তেনালি রামের গল্প : অপরাধী ছাগল | Subkuz.com

🎧 Listen in Audio
0:00

তেনালি রামের গল্প : অপরাধী ছাগল। বিখ্যাত অমূল্য গল্প Subkuz.Com-এ!

উপস্থাপিত, বিখ্যাত এবং অনুপ্রেরণাদায়ক তেনালি রামের গল্প: অপরাধী ছাগল

প্রতিদিনের মতো রাজা কৃষ্ণদেব রায় তাঁর রাজসভায় বসে ছিলেন। তখনই এক রাখাল তার অভিযোগ নিয়ে সেখানে এসে পৌঁছায়। রাখালকে দেখে রাজা কৃষ্ণদেব তার রাজসভায় আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন রাখাল বলল, ‘মহারাজ, আমার সঙ্গে বড় অন্যায় হয়েছে। আমার বাড়ির কাছে থাকা এক লোকের বাড়ির দেয়াল ভেঙে পড়ে, আর তার নিচে চাপা পড়ে আমার ছাগলটি মারা গেছে। এরপর আমি যখন তার কাছে আমার মরা ছাগলের ক্ষতিপূরণ চাইলাম, তখন সে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করছে।’ রাখালের কথা শুনে মহারাজ কিছু বলার আগেই তেনালিরাম নিজের জায়গা থেকে উঠে বলল, ‘নিশ্চয়ই মহারাজ, দেয়াল ভেঙে পড়ার কারণে ছাগলটি মারা গেছে, কিন্তু এর জন্য শুধুমাত্র ওই প্রতিবেশীকে দোষী বলা যায় না।’

রাজার সঙ্গে সভায় উপস্থিত সকল মন্ত্রী ও সভাসদ তেনালিরামের এই কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন। রাজা তেনালিরামকে সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাহলে তোমার মতে আর কে দেওয়াল ভাঙার জন্য অপরাধী?’ এর উত্তরে তেনালিরাম বলল, ‘সেটা আমি জানি না, তবে আপনি যদি আমাকে একটু সময় দেন, তাহলে আমি এর পেছনের সত্যি খুঁজে বের করে আপনার সামনে নিয়ে আসব।’ রাজার তেনালিরামের প্রস্তাব ভালো লাগল। তিনি তেনালিরামকে আসল অপরাধীকে খুঁজে বের করার জন্য সময় দিলেন। রাজার আদেশ পেয়ে তেনালিরাম রাখালের প্রতিবেশীকে ডাকালেন এবং মরা ছাগলের বদলে কিছু টাকা রাখালকে দিতে বললেন। এতে রাখালের প্রতিবেশী হাত জোড় করে বলল, ‘আমি এর জন্য দায়ী নই। ওই দেওয়াল বানানোর কাজ তো মিস্ত্রি করেছিল। তাই আসল অপরাধী তো সে।’

রাখালের প্রতিবেশীর এই কথা তেনালিরামের সঠিক মনে হল। তাই তেনালিরাম সেই মিস্ত্রিকে ডাকালেন, যে দেওয়ালটি বানিয়েছিল। মিস্ত্রিও সেখানে এসে পৌঁছাল, কিন্তু সেও নিজের দোষ স্বীকার করল না। মিস্ত্রি বলল, ‘আমাকে শুধু শুধু দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। আসল দোষী তো সেই শ্রমিকেরা, যারা মশলায় বেশি জল মিশিয়ে মশলা খারাপ করে দিয়েছে, যার কারণে দেওয়াল মজবুত হয়নি আর ভেঙে পড়েছে।’ মিস্ত্রির কথা শুনে শ্রমিকদের ডাকার জন্য সৈন্যদের পাঠানো হল। সেখানে পৌঁছে শ্রমিকেরা যখন পুরো ঘটনা জানতে পারল, তখন তারা বলল, ‘এর জন্য আমরা দোষী নই, বরং সেই ব্যক্তি দোষী, যে মশলায় বেশি জল মিশিয়েছিল।’

এরপর মশলায় বেশি জল মেশানো লোকটিকেও রাজার দরবারে আসার বার্তা পাঠানো হল। জল মেশানো লোকটি দরবারে এসে বলল, ‘যে লোকটি মশলায় জল মেশানোর জন্য আমাকে পাত্র দিয়েছিল, আসল দোষ তার। পাত্রটি অনেক বড় ছিল। এই কারণে জলের আন্দাজ করা যায়নি আর মশলায় বেশি জল পড়ে গিয়েছিল।’ তেনালিরামের জিজ্ঞাসা করার পর মশলায় বেশি জল মেশানো লোকটি বলল, ‘সেই বড় পাত্রটি তাকে রাখালই দিয়েছিল। তার কারণেই মিশ্রণে বেশি জল পড়ে গিয়েছিল এবং দেওয়াল দুর্বল হয়েছিল।’ তারপর তেনালিরাম রাখালের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এতে দোষ তোমারই। তোমার কারণেই ছাগলটির প্রাণ গেছে।’ যখন কথা ঘুরে রাখালের ওপর এসে পড়ল, তখন সে আর কিছু বলতে পারল না এবং চুপচাপ নিজের বাড়ির দিকে চলে গেল। অন্যদিকে সভায় উপস্থিত সকল সভাসদ তেনালিরামের বুদ্ধিমত্তা ও বিচারের প্রশংসা করতে লাগলেন।

এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে - নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনার জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা সঠিক নয়। এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে সমস্যার সমাধান করা উচিত।

বন্ধুরা, subkuz.com এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আমরা ভারত এবং বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের গল্প ও তথ্য সরবরাহ করে থাকি। আমাদের প্রচেষ্টা হল, এইভাবেই আকর্ষণীয় এবং প্রেরণামূলক গল্পগুলি সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ধরনের প্রেরণাদায়ক গল্প-কাহিনিগুলির জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com

 

```

Leave a comment