ভারতীয় নৌসেনাতে উচ্চ-বিভাগীয় কেরানির পদে কর্মরত বিশাল যাদবকে, পাকিস্তানের কাছে গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলির মতে, অভিযুক্ত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় সংবেদনশীল সামরিক তথ্য শত্রু দেশকে সরবরাহ করেন। এই ঘটনার পরে, দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সতর্কতা এবং তদন্ত জোরদার করেছে। দিল্লির নৌসেনা ভবন থেকে বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া বিশালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জয়পুরে আনা হয়, যেখানে বৃহস্পতিবার সিজেএম আদালত তাকে চার দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থাগুলি এখন অভিযুক্তের ভূমিকা, যোগাযোগ সূত্র এবং ফাঁস হওয়া তথ্যের পরিমাণ নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে বিশাল যাদব 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সময় থেকেই সংস্থাগুলির নজরে ছিলেন। বর্তমানে, এই মামলাটি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তদন্ত চলছে যে অভিযুক্তের পিছনে কোনও সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল কিনা।
বিশাল যাদবের চার দিনের রিমান্ড
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ভারতীয় নৌসেনার উচ্চ-বিভাগীয় কেরানি বিশাল যাদবকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। শুনানির সময়, তদন্ত সংস্থা আদালতকে অভিযুক্তের চার দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানায়, যা আদালত মঞ্জুর করে। এখন ৩০শে জুন সকাল ১১টা পর্যন্ত অভিযুক্ত রাজস্থান পুলিশের সিআইডির হেফাজতে থাকবে। কর্মকর্তাদের মতে, রিমান্ডের মেয়াদে তার কাছ থেকে নিরাপত্তা সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে গভীর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি সুদেশ কুমার সাত্তোয়ান জানিয়েছেন যে, তদন্ত সংস্থাগুলি ২০২০ সাল থেকে বিশাল যাদবের উপর নজর রাখছিল। সেই সময়েও তার সন্দেহজনক কার্যকলাপের খবর পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এখন যখন নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে, তখন তাকে দিল্লি নৌসেনা ভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে অভিযুক্ত ভারতীয় নৌসেনা এবং জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য একজন পাকিস্তানি মহিলা হ্যান্ডলারের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। বর্তমানে, তদন্ত সংস্থাগুলি তার নেটওয়ার্ক এবং অতীতের সংযোগগুলিও খতিয়ে দেখছে।
পাকিস্তানি হ্যান্ডলারের সঙ্গে যুক্ত গুপ্তচর নেটওয়ার্ক
ভারতীয় নৌসেনার কেরানি বিশাল যাদবের গ্রেপ্তারের পর আরও একটি চাঞ্চল্যকর দিক সামনে এসেছে। তদন্ত সংস্থাগুলির ধারণা, যাদব নৌসেনার সংবেদনশীল অপারেশন “সিঁদুর”-এর সময়ও পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য পাচার করেছিলেন। এই অপারেশনের সময়ই তিনি সংস্থাগুলির নজরে আসেন।
তদন্তে জানা গেছে যে বিশাল একজন কথিত পাকিস্তানি মহিলা হ্যান্ডলারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, যাঁর নাম তিনি তাঁর ফোনে “প্রিয়া শর্মা” হিসাবে সেভ করেছিলেন। বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি সুদেশ কুমার সাত্তোয়ানের মতে, মোবাইলে সেভ করা নামটি সম্ভবত জাল এবং আসল পরিচয় গোপন করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।
এখন নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এই বিষয়ে অনুসন্ধান করছে যে মহিলাটি আসলে কে, কোথা থেকে কাজ করছিলেন এবং কীভাবে বিশাল পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। একই সঙ্গে, তদন্তে এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে যে, যাদব কত দিন ধরে এই কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এর বিনিময়ে তিনি কত টাকা পেয়েছেন—তা কি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ছিল নাকি সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে? এই বিষয়েও তদন্ত চলছে যে, যাদব একাই কাজ করছিলেন নাকি তাঁর সঙ্গে অন্য কেউ এই গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত ছিল। আপাতত, সংস্থাগুলি তাঁর সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো গুপ্তচরবৃত্তি মডেলের স্তর উন্মোচনে ব্যস্ত রয়েছে। আগামী দিনগুলিতে এই মামলায় আরও গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নৌসেনার কেরানি দেশদ্রোহী
হরিয়ানার রেওয়ারির বাসিন্দা বিশাল যাদব, যিনি নতুন দিল্লি নৌসেনা ভবনে উচ্চ-বিভাগীয় কেরানি (UDC) পদে কর্মরত ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা এবং গুপ্তচরবৃত্তির গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত সংস্থাগুলির দাবি, তিনি অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানের মহিলা হ্যান্ডলারকে ভারতের সংবেদনশীল এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্য পাঠিয়েছেন। এই ঘটনার পরে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। রাজস্থান পুলিশের CID এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তাঁকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
বিশালকে বুধবার দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, এরপর তাঁকে জয়পুরে এনে আদালতে পেশ করা হয়। বৃহস্পতিবার সিজেএম আদালত তাঁকে চার দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি ক্রমাগত নীরব ছিলেন এবং মুখ লুকানোর চেষ্টা করেন। তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন যে তিনি কত দিন ধরে এই গুপ্তচর নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এই পুরো মামলায় অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা।