পিতামাতার ঋণখেলাপী অবস্থা কি সন্তানদের শিক্ষা ঋণে প্রভাব ফেলে?

🎧 Listen in Audio
0:00

আজকাল পড়াশোনার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাই অনেক পরিবার শিক্ষা ঋণ নিয়ে তাদের সন্তানদের পড়াশোনায় সাহায্য করে। কিন্তু যদি পিতামাতা আগে কোনও ঋণ সময়মতো পরিশোধ করেনি, অর্থাৎ তারা ঋণখেলাপী (ডিফল্টার) হয়, তাহলে কি এর প্রভাব সন্তানদের শিক্ষা ঋণের উপর পড়ে? চলুন এই প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় বুঝি।

ঋণখেলাপী অবস্থা (ডিফল্টার স্ট্যাটাস) কি?

যখন কোন ব্যক্তি তার ঋণের ইএমআই (EMI) সময়মতো পরিশোধ করে না, তখন ব্যাংক তাকে ঋণখেলাপী বলে মনে করে। এর অর্থ হল সে তার ঋণ সঠিকভাবে পরিশোধ করেনি। এর ফলে তার ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয়ে যায়। ক্রেডিট স্কোর হল একটি সংখ্যা যা ব্যাংককে বলে দেয় যে আপনি ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে কতটা বিশ্বস্ত। যদি ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয় তাহলে ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

পিতামাতার ঋণখেলাপী হওয়া কি সন্তানদের শিক্ষা ঋণকে প্রভাবিত করে?

শিক্ষা ঋণ নেওয়ার আগে ব্যাংক অনেক কিছু পরীক্ষা করে, যেমন:

  • ছাত্রের পড়াশোনার কোর্স কেমন,
  • সে কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স করছে,
  • ছাত্রের ভবিষ্যতে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা,
  • এবং পিতামাতার আর্থিক অবস্থা।

এইগুলির মধ্যে অনেক ব্যাংক পিতামাতার ক্রেডিট স্কোরও দেখতে পারে, বিশেষ করে যখন পিতামাতা ঋণের সহ-ঋণগ্রহীতা বা গ্যারান্টর হয়। এর অর্থ হল যদি পিতামাতার ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয় বা তারা ঋণখেলাপী হয়, তাহলে ঋণ পাওয়া কঠিন হতে পারে বা ব্যাংক আরও কঠোর হতে পারে।

কোন পরিস্থিতিতে ঋণখেলাপী অবস্থার প্রভাব পড়ে?

  • যদি পিতামাতা সহ-ঋণগ্রহীতা হয় এবং তাদের ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয়, তাহলে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার আগে আরও বেশি পরীক্ষা করবে এবং সুদের হারও বাড়াতে পারে।
  • যখন কোন সম্পত্তি জামানত রাখা ছাড়া (অনসিকিওর্ড লোন) ঋণ নেওয়া হয়, তখন ব্যাংক পিতামাতার ক্রেডিট স্কোরকে খুব গুরুত্বের সাথে দেখে।
  • যদি ঋণের জন্য সম্পত্তি জামানত রাখা হয় (সিকিওর্ড লোন), তাহলে এই অবস্থায় ঋণখেলাপী অবস্থার প্রভাব কম হয় কারণ ব্যাংকের ঝুঁকি কম থাকে।
  • যদি ছাত্র নিজেই ঋণের জন্য আবেদন করে এবং তার ক্রেডিট স্কোর ভালো হয়, তাহলে পিতামাতার ঋণখেলাপী অবস্থার তেমন কোনো তাৎপর্য থাকে না।

তাহলে কি সন্তানরা শিক্ষা ঋণ পেতে পারে?

হ্যাঁ, পেতে পারে, কিন্তু কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে:

  1. সহ-ঋণগ্রহীতা বা গ্যারান্টর সঠিকভাবে নির্বাচন করুন: যদি পিতামাতার ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয় তাহলে তাদের গ্যারান্টর না করুন। পরিবারের অন্য কোন সদস্য যেমন চাচা, বড় ভাই বা বোন যাদের ক্রেডিট স্কোর ভালো, তাদের যুক্ত করুন।
  2. সিকিওর্ড লোন নেওয়া ভালো: যদি আপনি সম্পত্তি (যেমন বাড়ি, এফডি) জামানত রেখে ঋণ নেন তাহলে ঋণ মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  3. বেসরকারি ঋণ প্রদানকারী বা এনবিএফসি-র সাহায্য নিন: সরকারি ব্যাংকের তুলনায় বেসরকারি ব্যাংক বা এনবিএফসি (নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানি) বেশি নমনীয়তা দেখাতে পারে, যদিও সুদের হার কিছুটা বেশি হতে পারে।
  4. সরকারি কর্মসূচির সুযোগ নিন: সরকার শিক্ষা ঋণের জন্য অনেক কর্মসূচি পরিচালনা করে যেমন কেন্দ্রীয় খাতের সুদের সাবসিডি প্রকল্প এবং বিদ্যা লক্ষ্মী পোর্টাল। এগুলি থেকে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।
  5. কম পরিমাণের জন্য আবেদন করুন: কম পরিমাণের জন্য কিছু ব্যাংক গ্যারান্টর বা জামানত ছাড়াই ঋণ দেয়।

পিতামাতার ঋণখেলাপী হওয়া শিক্ষা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা তৈরি করতে পারে, কিন্তু সঠিক প্রস্তুতি এবং বিকল্পগুলির সাথে আপনি সহজেই ঋণ নিতে পারেন। মনে রাখবেন ঋণ নেওয়ার আগে সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করুন এবং প্রয়োজন হলে আর্থিক পরামর্শদাতার সাহায্য নিন।

Leave a comment