বর্ষার মৌসুম আসন্ন ছিল, এবং আকাশে মেঘ জমাট বাঁধছিল। বাতাসে আর্দ্রতা বাড়তে শুরু হয়েছিল, এবং একটি ছোট্ট পাখি তার বাচ্চাদের সাথে নদীর কিনারে নিরাপদ স্থানের সন্ধানে ছিল। সে তাড়াতাড়ি গাছের দিকে এগিয়ে গেল, যাতে বৃষ্টির আগে তার বাচ্চাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে পারে। গাছের মাঝে দুটো বড় গাছ দাঁড়ানো ছিল, যার মধ্যে একটি তাকে সাহায্য করতে পারত, কিন্তু সেই গাছটি কি পাখিটিকে সাহায্য করবে?
প্রথম গাছ এবং তার অস্বীকার
পাখিটি প্রথমে গাছটিকে নম্রভাবে জিজ্ঞেস করল, "ওহে গাছ, বৃষ্টির মৌসুম আসছে। আমার ছোট ছোট বাচ্চা আছে, আমি কি তোমার ডালে আমার বাসা বানাতে পারি?"
প্রথম গাছটি রুক্ষভাবে উত্তর দিল, "না, এখানে জায়গা নেই। তুমি অন্য কোথাও যাও। আমি কাউকে আমার কাছে আসতে দিই না।"
পাখিটি এটি শুনে খুব খারাপ বোধ করল। সে ভাবল, "কত অহংকারী গাছ, যে কারও সাহায্য করে না।" এবং সে সেখান থেকে চলে গেল, ভাবতে ভাবতে কী কারণ হতে পারে, যে এই গাছটি তাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করল।
দ্বিতীয় গাছ এবং তার দয়ালুতা
তারপর পাখিটি দ্বিতীয় গাছের কাছে গেল এবং একই কথা বলল। দ্বিতীয় গাছটি দয়ালুভাবে উত্তর দিল, "এসো, তোমার জায়গা করে নাও। এখানে তোমার জন্য নিরাপদ জায়গা আছে।" পাখিটি খুশি মনে সেই গাছের ডালে তার বাসা বানাল, এবং আশা ছিল যে তার সাহায্যে বৃষ্টির মৌসুম ভালোভাবে কাটবে।
বৃষ্টির কহর
কয়েকদিন পরে, যখন বৃষ্টির মৌসুম পুরোপুরি এসে গেল, তখন প্রবল বৃষ্টি এবং বাতাসের ঝাপটা গাছগুলোকে নাড়িয়ে দিচ্ছিল। যে গাছটি পাখিটিকে না করেছিল, সেটি দুর্বল শিকড়ের কারণে প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে নদীতে পড়ে গেল। পাখিটি এটা দেখে নিজেকে বলল, "এটা সেই গাছ, যে আমাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছিল। দেখো, ভগবান একে এর শাস্তি দিলেন।"
গাছের শেষ মুহূর্তে নম্রতা
যখন প্রথম গাছটির পতন হয়ে গেল, তখন সে তার শেষ মুহূর্তে শান্ত ভাবে পাখিটিকে বলল, "হে পাখি, আমার কথা শোনো। আমি তোমাকে আশ্রয় দিতে এইজন্য মানা করেছিলাম কারণ আমি জানতাম যে আমার শিকড়গুলো দুর্বল। যদি তুমি এখানে তোমার বাসা বানাতে, তাহলে তুমি এবং তোমার বাচ্চারা বিপদে পড়তে পারতে। আমি তোমার নিরাপত্তার জন্যই অস্বীকার করেছিলাম। আমাকে ক্ষমা করো।"
এটি শুনে পাখিটি চুপ হয়ে গেল এবং তার চোখে জল এসে গেল। সে অনুভব করল যে কখনো কখনো আমরা অন্যদের অস্বীকারকে ভুল বুঝি, কিন্তু সব বার অস্বীকারের মানে খারাপ নয়। হয়তো তাদের কোনো কারণ থাকে, যা আমরা জানি না। এই ঘটনাটি পাখিটিকে শিখিয়েছিল যে কারও আচরণের পেছনের কারণ বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে
প্রত্যেক অস্বীকারের মানে খারাপ নয়। কখনো কখনো মানুষ আমাদেরকে যা বলে, তা আমাদের ভালোর জন্যই হয়। আমাদের সব পরিস্থিতি বোঝার এবং অন্যদের অনুভূতিকে চেনার চেষ্টা করা উচিত। এর পাশাপাশি, আমাদের অহংকার এবং গর্ব থেকে দূরে থাকা উচিত, কারণ জীবনে নম্রতাই সবচেয়ে বড় গুণ।
কখনো কখনো আমরা কারও অস্বীকারকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে থাকি, কিন্তু যদি আমরা পরিস্থিতিটিকে সঠিক দৃষ্টিতে দেখি, তাহলে আমরা বুঝতে পারব যে সেই অস্বীকার আমাদের ভালোর জন্য ছিল। আমাদের এটা বোঝার প্রয়োজন আছে যে মানুষ প্রায়শই আমাদের ভালোর জন্যই কোনো কিছু থেকে অস্বীকার করে।
```