উপস্থাপিত, বিখ্যাত এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প, কাক ও পেঁচা
অনেক দিন আগে, এক গভীর জঙ্গলে পাখিদের সভা বসত। পশুরা তাদের সমস্যা রাজার কাছে জানাতো এবং রাজা তার সমাধান করতেন, কিন্তু এমন একটি জঙ্গল ছিল, যার রাজা গরুড় কেবল ভগবান বিষ্ণুর ভক্তি তে মগ্ন থাকতেন। এতে অতিষ্ঠ হয়ে হাঁস, টিয়া, কোকিল ও পায়রার মতো অনেক পাখি মিলে একটি সাধারণ সভা ডাকে। সভায় সমস্ত পাখি এক সুরে বলে যে, আমাদের রাজা গরুড় আমাদের দিকে মনোযোগ দেন না, তখন ময়ূর বলে যে, আমাদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে বিষ্ণুলোকে যেতে হয়। সমস্ত প্রাণীর দুরবস্থা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের রাজার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ঠিক সেই সময় হুদহুদ পাখি একটি নতুন রাজা বানানোর প্রস্তাব দেয়। কোকিল কুহু কুহু এবং মোরগ কঁক কঁক শব্দ করে এর সমর্থন করে। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলা সভায়, অতিষ্ঠ পাখিরা একমত হয়ে নতুন রাজা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এখন রাজা নির্বাচনের জন্য প্রতিদিন সভা বসতে শুরু করে। অনেক দিন ধরে আলোচনা করার পর, সকলে একমত হয়ে পেঁচাকে রাজা নির্বাচন করে। নতুন রাজা নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথেই, সমস্ত পাখি পেঁচার রাজ্যাভিষেকের প্রস্তুতিতে লেগে যায়। সমস্ত তীর্থস্থান থেকে পবিত্র জল আনা হয় এবং রাজার সিংহাসনকে মুক্তো দিয়ে সাজানোর কাজ দ্রুত শুরু হয়। সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর, পেঁচার রাজ্যাভিষেকের দিন আসে। মুকুট, মালা সব জিনিস প্রস্তুত ছিল। টিয়াপাখিরা মন্ত্র পাঠ করছিল, তখনই দুটি টিয়াপাখি রাজ্যাভিষেকের আগে পেঁচাকে লক্ষ্মী মন্দিরে গিয়ে পূজা করতে বলে। পেঁচা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায় এবং দুটি টিয়ার সাথে পূজার জন্য উড়ে যায়। ঠিক সেই সময় এতসব প্রস্তুতি ও সজ্জা দেখে কাক সেখানে আসে। কাক জিজ্ঞাসা করে, ‘আরে! এতসব প্রস্তুতি কিসের জন্য, উৎসব কেন পালন করা হচ্ছে?’
তখন ময়ূর কাককে বলে ‘আমরা জঙ্গলের নতুন রাজা নির্বাচন করেছি। আজ তার রাজ্যাভিষেক হবে, সেই জন্য এই সব সাজসজ্জা করা হয়েছে।’ এত কথা শুনে, রাগে লাল হয়ে কাক বলে ‘এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাকে কেন ডাকা হয়নি। আমিও তো একটা পাখি।’ এর উত্তরে ময়ূর সঙ্গে সঙ্গে বলে ‘এই সিদ্ধান্ত জঙ্গলের পাখিদের সভায় নেওয়া হয়েছিল। এখন তুমি তো অনেক দূরে মানুষের শহর ও গ্রামে গিয়ে বসবাস করছ।’ রেগে গিয়ে কালো কাক জিজ্ঞাসা করে ‘কাকে তোমরা রাজা নির্বাচন করেছ?’, তখন ময়ূর জানায় পেঁচার নাম। এটা শুনে কাক আরও রেগে যায়। সে নিজের মাথা জোরে জোরে ঠুকে কা-কা করতে থাকে। ময়ূর জিজ্ঞাসা করে ‘আরে! তোমার কি হয়েছে?’ কাক বলে ‘তোমরা সবাই খুব বোকা। পেঁচাকে রাজা নির্বাচন করেছ, যে সারাদিন ঘুমায় এবং যে কেবল রাতে দেখতে পায়। তোমরা কার কাছে নিজেদের সমস্যা নিয়ে যাবে? এত সুন্দর ও বুদ্ধিমান পাখি থাকতেও, অলস ও কাপুরুষ পেঁচাকে নিজেদের রাজা নির্বাচন করতে তোমাদের লজ্জা হওয়া উচিত।’
ধীরে ধীরে কাকের কথা পাখিদের মনে ধরল। সবাই নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলতে লাগল। তাদের মনে হতে লাগল যে, তাদের অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। এই কারণে দেখতে দেখতে, সমস্ত পাখি সেখান থেকে উধাও হয়ে যায়। রাজ্যাভিষেকের জন্য সাজানো জায়গা পুরো ফাঁকা হয়ে যায়। যখন পেঁচা ও দুটি টিয়া ফিরে আসে, তখন তারা জায়গাটিকে ফাঁকা দেখতে পায়। এটা দেখে তারা তাদের সঙ্গীদের খুঁজতে এবং সেখান থেকে চলে যাওয়ার কারণ জানতে উড়ে যায়। অন্যদিকে, পেঁচা তো কিছু দেখতে পাচ্ছিল না, তাই সে কিছুই জানতে পারেনি এবং রাজ্যাভিষেকের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে, কিন্তু চারদিকে শান্তি দেখে তার সন্দেহ হয়। পেঁচা জোরে চিৎকার করে বলে, ‘সবাই কোথায় গেলে?’ তখন গাছের উপরে বসে থাকা পেঁচার এক বন্ধু বলে, ‘সবাই চলে গেছে। আর তোমার রাজ্যাভিষেক হবে না। তুমি আর জঙ্গলের পাখিদের রাজা হবে না।’ এত কথা শুনে পেঁচা চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করে ‘কেন? এমন কি হয়েছে?’ পেঁচার বন্ধু জানায়, ‘একটি কাক এসেছিল এবং সে সবাইকে ভুল বুঝিয়ে চলে গেছে। আর সেই কাক এখানেই আছে।’
এই কথা শুনে, পেঁচার রাজা হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। দুঃখিত পেঁচা কাককে বলে, ‘তুই আমার সাথে এমন কেন করলি?’, কিন্তু কাক কোনো উত্তর দেয় না। এর পরেই পেঁচা ঘোষণা করে, ‘আজ থেকে কাক আমার শত্রু। আজ থেকে সমস্ত কাক, পেঁচার শত্রু হবে এবং এই শত্রুতা কখনো শেষ হবে না।’ এত কথা বলে পেঁচা উড়ে যায়। পেঁচার হুমকি শুনে কাক খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং কিছুক্ষণ ধরে ভাবতে থাকে। এই সময় তার মনে হয় যে, সে অযথাই পেঁচার সাথে শত্রুতা করেছে। তার খুব অনুশোচনা হয়, কিন্তু এখন সে আর কিছুই করতে পারত না, কারণ পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এই চিন্তায় কাক সেখান থেকে উড়ে যায়। সেই থেকে পেঁচা ও কাকের মধ্যে শত্রুতা চলে আসছে। তাই, সুযোগ পেলেই পেঁচা, কাকদের মারে এবং কাক, পেঁচাদের মারে।
এই গল্প থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে - অন্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে তার ফল খারাপ হতে পারে। অন্যের কাজে বাধা দেওয়ার অভ্যাস, সারা জীবনের শত্রুতা ডেকে আনতে পারে। তাই, নিজের কাজে মন দেওয়া উচিত।
আমাদের প্রচেষ্টা হল, এই ভাবেই আমরা আপনাদের সকলের জন্য ভারতের অমূল্য ধন, যা সাহিত্য, শিল্পকলা ও গল্পে বিদ্যমান, সেগুলোকে সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। এই ধরনের প্রেরণাদায়ক গল্প - কাহিনীর জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com