১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ সালে ভারতীয় রেলওয়ে নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে প্রথমবারের জন্য কম্পিউটারাইজড টিকিট রিজার্ভেশন সিস্টেম চালু করে। এর আগে, টিকিট বুকিংয়ের পুরো প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল, যাতে অনেক সময় লাগত এবং এটি ছিল একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর আগে, পুরো টিকিট বুকিং প্রক্রিয়া ম্যানুয়াল ছিল, যাতে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হত এবং রিজার্ভেশনে অনেক সময় লাগত।
ম্যানুয়াল টিকিটিং সিস্টেমে রেলওয়ে কর্মীদের ট্রেনের খালি আসনের তথ্য রেজিস্টারে খুঁজতে হত, যার ফলে বুকিংয়ে কয়েক ঘন্টা বা কখনও কখনও দিনও লেগে যেত।
ম্যানুয়াল টিকিটিং সিস্টেমের চ্যালেঞ্জ
কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের আগে, ভারতীয় রেলওয়ে টিকিট বুকিং ছিল একটি কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। যাত্রীদের টিকিট পেতে অনেক ধাপ পার করতে হত, যার ফলে এই প্রক্রিয়াটি অগোছালো এবং ধীর হয়ে পড়ত।
* ফর্ম পূরণ – যাত্রীকে একটি ফর্ম পূরণ করতে হত, যাতে ভ্রমণের তারিখ, গন্তব্য (ডেস্টিনেশন), ট্রেন নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য লিখতে হত।
* আসনের উপলব্ধতা পরীক্ষা – রেলওয়ে ক্লার্ক হাতে লিখিত রেজিস্টারে আসনের উপলব্ধতা পরীক্ষা করত।
* অপেক্ষা এবং আবেদন প্রক্রিয়া – যদি আসন উপলব্ধ না থাকে, তাহলে যাত্রীকে পরবর্তী সম্ভাব্য তারিখের জন্য আবার আবেদন করতে হত।
* টিকিট জারি – যদি আসন উপলব্ধ থাকে, তাহলে যাত্রীকে কার্ডবোর্ড টিকিট দেওয়া হত, যাতে ট্রেন নম্বর এবং বার্থ ডিটেইলস লিখিত থাকত।
* দীর্ঘ লাইন এবং অতিরিক্ত সময় – যাত্রীদের টিকিট বুক করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে হত।
* রেজিস্টারে ভুল এবং ডেটার সমস্যা – কর্মীদের প্রতিটি ট্রেনের বুকিং ম্যানুয়ালি লিখতে হত, যার ফলে ত্রুটির সম্ভাবনা বেশি ছিল।
* আসনের তথ্য আপডেট করতে দেরি – আসনের উপলব্ধতা আপডেট করতে অনেক ঘন্টা লেগে যেত, যার ফলে যাত্রীরা সঠিক তথ্য পেত না।
* দালাল এবং দুর্নীতির সমস্যা – ম্যানুয়াল সিস্টেমে দালালদের ভূমিকা বেশি ছিল, যার ফলে টিকিটের ব্ল্যাক মার্কেটিং হত।
কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের সূচনা
১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ সালে নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে কম্পিউটারভিত্তিক টিকিট রিজার্ভেশন ব্যবস্থার সূচনা হয়, যা ভারতীয় রেলওয়ের টিকিটিং সিস্টেমকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দেয়।
* দ্রুততা এবং সুবিধা – এখন যাত্রীরা মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে টিকিট বুক করতে পারত, যার ফলে দীর্ঘ লাইনের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়।
* সঠিকতার উন্নতি – ম্যানুয়াল এন্ট্রির পরিবর্তে ডিজিটাল রেকর্ডের মাধ্যমে ভুলের সম্ভাবনা কমে যায়।
* আসন উপলব্ধতার রিয়েল-টাইম তথ্য – যাত্রীরা এখন অবিলম্বে জানতে পারত আসন উপলব্ধ কিনা।
* স্বচ্ছতার বৃদ্ধি – কম্পিউটারাইজড বুকিং দালাল এবং ব্ল্যাক মার্কেটিং কমিয়েছে।
ভারতীয় রেলওয়েতে ডিজিটাল যুগের সূচনা
১৯৮৬ সালে শুধুমাত্র নয়াদিল্লি স্টেশনে শুরু হওয়া এই সিস্টেমটি শীঘ্রই দেশের অন্যান্য প্রধান স্টেশনে ছড়িয়ে পড়ে। আজ, যাত্রীরা IRCTC ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই অনলাইনে টিকিট বুক করতে পারেন, যার ফলে এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল এবং সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে।
টেলিগ্রাম এবং ডাক সেবার ব্যবহার
কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের আগে, টিকিটিং প্রক্রিয়া ছিল বেশ জটিল। যদি যাত্রীর বুকিং স্টেশন এবং ট্রেনে উঠার স্টেশন আলাদা হয়, তাহলে রেলওয়ে টেলিগ্রামের মাধ্যমে বুকিং স্টেশন থেকে ভ্রমণের স্টেশনে তথ্য পাঠাত। এছাড়াও, টিকিট যাত্রীদের কাছে ডাকের মাধ্যমে পাঠানো হত, যার ফলে তাদের টিকিট পেতে কয়েক দিন লেগে যেত। এই প্রক্রিয়ায় সময়ের অপচয় এবং অসুবিধা বেশি ছিল।
ইন্টারনেট টিকিটিংয়ের যুগ
রেলওয়ে ২০০২ সালের আগস্ট মাসে ইন্টারনেট টিকিটিং সেবা চালু করে, যার ফলে যাত্রীদের জন্য বাড়ি বসেই টিকিট বুক করা সহজ হয়ে যায়। প্রথমদিকে: যাত্রীরা ওয়েবসাইটে টিকিট বুক করত, এবং টিকিট ডাকে তাদের বাড়িতে পাঠানো হত। ১২ আগস্ট ২০০৫ সালে: ই-টিকিটিং সেবা চালু হয়, যার ফলে যাত্রীরা অনলাইনে টিকিট ডাউনলোড করতে পারত, এবং প্রিন্টআউট নিয়ে ভ্রমণ করতে পারত।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি IRCTC (ভারতীয় রেলওয়ে খাবার এবং পর্যটন নিগম)-এর অধীনে হয়, যা ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ, ই-টিকিটিং ভারতীয় রেলওয়ের টিকিটিং সিস্টেমের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন সহজেই টিকিট বুক করতে পারে।