২০২৫ সালের ভারতের জনগণনা: ডিজিটাল পদ্ধতিতে শুরু

২০২৫ সালের ভারতের জনগণনা: ডিজিটাল পদ্ধতিতে শুরু
সর্বশেষ আপডেট: 16-06-2025

দীর্ঘ এক দশকের ব্যবধানের পর ভারতে ২০২৫ সালের জনগণনার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে চলেছে। আজ, সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এর আনুষ্ঠানিক নোটিফিকেশন জারি করা হবে।

নয়াদিল্লি: এক দশকেরও বেশি অপেক্ষার পর ভারতে ২০২৫ সালের জনগণনার সূচনা হতে চলেছে। ১৬ জুন, ২০২৫ কেন্দ্রীয় সরকার এক অধিসূচনা জারি করবে, যা দেশের সবচেয়ে বড় জনসংখ্যার প্রক্রিয়াটির পথ সুগম করবে। গৃহ মন্ত্রণালয় এর প্রস্তুতির চূড়ান্ত রূপ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার গৃহসচিব গোবিন্দ মোহন, রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং সেন্সাস কমিশনারসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে এক পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন, যেখানে জনগণনার সম্পূর্ণ পরিকাঠামো এবং ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের পর্যালোচনা করা হয়েছে।

দুটি পর্যায়ে হবে জনগণনা

এইবারের জনগণনা সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল ফরম্যাটে করা হবে। সরকার স্পষ্ট করেছে যে এর জন্য একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ডোর-টু-ডোর সমীক্ষা এখন ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনের মাধ্যমে করা হবে। জনগণনা দুটি প্রধান পর্যায়ে সম্পন্ন হবে:

  • প্রথম পর্যায় - গৃহ তালিকাভুক্তি (House Listing Operation): এতে দেশের প্রতিটি বাড়ির পরিদর্শন করে তার অবস্থা, সুবিধা (যেমন - শৌচালয়, বিদ্যুৎ, পানি), মালিকানার অবস্থা এবং নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এতে দেশের মৌলিক অবকাঠামোর অবস্থার মূল্যায়ন করা যাবে।
  • দ্বিতীয় পর্যায় - জনসংখ্যা গণনা (Population Enumeration): এই পর্যায়ে বাড়িতে থাকা প্রতিটি ব্যক্তির সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, ভাষাগত, ধর্মীয় এবং জাতিগত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এটাই সেই পর্যায় যেখানে নাগরিকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনসংখ্যার তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

৩৪ লক্ষ ফিল্ড ওয়ার্কার এবং ১.৩ লক্ষ কর্মকর্তা নিয়োজিত হবেন

গৃহ মন্ত্রণালয়ের মতে, এই জনগণনা প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পাদন করার জন্য ৩৪ লক্ষ ফিল্ড ওয়ার্কার এবং সুপারভাইজার নিয়োজিত করা হবে। এই ব্যক্তিরা গ্রাম, শহর ও নগরে ঘরে ঘরে গিয়ে সমীক্ষা করবেন। এছাড়াও ১.৩ লক্ষ জনগণনা কর্মকর্তা এই প্রক্রিয়ার তদারকি এবং তথ্য যাচাইয়ের কাজ করবেন।

  • নীতি আয়োগ এবং ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তথ্য সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
  • তথ্য এনক্রিপশন করা হবে যাতে কোনো পর্যায়েই ফাঁসের সম্ভাবনা না থাকে।
  • সমীক্ষার সময় সংগ্রহকৃত তথ্য ক্লাউড সার্ভারে সংরক্ষণ করা হবে যা কেবলমাত্র অনুমোদিত কর্মকর্তারা অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
  • এইবার নাগরিকদের স্ব-গণনা (Self Enumeration) এর বিকল্পও দেওয়া হবে। এর জন্য সরকার একটি জনগণনা পোর্টাল চালু করবে, যেখানে লোকেরা নিজেরা গিয়ে নিজেদের এবং পরিবারের বিবরণ দাখিল করতে পারবেন।

জাতিভিত্তিক তথ্য প্রথমবার ডিজিটালভাবে

জনগণনা ২০২৫-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এতে জাতি সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। যদিও এর আগে ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে শেষবার এ ধরণের ব্যাপক জাতিগত গণনা হয়েছিল। এটি প্রথমবার হবে যখন ডিজিটাল মাধ্যমে জাতিগত তথ্য সংগ্রহ করা হবে, যা নীতি নির্মাণে সামাজিক ভারসাম্য এবং সম্পদের ন্যায্য বণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

উল্লেখযোগ্য যে, এটি স্বাধীন ভারতের অষ্টম জাতীয় জনগণনা এবং মোট মিলে দেশের ষোড়শ জনগণনা। ভারতে জনগণনার সূচনা ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ আমলে হয়েছিল, কিন্তু নিয়মিতভাবে ১৮৮১ সাল থেকে প্রতি ১০ বছর অন্তর একবার করে করা হতো। কোভিড মহামারীর কারণে ২০২১ সালের জনগণনা স্থগিত করা হয়েছিল, যা এখন ২০২৫ সালে হতে চলেছে।

Leave a comment