এই গল্পটি দগড়ু নামে এক ছেলের, যে তার ভবিষ্যৎদর্শী দুঃস্বপ্নের কারণে গ্রামে অবহেলিত ও অবজ্ঞার পাত্র ছিল। যখন সে তার স্বপ্নের মাধ্যমে রাজাদের প্রাণ রক্ষা করেছিল, তবুও তার দায়িত্ব পালনে ত্রুটির জন্য তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এই কাহিনী সত্য কথা বলা, দায়িত্ব পালন এবং ন্যায়বিচারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার শিক্ষা দেয়।
দগড়ু: স্বপ্নদ্রষ্টা ছেলে
চন্দনপুর গ্রামে এক বৃদ্ধা বিধবা তার ছেলে দগড়ুর সাথে থাকতেন। দগড়ু গোটা গ্রামের চোখে অলস ও অকর্মণ্য ছিল। কিন্তু তার একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ছিল—যে স্বপ্ন সে দেখত, তা সত্যি হত। দুর্ভাগ্যবশত তার স্বপ্নগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খারাপ ছিল—যেমন আগুন, লুটপাট, মৃত্যু। গ্রামবাসীরা তাকে ‘কালো জিভ’ বলে উপহাস করত, তার কথা কেউ শুনত না।
প্রথম স্বপ্ন: লুটপাটের ভয়াবহ দৃশ্য
এক রাতে দগড়ু দেখল যে এক কনে এবং বারাতিরা পথে ডাকাতদের আক্রমণের শিকার হবে। পরের দিন সকালে, কনে বিবাহের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে এই কথা সকলকে জানাল, কিন্তু কেউ বিশ্বাস করল না। তারপর ঠিক তাই ঘটল—বারাত ফিরে আসার সময় ডাকাতেরা আক্রমণ করল এবং পরিস্থিতি ঠিক দগড়ুর স্বপ্নের মতো ছিল।
গ্রামবাসীরা ভাবল দগড়ুই ডাকাতদের সাথে মিলেছে এবং তাকে সন্দেহের চোখে দেখে রাস্তার মাঝখানে মারধর করল। দগড়ুর কথা কেউ গুরুত্বের সাথে নিল না।
দ্বিতীয় স্বপ্ন: আগুনে জ্বলছে গৃহপ্রবেশ
কয়েকদিন পর দগড়ু আবার স্বপ্ন দেখল যে পাড়ার চৌধরাণীর নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশের দিন আগুন লাগবে। সে সকলকে সত্যি কথা জানাল। চৌধরাণী এই কথা মোটেও পছন্দ করল না। গৃহপ্রবেশের দিন নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও একটা ছোট্ট শিখা থেকে বাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
গ্রামবাসীরা আবার দগড়ুকে দোষী করে তাকে গ্রাম থেকে বহিষ্কার করল। তার জীবন দুঃখ ও অপমানে কেটে গেল।
নতুন রাজ্য, নতুন চাকরি এবং বড় স্বপ্ন
দগড়ু গ্রাম ছেড়ে অন্য রাজ্যে প্রাসাদের রাত্রি প্রহরীর চাকরি শুরু করল। একদিন সে স্বপ্ন দেখল যে রাজা সোনপুর ভ্রমণে যাচ্ছেন, যেখানে ভয়াবহ ভূমিকম্প হবে এবং সব ধ্বংস হয়ে যাবে।
স্বপ্নের কথা রাজাকে জানানো হল। রাজা তার ভ্রমণ বাতিল করে দিলেন। পরের দিন সকালে সোনপুরে ভূমিকম্পের ভয়াবহ সংবাদ এল। রাজা দগড়ুকে দরবারে ডেকে তার বীরত্বের প্রশংসা করলেন এবং সোনার হার দিয়ে পুরস্কৃত করলেন।
ন্যায় ও দায়িত্বের ভারসাম্য
কিন্তু রাজা দগড়ুকে চাকরি থেকেও বরখাস্ত করলেন কারণ সে কর্তব্য পালনের সময় ঘুমিয়ে পড়েছিল, যা তার দায়িত্ব পালনে ত্রুটি ছিল। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাজা দেখিয়ে দিলেন যে সম্মান ও দায়িত্ব উভয়ই জরুরি।
রাজা বিক্রম এই ন্যায়সঙ্গত উত্তরের মাধ্যমে প্রমাণ করলেন যে সত্য ও কর্তব্যের মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিত।
গল্প থেকে শিক্ষা
দগড়ুর গল্পটি শিক্ষা দেয় যে সত্য কথা বলা কখনও কখনও কঠিন হয়, কিন্তু যদি উদ্দেশ্য পবিত্র হয় এবং সাহস থাকে তাহলে সত্যের মূল্যও হয়। পাশাপাশি, নিজের দায়িত্ব পালন করাও জরুরি, তা যতই ছোটো মনে হোক না কেন। সত্য ও কর্তব্য উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যই সত্য ন্যায়বিচারের ভিত্তি।
আপনারও কি কখনও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে যখন সত্য কথা বলা আপনাকে বিপদে ফেলে দিয়েছে? আপনার মতামত শেয়ার করুন এবং সত্যের সাথে দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব বুঝতে পারুন।