একসাথে নির্বাচন: ৫,৩০০ কোটি টাকার EVM কেনা ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসাথে করার সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলে আসছে। এই প্রসঙ্গেই নির্বাচন কমিশনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, যদি ২০২৯ সালে দেশে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসাথে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের প্রয়োজন হবে।

One Nation One Election: ভারতে দীর্ঘদিন ধরে "এক দেশ, এক নির্বাচন" (One Nation, One Election) ধারণা নিয়ে আলোচনা চলে আসছে। এখন এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন (ECI)ও এর সাথে সম্পর্কিত প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন একটি সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে যে, যদি ২০২৯ সালে দেশে লোকসভা এবং সকল রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন একসাথে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে এর সাথে সম্পর্কিত ব্যয় এবং লজিস্টিক কতটা ব্যাপক হবে।

৫৩০০ কোটি টাকার ব্যয়, লক্ষ লক্ষ নতুন মেশিনের প্রয়োজন

নির্বাচন কমিশনের মতে, একসাথে নির্বাচন করার জন্য প্রায় ৪৮ লক্ষ ব্যালেটিং ইউনিট (BU), ৩৫ লক্ষ কন্ট্রোল ইউনিট (CU) এবং ৩৪ লক্ষ VVPAT মেশিনের প্রয়োজন হবে। এই মেশিনগুলি কেনার জন্য মোট ৫,৩০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধারণা করা হচ্ছে। এই ব্যয় শুধুমাত্র মেশিন কেনার, লজিস্টিকস, কর্মী, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপত্তার জন্য আলাদা বাজেটের প্রয়োজন হবে।

বর্তমানে কমিশনের কাছে প্রায় ৩০ লক্ষ ব্যালেটিং ইউনিট, ২২ লক্ষ কন্ট্রোল ইউনিট এবং ২৪ লক্ষ VVPAT রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে অনেকগুলি মেশিন ২০১৩-১৪ সালে কেনা হয়েছিল এবং ২০২৯ সালের মধ্যে এগুলির গড় ১৫ বছরের আয়ু শেষ হয়ে যাবে। এর ফলে প্রায় ৩.৫ লক্ষ BU এবং ১.২৫ লক্ষ CU অচল হয়ে যাবে, যা প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন।

তদুপরি, নির্বাচন কমিশনের ধারণা, ২০২৯ সালে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২০২৪ সালের তুলনায় ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০২৪ সালে মোট ১০.৫৩ লক্ষ ভোটকেন্দ্র ছিল এবং ২০২৯ সালে এটি বেড়ে প্রায় ১২.১ লক্ষ হতে পারে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে দুটি সেট EVM এর প্রয়োজন, এছাড়াও রিজার্ভ স্টক হিসাবে ৭০% BU, ২৫% CU এবং ৩৫% VVPAT আলাদাভাবে রাখা হয়।

মেশিন সরবরাহ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নও একটি চ্যালেঞ্জ

EVM এবং VVPAT মেশিন সরবরাহ নিজেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ও নির্বাচন কমিশনকে সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, যার ফলে মেশিন তৈরি ব্যাহত হয়েছিল। তাই কমিশন ২০২৯ সালের জন্য আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে এর স্টক প্রস্তুত রাখতে চায়।

এছাড়াও কমিশনকে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে EVM আপগ্রেড করা পড়তে পারে। বর্তমানে দেশে M3 সংস্করণের EVM ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু ভবিষ্যতে এর ক্ষমতা এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।

EVM-VVPAT রাখার জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত গুদাম

একসাথে নির্বাচন করার জন্য শুধুমাত্র মেশিন থাকলেই যথেষ্ট নয়, এগুলিকে নিরাপদে রাখার জন্য গুদামেরও প্রয়োজন হবে। বর্তমানে অনেক রাজ্য যেমন আন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, ওড়িশা এবং সিকিমের নিজস্ব স্থায়ী গুদাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রকে এই রাজ্যগুলির জন্য গুদাম নির্মাণেও বিনিয়োগ করতে হবে।

১২ লক্ষের বেশি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন করার জন্য কর্মীদের নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণও একটি বড় দায়িত্ব হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত কর্মীদের মেশিন পরিচালনার যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যার শুরু লোকসভা নির্বাচনের ছয় মাস আগে এবং বিধানসভা নির্বাচনের চার মাস আগে করা হয়।

এছাড়াও, মেশিনের প্রথম পরীক্ষার জন্য উৎপাদনকারী সংস্থার প্রকৌশলীদেরও নিয়োগ করতে হয়। নিরাপত্তার দিক থেকে গুদাম এবং ভোটকেন্দ্রের নজরদারির জন্য কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যবাহিনীর প্রচুর মোতায়েন প্রয়োজন হবে।

কি ব্যয় কমবে?

সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, একসাথে নির্বাচন করলে কি ব্যয় কমবে? নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, মেশিন কেনার জন্য এককালীন ব্যাপক ব্যয় হলেও, বারবার নির্বাচন করার তুলনায় লজিস্টিক এবং প্রশাসনিক ব্যয় দীর্ঘমেয়াদে কম হতে পারে। পাশাপাশি এটাও যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, এতে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং সুव्यवस्थित হতে পারে।

```

Leave a comment