীমান্ত বিবাদ সমাধানের জন্য চার-দফা একটি প্রস্তাবও পেশ করেন। সেই সঙ্গে কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরুর দিশায় অগ্রগতি হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়।

সন্ত্রাসবাদের উপর ভারতের স্পষ্ট অবস্থান

রাজনাথ সিং SCO বৈঠকের মঞ্চ থেকে পুনরায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকির কথা তুলে ধরেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, সন্ত্রাসবাদ কেবল একটি দেশের সমস্যা নয়, বরং এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি বিপদ। তিনি সকল সদস্য দেশকে সন্ত্রাস ও হিংস্রতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

বিশেষ করে পাকিস্তান-প্রশ্রিত সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে রাজনাথ সিং বলেন, ভারতের নীতি সুস্পষ্ট এবং নীতিগত। তিনি 'অপারেশন সিন্ধুর'-এর উল্লেখ করে জানান, এটি সীমান্ত পারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অঙ্গীকারের প্রতীক। ভারত এখন সন্ত্রাসবাদ বরদাস্ত করবে না এবং এর সমাপ্তির জন্য সব স্তরে চেষ্টা চালাচ্ছে।

চীনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা

রাজনাথ সিং এবং চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুন-এর মধ্যে সাক্ষাৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠকের পর রাজনাথ সিং সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন যে আলোচনা গঠনমূলক এবং দূরদর্শী ছিল। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।

রাজনাথ সিং আরও বলেন, ভারত ও চীনের উচিত পারস্পরিক সম্পর্কে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকা এবং ইতিবাচক পরিবেশ বজায় রাখা। দুই নেতাই স্বীকার করেছেন যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বজায় রাখা এবং মতপার্থক্য কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান করাই হলো সামনের দিকে এগোনোর পথ।

সীমান্ত বিবাদ সমাধানের জন্য চার-সূত্রীয় প্রস্তাব

ভারত ও চীনের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC)-তে চলমান উত্তেজনা কমানোর জন্য রাজনাথ সিং একটি চার-দফা সূত্র পেশ করেন। তিনি প্রস্তাব দেন যে:

  1. বিঘটন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ করা হোক।
    যেসব অঞ্চলে উত্তেজনা রয়েছে, সেখানে সেনা অপসারণের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে, যাতে সংঘর্ষের সম্ভাবনা দূর হয়।
  2. সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।
    উভয় দেশকে একসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যে সীমান্তে শান্তি বজায় থাকে এবং কোনো প্রকার উস্কানিমূলক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা যায়।
  3. সীমান্তের সীমানা নির্ধারণ (demarcation) এবং ডি-লিমিটেশন-এর লক্ষ্য দ্রুত পূরণ করা হোক।
    সীমান্ত বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক স্তরে প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে।
  4. SR স্তরের বিদ্যমান ব্যবস্থার কার্যকর ব্যবহার করা হোক।
    বিশেষ প্রতিনিধিদের (Special Representatives) স্তরে সংলাপ ও সমাধানের প্রক্রিয়া পুনরায় সক্রিয় করতে হবে, যাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়।

কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরুর সম্ভাবনা

চীন সফরের সময় রাজনাথ সিং আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, যা ভারতের লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, প্রায় ছয় বছর পর কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু করার দিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মধুবাণী চিত্রকলার উপহার

রাজনাথ সিং-এর সঙ্গে সাক্ষাতে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুন-কে মধুবাণী চিত্রকর্ম উপহার দেওয়া হয়। এটি বিহারের মিথিলা অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা, যা উজ্জ্বল রঙ এবং আকর্ষণীয় নকশার জন্য পরিচিত। এতে উপজাতি নকশা এবং প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার প্রধান্য পায়।

এই উপহার কেবল শিল্পকর্মের আদান-প্রদান নয়, বরং ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদার প্রতীকও। এর মাধ্যমে এই বার্তা যায় যে ভারত তার ঐতিহ্যকে গর্বের সঙ্গে বিশ্ব মঞ্চে উপস্থাপন করে।

SCO মঞ্চ থেকে ভারতের বিশ্ব বার্তা

SCO প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে রাজনাথ সিং পুনরায় ভারতের বিদেশ নীতির প্রধান স্তম্ভগুলি স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ভারত আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ, সীমান্ত বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং পারস্পরিক বিশ্বাস ভারতের প্রধান অগ্রাধিকার।

 

Leave a comment