পাহেলগাম আক্রমণের পর ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর মাধ্যমে পাকিস্তানকে ব্যাপক ক্ষতি করেছে, যা সুরক্ষা বাহিনীর শক্তিশালী পদক্ষেপের ইঙ্গিত বহন করে। তবে, এই অপারেশনটি ড্রোন আক্রমণ মোকাবেলায় বিদ্যমান দুর্বলতাগুলিকেও উন্মোচন করেছে।
নয়াদিল্লি: ভারত কর্তৃক পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে পরিচালিত ‘অপারেশন সিন্দুর’ আবারও দেশের সামরিক ক্ষমতা ও শক্তির পরিচয় দিয়েছে। এই সফল অপারেশনে ভারত কেবল পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) -এর বহু সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করেনি, বরং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে পাকিস্তানি বিমান ঘাঁটিগুলিকেও ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
কিন্তু এই অপারেশনটি একটি নতুন চ্যালেঞ্জেরও সামনে রেখেছে: আকাশ সুরক্ষায় ড্রোন আক্রমণের বর্ধমান আশঙ্কা। এটাই কারণ যে, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এখন C-RAM (C-RAM) সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছেন, যা ড্রোন এবং অন্যান্য নিম্ন উচ্চতা বিমানজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সহায়ক হবে।
অপারেশন সিন্দুর: সাফল্যের সাথে সুরক্ষার নতুন প্রশ্ন
৬ থেকে ৭ মে চলা অপারেশন সিন্দুরে পাকিস্তানের ৯টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। এর পর ভারত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানের ১১টি বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করেছে এবং সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এই সময় ব্রহ্মোস এবং আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান F-18 এবং J-17 ধ্বংস হয়েছে। তবে, এই মিশনে পাকিস্তান ড্রোন আক্রমণের আশ্রয় নিয়েছে, যা ভারতের আকাশ সুরক্ষার জন্য নতুন ঝুঁকি উন্মোচন করেছে।
পাকিস্তান চীন ও তুরস্কে তৈরি কয়েকশ ড্রোন ব্যবহার করে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণের চেষ্টা করেছে, যা থেকে বোঝা যায় যে ঐতিহ্যগত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই নিম্ন উচ্চতা ও ছোট আকারের বিমানজনিত ঝুঁকির বিরুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর নয়।
বর্তমান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা
ভারতের কাছে রাশিয়া থেকে ক্রয়কৃত S-400 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, যা বিশ্বের সেরা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে একটি হিসেবে গণ্য হয়। এছাড়াও, ভারতের কাছে নিজস্ব ‘আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুরক্ষা কবচ রয়েছে, যা অপারেশন সিন্দুরে ভালো কর্মক্ষমতা দেখিয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলি বড় ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান এবং রকেট ধ্বংস করতে সক্ষম।
কিন্তু, ড্রোন এবং নিম্ন উচ্চতা বিমানজনিত ঝুঁকির মুখে এই ব্যবস্থাগুলি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর নয়। বিশেষ করে ছোট ড্রোন, যা ভূমি পৃষ্ঠের কাছাকাছি উড়ে, ঐতিহ্যগত রাডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার জন্য ধরা পড়া কঠিন। ২০২১ সালে জম্মু এয়ারফোর্স স্টেশনে একটি পাকিস্তানি ড্রোন দ্বারা ফেলে দেওয়া IED-এর ঘটনা এর প্রমাণ, যা ভারতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় সুরক্ষা ফাঁক উন্মোচন করেছে।
C-RAM সিস্টেম: আকাশ সুরক্ষার নতুন কবচ
C-RAM-এর অর্থ ‘কাউন্টার-রকেট, আর্টিলারি অ্যান্ড মর্টার’ সিস্টেম। এই ব্যবস্থা বিশেষ করে নিম্ন উচ্চতা বিমানজনিত ঝুঁকি যেমন রকেট, কামানের গোলা, মর্টার এবং ড্রোন ধরতে এবং ধ্বংস করার জন্য উন্নত করা হয়েছে। আমেরিকার ফ্যালান্স (Phalanx) এবং ইসরায়েলের আয়রন ডোম (Iron Dome) এর মতো C-RAM সিস্টেম বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত।
ইসরায়েলের আয়রন ডোম, যা হামাসের রকেট আক্রমণকে বারবার সফলভাবে ব্যর্থ করেছে, এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এই ব্যবস্থা দ্রুতগতির ছোট ছোট ঝুঁকিগুলিকে রাডারের মাধ্যমে ধরে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের উপর গোলাবর্ষণ করে তাদের ভূমিতে ফেলে দেয়। ভারতের জন্য এই ধরণের ব্যবস্থার অত্যন্ত প্রয়োজন, বিশেষ করে সীমান্তের কাছে এবং সংবেদনশীল সামরিক ঘাঁটির সুরক্ষা শক্তিশালী করার জন্য। এটি কেবল ড্রোন আক্রমণ রোধ করবে না, অপ্রত্যাশিত আকাশগত ঝুঁকির মোকাবেলায়ও সহায়তা করবে।
ভারতে C-RAM সিস্টেমের সম্ভাবনা
ভারত বর্তমানে তার বিমান প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপারেশন সিন্দুরের ঘটনাগুলি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কেবল ঐতিহ্যগত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, C-RAM সিস্টেমের দ্রুত ক্রয় এবং উন্নয়ন প্রয়োজন। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংগঠন (DRDO)ও এই ধরণের সরঞ্জামের উপর কাজ করছে, যা ভারতীয় পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া হবে। এছাড়াও, ভারত আমেরিকা, ইসরায়েল এবং ইউরোপের দেশগুলির সাথে প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব করে এই ক্ষেত্রে ত্বরাণ্বিত করতে পারে।