ভারতে প্রথমবারের মতো মোবাইল ই-ভোটিংয়ের সূচনা করেছে বিহার, যার ফলে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী এবং প্রবাসীরা নিজের বাড়ি থেকেই নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন।
মোবাইল ই-ভোটিং: বিহার ভারতীয় নির্বাচনী ব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায় যোগ করে নতুন প্রযুক্তিগত বিপ্লবের সূচনা করেছে। এখন ভোটাররা নিজেদের মোবাইল ফোন থেকে নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্যভাবে ভোট দিতে পারবেন। এই সুবিধাটি বিশেষ করে তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে যারা শারীরিক, ভৌগোলিক বা স্বাস্থ্যগত কারণে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন না।
এই ঐতিহাসিক উদ্যোগটি বিহারে ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হতে চলা নগরপালিকা এবং শহরাঞ্চলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু হচ্ছে। এটিকে দেশজুড়ে প্রয়োগের দিকে একটি বড় ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিহারের উদ্যোগ: প্রথমবার মোবাইল ই-ভোটিংয়ের সুবিধা
বিহার ভারতের প্রথম রাজ্য হতে চলেছে যেখানে মোবাইল ই-ভোটিং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর অধীনে, যারা কোনও কারণে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন না—যেমন প্রবাসী শ্রমিক, প্রতিবন্ধী নাগরিক, গর্ভবতী মহিলা, বৃদ্ধ এবং গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি—তারা এখন নিজেদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার দীপক প্রসাদ জানিয়েছেন যে, এই সেবার জন্য এখন পর্যন্ত ১০,০০০ এর বেশি লোক নিবন্ধন করেছেন এবং অনুমান করা হচ্ছে প্রায় ৫০,০০০ লোক এর সুবিধা নেবে।
C-DAC এবং নির্বাচন কমিশনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্যবস্থা
এই ব্যবস্থা তৈরিতে ভারত সরকারের অধীনে কাজ করা সংস্থা Centre for Development of Advanced Computing (C-DAC) এবং বিহার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বড় ভূমিকা রয়েছে। এই প্রযুক্তিতে ব্লকচেইন, ফেশিয়াল রিকগনিশন এবং লাইভ ফেস স্ক্যানিং-এর মতো উন্নত সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ এবং ছলনামুক্ত থাকে।
কিভাবে কাজ করবে মোবাইল ই-ভোটিং ব্যবস্থা?
মোবাইল ই-ভোটিংয়ের জন্য দুটি আলাদা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। একটি অ্যাপ 'e-Voting SECBHR' যা C-DAC তৈরি করেছে, এবং অন্যটি বিহার নির্বাচন কমিশন দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।
এতে ব্যবহারকারীকে প্রথমে মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে, যেখানে আধার নম্বর, লাইভ ফেস স্ক্যান এবং কিছু প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করা বাধ্যতামূলক হবে। এই স্ক্যানিং ফেশিয়াল রিকগনিশন সিস্টেমের মাধ্যমে নিশ্চিত করবে যে ভোটদাতা ব্যক্তিই সেই ব্যক্তি যার দাবি করেছে।
ভোট দেওয়ার পরে ভোটারকে VVPAT-এর মতো একটি ডিজিটাল রশিদও দেওয়া হবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তার ভোট নিরাপদে এবং সঠিক জায়গায় গেছে।
সুরক্ষা এবং নজরদারির উচ্চ স্তর
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য এই সিস্টেমে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে:
- ব্লকচেইন: ভোটের তথ্য নিরাপদ এবং ছলনামুক্ত রাখার জন্য।
- ফেস রিকগনিশন সিস্টেম (FRS): ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য।
- অপ্টিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন (OCR): ভোট গণনাকে দ্রুত এবং নির্ভুল করার জন্য।
- ডিজিটাল লক: তথ্য এবং ভোটগ্রহণ অ্যাপগুলির সুরক্ষার জন্য।
এই সমস্ত প্রযুক্তি মিলে নিশ্চিত করে যে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটি কেবল নিরাপদ নয়, প্রযুক্তিগতভাবেও শক্তিশালী।
গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার দিকে পদক্ষেপ
রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের মতে, এই উদ্যোগ কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং গণতন্ত্রকে প্রতিটি নাগরিকের নাগালের মধ্যে আনার চেষ্টা। এর ফলে, যারা এখন পর্যন্ত ভোটদান থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তাদের বাড়ি বসেই ভোট দেওয়ার অধিকার পাবে।
উল্লেখযোগ্য যে, বিশ্বে কেবলমাত্র এস্তোনিয়া এমন একটি দেশ যেখানে জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল ই-ভোটিং প্রয়োগ করা হয়েছে। ভারতে এর সূচনা বিহার থেকে হচ্ছে, যা আগামী দিনে অন্যান্য রাজ্যের জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক মডেল হতে পারে।