শৈখ চলীর ক্ষতির গল্প

🎧 Listen in Audio
0:00

শৈখ চলীর ক্ষতির গল্প

একদিন শৈখ চলী বাড়িতে বসে বিশ্রাম করছিল। তখন তার মা বলল, "বেটা, তুমি এখন বড় হয়ে গেছ। এখন তোমাকেও কিছু কাজ করে ঘরের খরচে সাহায্য করতে হবে।" মা-এর কথা শুনে শৈখ চলী বলল, "মা, আমি কোন কাজ করবো? আমার তো কোনো হাতের কাজ নেই যেখান থেকে আমি টাকা উপার্জন করতে পারি।" এরপর মা বলল, "কারণ, তোমার বাবা বয়স্ক হয়ে গেছেন, তাই তিনি এখন ঠিকমত কাজ করতে পারছেন না। তাই, কিছু না কিছু কাজ করতে হবে।" মায়ের এই কথা শুনে শৈখ চলী বলল, "তাহলে আমি চেষ্টা করবো, কিন্তু এর আগে আমাকে কিছু খাবার দাও, আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।" শৈখ চলীর এই কথা শুনে মা বলল, "ঠিক আছে, বেটা, আমি তোমার জন্য কিছু খাবার বানিয়ে দিচ্ছি।"

শৈখ চলী খাবার খেয়ে কাজের খোঁজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তার মনে একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমাকে কে কাজ দেবে? আমি কি কাজ করতে পারবো? এই ভেবেই সে রাস্তায় চলছিল যে, হঠাৎ করে তার চোখ পড়ল রাস্তায় যাওয়া একজন সাশোকারের উপর। সাশোকার তার মাথায় তেলের একটি হাঁড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। সে খুব ক্লান্ত ছিল। তাই তাকে হাঁটাচলা করতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। সাশোকার শৈখ চলীকে দেখে তাকে বলল, "তুমি কি আমার জন্য এই হাঁড়িটা বহন করতে পারো? বদলে আমি তোমাকে অর্ধাণা দিবো।" এখন শৈখ চলী তো কাজের খোঁজে বেরিয়েছিল, তাই সে তাৎক্ষণিক হাঁড়ি বহন করতে রাজি হয়ে গেল। হাঁড়ি তুলে নেয়ার পর সাশোকার বলল, "তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে, হাঁড়ি থেকে তেল না গড়ে পড়ে। তুমি যখন এটা আমার বাড়ির কাছে পৌঁছে দাও, তখনই আমি তোমাকে অর্ধাণা দেবো।"

সমঝোতা স্থাপিত হওয়ার পর শৈখ চলী হাঁড়িটা মাথায় রেখে সাশোকারের সাথে হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে শৈখ চলী তার ভাবনার জগতে হারিয়ে গেল। সে ভাবতে লাগল, হাঁড়িটা সাশোকারের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পর আমাকে অর্ধাণা পাওয়া যাবে। এই অর্ধাণা দিয়ে আমি একটি মুরগির বাচ্চা কিনবো। সেই মুরগির বাচ্চা বড় হলে মুরগী হবে। তারপর সেই মুরগী ডিম দেবে। এই ডিমগুলো থেকে অনেক মুরগী পাওয়া যাবে। আরো বেশি মুরগী থাকলে আরো বেশি ডিম পাওয়া যাবে, যা সে বিক্রি করে ভালো টাকা উপার্জন করতে পারবে। যখন ভালো টাকা হয়ে যাবে, তখন সে সেই টাকা দিয়ে গরু কিনবে এবং একটি সুন্দর গরু-ফার্ম করবে। এরপর সে ডিম ও দুধের ব্যবসা করবে এবং যখন তার ব্যবসা ঠিকঠাক চলবে, তখন সে ধনী হয়ে যাবে।

শৈখ চলীর স্বপ্ন এখানেই শেষ হয়নি। সে আরও ভাবল, যখন সে ধনী হয়ে যাবে, তখন তার জন্য একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আসবে। তারপর সে কোনো সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবে। বিয়ে করার পর তার কাছে এক ডজন ছেলে-মেয়ে হবে। সবাই তার উপর গর্ব করবে। এখন ছেলে-মেয়ে বেশি হবে, তাহলে কখনো কারো সাথে ঝগড়া হলে, তারা মারামারি করে আসবে না, বরং অন্যদের মারবে। তারপর সে তার পাশের প্রতিবেশীর আটজন ছেলে-মেয়ের কথা মনে পড়ল, যারা সবসময় একে অপরের সাথে ঝগড়া করত। এই ভেবে সে ভাবতে লাগল, এখন তার এক ডজন ছেলে-মেয়ে হলে তারাও একে অপরের সাথে ঝগড়া করবে এবং তাদের সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসবে। এখন প্রতিদিন তাদের অভিযোগে আমি বিরক্ত হয়ে পড়ব। বিরক্ত হয়ে পড়লে, আমার মেজাজ খারাপ হবে। মেজাজ খারাপ হলে, রাগ প্রকাশ করতে হবে।

এই চিন্তার সাথে সে স্বপ্ন দেখল তার ছেলে-মেয়েরা একে অপরের সাথে ঝগড়া করে তার কাছে সমস্যার কথা নিয়ে আসে এবং সে তার বিলাসবহুল ঘরে নরম বিছানায় বসে। ছেলে-মেয়েদের গোলমাল ও অভিযোগে শৈখ চলী রাগান্বিত হয় এবং চিৎকার করে বলে, 'ধৎ!' এখন শৈখ চলী তার স্বপ্নে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে, সে তার মাথায় তেল ভর্তি সাশোকারের হাঁড়িটা ধরে রেখেছে তাও মনে রাখেনি। সে স্বপ্ন দেখে এতটা উত্তেজিত হলো যে, ছেলে-মেয়েদের গালি দিতে দিতে তার পা রাস্তায় পড়া একটি বড় পাথরের সাথে ধাক্কা খায়। ফলে তেল ভর্তি হাঁড়ি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায় এবং সব তেল মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে। হাঁড়ি ভাঙার কারণে সাশোকার খুব রাগান্বিত হয় এবং শৈখ চলীকে প্রচণ্ড মারধর করে। শৈখ চলীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

এই গল্প থেকে শিক্ষা হলো – শুধু স্বপ্ন দেখে কিছু পাওয়া যায় না, এর জন্য বাস্তব জীবনে পরিশ্রম করতে হয়।

```

Leave a comment