মহিলাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক নেই, তা কীভাবে বুঝবেন? এর লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার জানুন। How do women recognize that the hormone balance in the body is not right? Know its symptoms, causes and how to prevent it
বিষয়বস্তু পুনরায় লিখুন:
হরমোন আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা বিভিন্ন কার্যাবলী সঠিকভাবে সম্পাদনে সহায়তা করে। যখন হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে, তখন শরীর কোনও রকম বাধা ছাড়াই মসৃণভাবে কাজ করে। নারী কিংবা পুরুষ, উভয়ের শরীরেই হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। হরমোনের অভাবে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা থেকে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও, মহিলাদের ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বন্ধ্যাত্বের মতো বিভিন্ন যৌন সমস্যার কারণ হতে পারে।
মহিলাদের জীবনে বিভিন্ন সময়ে হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক, তবে মাঝে মাঝে এর ভারসাম্য বিগড়ে যেতে পারে। সময় মতো এই সমস্যার চিহ্নিতকরণ এবং সমাধান না করা গেলে, এটি অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। আসুন, শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
হরমোন কী?
হরমোন হলো আমাদের শরীরের রাসায়নিক বার্তাবাহক, যা বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি পুরুষ ও মহিলা উভয়ের শরীরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং রোগমুক্ত জীবন নিশ্চিত করে। প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ, মেজাজের পরিবর্তন এবং আবেগজনিত পরিস্থিতি সহ বিভিন্ন অন্তঃস্রাবী ক্রিয়া শুরু করার জন্য হরমোন দায়ী।
মহিলাদের শরীরে হরমোনের অভাবের লক্ষণ:
১. অনিদ্রা:
যদি আপনার পর্যাপ্ত ঘুমাতে অসুবিধা হয় অথবা পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও যদি আপনি ক্লান্ত বোধ করেন, তাহলে এটি আপনার শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ হতে পারে। ডিম্বাশয় থেকে নির্গত হরমোন প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। একইভাবে, ইস্ট্রোজেনের অভাবে রাতে ঘাম হতে পারে, যা আপনার ঘুমের গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে।
২. মুখে ব্রণ:
মাসিকের সময় বা তার আগে মুখে ব্রণ হওয়া স্বাভাবিক, তবে ক্রমাগত ব্রণ হওয়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন, যা নারী ও পুরুষ উভয়ের শরীরেই পাওয়া যায়, তা সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলিকে অতিরিক্ত উদ্দীপিত করতে পারে, যার ফলে এই সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, মুখে অবাঞ্ছিত লোম বৃদ্ধিও এই ভারসাম্যহীনতার ফল হতে পারে।
৩. যোনি শুষ্কতা:
আবহাওয়া এবং অন্যান্য কারণে যোনিতে শুষ্কতা দেখা যেতে পারে। তবে, ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে গেলে যোনির টিস্যু অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, যা অস্বস্তির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যৌন মিলনের সময়। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা যোনির পিচ্ছিলতাও কমিয়ে দিতে পারে, যার ফলে আঁটসাঁট ভাব দেখা যেতে পারে।
৪. যৌন ইচ্ছার অভাব:
ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন ছাড়াও, মহিলাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনও থাকে, যা সাধারণত পুরুষ হরমোন হিসেবে পরিচিত। যদিও একজন মহিলার শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকে, তবে এই হরমোনের অভাবে যৌন ইচ্ছার অভাব দেখা দিতে পারে।
৫. স্তনে পরিবর্তন:
ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে গেলে স্তন ছোট হয়ে যেতে পারে, আবার ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলে স্তনে লাম্পের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি আপনি সারা মাস ধরে আপনার স্তনে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মহিলাদের শরীরে হরমোনের অভাবের কারণ:
মহিলাদের শরীরে হরমোনের অভাব অনুভব করার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন:
- ডায়াবেটিস এবং হাইপোথাইরয়েডিজমের মতো সমস্যাগুলি হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে।
- হরমোন থেরাপি, টিউমার, আঘাত বা ক্যান্সারের চিকিৎসাও হরমোনের মাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে।
- আঘাত এবং ক্যান্সারের চিকিৎসাও হরমোন উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে।
- মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি, যা বার্ধক্যের একটি স্বাভাবিক অংশ, এর কারণেও হরমোনের মাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে।
- গর্ভাবস্থা এবং স্তন্যপান করানোও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (পিসিওএস) মহিলাদের মধ্যে হরমোনের পরিবর্তনের আরও একটি সাধারণ কারণ।
- কিছু ওষুধ এবং মানসিক চাপও হরমোনের অভাবের কারণ হতে পারে।
- বিষণ্ণতা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণেও মহিলাদের শরীরে হরমোনের মাত্রা কমে যেতে পারে।
মহিলাদের শরীরে হরমোন বাড়ানোর সেরা উপায়:
মহিলারা বিভিন্ন উপায়ে তাদের শরীরে হরমোনের মাত্রা বাড়াতে পারেন। নিচে কয়েকটি উপায় আলোচনা করা হলো:
১. অ্যাভোকাডো গ্রহণ:
অ্যাভোকাডো মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। অ্যাভোকাডো সালাদ খেলে হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আরও ভালো ফল পেতে, আপনি দুধের সাথে মধু মিশিয়ে ম্যাশ করা অ্যাভোকাডোর মিশ্রণ তৈরি করতে পারেন।
২. তিসি ব্যবহার করুন:
তিসি মহিলাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা কমাতে খুবই উপকারী। এই বীজ প্রাকৃতিকভাবে হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে। তিসিতে সয়াবিনের থেকেও বেশি উপকারী উপাদান রয়েছে। এতে দ্রবণীয় ফাইবার এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা খুবই কার্যকরী। আপনি তিসির গুঁড়ো দই, ওটমিল বা অঙ্কুরিত শস্যের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৩. অশ্বগন্ধা:
অশ্বগন্ধা একটি কার্যকরী ভেষজ, যা নিয়মিত সেবন করলে মহিলাদের শরীরে হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে, গরম জলে অশ্বগন্ধার গুঁড়ো মিশিয়ে পান করা উচিত, যা খুবই উপকারী। এই ভেষজ থাইরয়েডের সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে এবং হরমোনের মাত্রাও বাড়াতে সাহায্য করে।
৪. সয়াবিন গ্রহণ করুন:
সয়াবিন মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে ফাইটোয়েস্ট্রোজেন থাকে, যা আইসোফ্লাভোন নামেও পরিচিত। মহিলারা তাদের শরীরের হরমোন বাড়ানোর জন্য সয়াবিন খেতে পছন্দ করেন। অঙ্কুরিত বীজ ছাড়াও সয়াবিন খাওয়া যেতে পারে। এটি হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরে দেওয়া সমস্ত তথ্য সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ তথ্য এবং সামাজিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি। subkuz.com এর সত্যতা নিশ্চিত করে না। কোনো প্রকার প্রতিকার ব্যবহারের আগে subkuz.com বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ জানায়।