ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত অভিযান
আসন্ন নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন। নির্বাচন কমিশনের নজর এবার পড়েছে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা ৩৪৫টি Registered Unrecognised Political Parties (RUPPs)-এর দিকে। কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে, ২০১৯ সালের পর এই দলগুলির একটিও নির্বাচনমুখী কার্যকলাপ নেই। অনেকের আবার স্থায়ী দফতরও নেই কোথাও। এমন পরিস্থিতিতে কমিশন এই দলগুলিকে বাতিলের প্রস্তুতি নিয়েছে।
কেন এই কঠোর পদক্ষেপ? কমিশনের ব্যাখ্যা স্পষ্ট
বর্তমানে ECI-এর তালিকায় রয়েছে মোট ২,৮০০-র বেশি RUPP। যার মধ্যে বহু দল শুধুমাত্র নামমাত্র অস্তিত্ব বজায় রেখে রাজনৈতিক সুবিধা কিংবা কর ফাঁকির আশ্রয় নিয়ে টিকে ছিল। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্তপূরণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই ৩৪৫টি দল সেই ন্যূনতম শর্তগুলোও পূরণ করেনি বলে অভিযোগ। এই কারণেই দেশব্যাপী বিশেষ স্ক্রুটিনির মাধ্যমে এদের চিহ্নিত করেছে কমিশন।
‘কারণ দর্শাও’ নোটিশ: সুযোগ থাকছে সাফাইয়ের
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখনও চূড়ান্ত বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রথম ধাপে সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের (CEO) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই দলগুলিকে ‘Show Cause Notice’ পাঠাতে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সন্তোষজনক উত্তর না এলে, কমিশনই চূড়ান্তভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফেরাতেই পদক্ষেপ
কমিশনের এই উদ্যোগকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন নির্বাচন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ফেরানোর একটি বড় পদক্ষেপ। অনেকদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল, বহু RUPP আসলে কাগুজে দল, যাদের বাস্তব কোনও রাজনৈতিক ভূমিকা নেই। এমনকি বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির ক্ষেত্রেও এই দলের নাম জড়িয়ে পড়েছিল একাধিকবার। সেই কারণেই নির্বাচন কমিশন এবার আরও কঠোর হচ্ছে।
ভবিষ্যতেও চলবে বিশেষ নজরদারি অভিযান
কমিশন সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে এমন বিশেষ অভিযান আরও বাড়ানো হবে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপ, অফিসের অস্তিত্ব এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়তা খতিয়ে দেখা হবে। এমনকি প্রতি বছর বিশেষ অডিটও করা হতে পারে। যারা শুধুমাত্র কর ফাঁকি, অর্থপাচার বা ভুয়ো সংস্থার মতো অপকর্মের আড়ালে দল হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে, তাদেরও ধরার পরিকল্পনা করছে কমিশন।
রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, শুরু আলোচনা
কমিশনের এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলি যেখানে স্বাগত জানিয়েছে এই উদ্যোগকে, সেখানে ছোট ছোট আঞ্চলিক দলগুলি বলছে, এভাবে অনেক ছোট রাজনৈতিক শক্তির কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। তবে কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
উপসংহার
দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও জবাবদিহিমূলক রাখতে নির্বাচন কমিশনের এই অভিযান নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আগামী দিনে আরও কতগুলি দল এই তালিকায় যুক্ত হবে, কিংবা কে কে শুনানিতে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে পারবে, সেদিকেই এখন তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।