ইঁদুরের স্বপ্ন: জঙ্গলকে বাঁচিয়ে সে কিভাবে হিরো হলো

🎧 Listen in Audio
0:00

জঙ্গলের এক ঘন কোণে, বাঁশের ঝাড়ের মাঝে একটি ছোট ঘর ছিল, যা ছিল ইঁদুর রানী-র। এই ঘরটি শুধু তার ছোট জগৎ ছিল না, বরং তার বড় আকাঙ্ক্ষারও প্রতীক ছিল। ইঁদুর রানী, যে সবসময় তার দুষ্টুমি আর মিষ্টি কার্যকলাপের জন্য পরিচিত ছিল, সে সারাদিন জঙ্গলে লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে বেড়াত। কিন্তু সে সবসময় একটি স্বপ্ন নিয়ে বাঁচত, যা তাকে চুপচাপ অস্থির করত।

ইঁদুরের স্বপ্ন ছিল যে, সেও জঙ্গলের অন্যান্য বড় প্রাণীদের মতো সম্মান পাবে। তার মনে হত, তার ছোট আকার আর গঠন তাকে বাকি সব প্রাণীদের থেকে আলাদা করে, কিন্তু সে এটাও জানত যে, একদিন সেও তার ছোট আকারকে একটি বড় শক্তিতে পরিবর্তন করতে পারবে।

স্বপ্ন দেখা ইঁদুর

একদিন ইঁদুর তার প্রিয় বন্ধু কাঠবিড়ালীর কাছে তার মনের কথা বলল।

ইঁদুর: "গিলি, কখনও কি তোমার মনে হয় যে আমি শুধু ছোট, তাই কেউ আমাকে গুরুত্ব দেয় না?"

কাঠবিড়ালী: "আরে, তুমি এমন কেন ভাবছ? তুমি তো খুব চালাক আর মিষ্টি, আর তোমার মনটাও অনেক বড়!"

ইঁদুর একটু দুঃখিত হয়ে বলল,

ইঁদুর: "জানো, আমি স্বপ্ন দেখি যে একদিন আমি জঙ্গলের সবচেয়ে বিশেষ প্রাণী হয়ে যাব, আর সবাই আমাকে সালাম করবে।"

কাঠবিড়ালী হেসে বলল, "তুমি নিশ্চয়ই তোমার স্বপ্ন পূরণ করবে, শুধু সাহস আর বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ কর।"

জঙ্গলে হৈচৈ

পরের দিন জঙ্গলে একটি বড় সমস্যা দেখা দিল। জঙ্গলের পুকুরে একটি বড় কুমির এসেছিলো, যা বাকি পশুদের ভয় দেখাচ্ছিল। খরগোশ, বাঁদর আর হরিণের মতো সব ছোট প্রাণী পুকুরের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু এখন জঙ্গলকে বাঁচানোর দায়িত্ব ছিল সব পশুর ওপর।

সব পশু জঙ্গলের রাজা সিংহের কাছে গেল এবং সাহায্যের জন্য অনুরোধ করল।

সিংহ: "আমাদের কুমিরটিকে পুকুর থেকে বের করার জন্য একটি পরিকল্পনা করতে হবে।"

হাতি: "আমরা তাকে আমাদের শক্তি দিয়ে পরাজিত করব!"

শিয়াল: "না, আমাদের তার চালাকির সাথে মোকাবিলা করতে হবে।"

কিন্তু কোনো পশু কুমিরের সাথে মোকাবিলা করার সঠিক উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না। জঙ্গলে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করল, আর সমস্যার কোনো সমাধান ছিল না।

ইঁদুরের বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ

সব পশুর কথাবার্তা শোনার পর, ইঁদুর তার ছোট কন্ঠে বলল,

ইঁদুর: "আমি কি কিছু বলতে পারি?"

সব পশু অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল, আর তারপর সিংহ বলল,

সিংহ: "বলো, ইঁদুর, তোমার কাছে কি পরিকল্পনা আছে?"

ইঁদুর বলল,

ইঁদুর: "কুমির শক্তিশালী হলেও, সে খুব লোভী। আমরা যদি তাকে লোভ দেখিয়ে পুকুর থেকে বাইরে আনার চেষ্টা করি, তাহলে সে সহজেই ধরা পরে যাবে।"

সব পশু এই পরিকল্পনায় রাজি হয়ে গেল, আর তারা পুকুরের কাছে একটি বড় মাংসের টুকরো রাখল। সব পশু লুকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল, আর যেই কুমিরটি লোভের বশে খাবারটি ধরতে এল, জঙ্গলের পশুরা তাকে জালে আটকে ফেলল।

ইঁদুর হল জঙ্গলের হিরো

ইঁদুরের এই বুদ্ধিমত্তায় পুরো জঙ্গল খুশি হয়ে গেল। এখন জঙ্গলের সব পশু তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে দেখত।

সিংহ: "তুমি প্রমাণ করে দিলে যে ছোট আকার আর শক্তি কোনো ব্যাপার না, বরং বুদ্ধিমত্তা আর সাহস সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ থেকে তুমি আমাদের 'জঙ্গল মন্ত্রী'।"

ইঁদুরের মন আনন্দে ভরে উঠল। সে তার বন্ধু কাঠবিড়ালীকে বলল,

ইঁদুর: "দেখেছ, গিলি, আমার স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেছে! এখন আমিও সম্মান পেলাম!"

এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে,

 কখনও নিজের আকার বা ক্ষমতাকে ছোট করে দেখা উচিত না। সবার মধ্যেই নিজের শক্তি থাকে, আর সেই শক্তি বুদ্ধিমত্তা, সাহস আর ইচ্ছাশক্তির দ্বারা আরও বেশি কার্যকরী হতে পারে। ছোট হওয়া কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটা আমাদের আলাদাভাবে ভাবতে এবং সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে।

ইঁদুর প্রমাণ করল যে, শুধু শারীরিক শক্তি দিয়ে নয়, বরং সঠিক চিন্তা আর বুদ্ধিমত্তা দিয়েও বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

Leave a comment