প্রশান্ত কিশোরের দাবি, NDA সরকারে এলে BJP নীতিশ কুমারকে সরিয়ে নিজের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করবে। তিনি তেজস্বী যাদবের 'কলম যাত্রা' এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
বিহার নির্বাচন: বিহারের রাজনীতিতে নির্বাচনের আগে উত্তেজনা তুঙ্গে। নির্বাচন কমিশনের দল রাজ্যে ঘাঁটি গেড়েছে এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের একটি ব্যাপক অভিযানও শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর আজতক-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দাবি করেছেন। তিনি কেবল তেজস্বী যাদব এবং নীতিশ কুমারকে নিশানা করেননি, বরং এও বলেছেন যে, সরকার গঠন হলে বিজেপি নীতিশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেবে।
ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে প্রশ্ন
প্রশান্ত কিশোর সবার প্রথমে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত ভোটার তালিকা সংশোধন অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ২০০৩ সালের পর এই প্রথম নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এমন নিবিড় সংশোধন অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার উদাহরণ দিয়ে বলেন যে, সেখানেও নির্বাচনের আগে এমন সংশোধন হয়েছিল, যেখানে বিরোধীরা কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল।
কিশোরের মতে, যদি এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা ভাঙবে। তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন যে, তারা যেন এই পুরো প্রক্রিয়াটি প্রকাশ্যে আনে, যাতে সকল রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের বিশ্বাস জন্মায় যে এই পদক্ষেপটি নিরপেক্ষতা ও সংস্কারের জন্য নেওয়া হয়েছে।
তেজস্বী যাদবের 'কলম যাত্রা' নিয়ে কটাক্ষ
তেজস্বী যাদব কর্তৃক পাটনায় আয়োজিত ছাত্র সংসদ এবং 'কলম যাত্রা' নিয়ে প্রশান্ত কিশোর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তেজস্বী যাদবকে শিক্ষা সংস্কারের কথা বলার আগে তাঁর পরিবারের ১৫ বছরের শাসনের দিকে নজর দেওয়া উচিত। তিনি অভিযোগ করেন যে, ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিহারের শিক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এবং সেই সময়ে আরজেডি-র সরকার ছিল।
প্রশান্ত কিশোর আরও প্রশ্ন করেন, যখন তেজস্বী যাদব স্বয়ং তিন বছর উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং শিক্ষা মন্ত্রক তাঁর জোটের হাতে ছিল, তখন তিনি শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিতে কী করেছিলেন? তিনি কলম বিতরণের বিষয়টিকে নিছক প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, যদি সত্যিই পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং জ্ঞান বিতরণ করতে হবে।
'জঙ্গলরাজ' শব্দ প্রসঙ্গে স্পষ্ট মন্তব্য
প্রশান্ত কিশোর তেজস্বী যাদব কর্তৃক বারবার 'জঙ্গলরাজ' শব্দটির ব্যবহারের ওপরও তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন, এটি কেবল রাজনৈতিক অভিযোগ নয়, বরং সেই সময়ের পরিস্থিতিকে হাইকোর্টের বিচারপতিরাই 'জঙ্গলরাজ' বলেছিলেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ৯০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত বিহারে খুন, অপহরণ এবং চাঁদাবাজির মতো অপরাধ চরম পর্যায়ে ছিল। এমন পরিস্থিতিতে যদি তেজস্বী সেই সময়কে সুশাসন বলেন, তাহলে জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তাঁরা বিহারকে কোন পথে দেখতে চান।
নীতিশ কুমার সম্পর্কে গুরুতর মন্তব্য
মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের ভূমিকা ও ক্ষমতা নিয়ে প্রশান্ত কিশোর দ্ব্যর্থহীনভাবে তাঁর মতামত দেন। তিনি বলেন যে, এখন নীতিশ কুমারের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার উপযুক্ত নয়। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, যে ব্যক্তি মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর নাম পর্যন্ত ভুলে যান, তিনি বিহারের মতো একটি জটিল রাজ্যের নেতৃত্ব কীভাবে দিতে পারেন?
প্রশান্ত কিশোরের দাবি, এই কথা শুধু জনগণই নয়, বিজেপি নেতা অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদীও জানেন। তবে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে বিজেপি এখনও তাঁর সঙ্গে নির্বাচন লড়ছে। তাঁর বক্তব্য, যদি কোনো কারণে এনডিএ সরকার গঠন করতেও পারে, তাহলে বিজেপি নীতিশ কুমারকে সরিয়ে দেবে এবং নিজেদের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করবে।
