রাজমাতা জিজাবাই শাহাজী ভোঁসলে: জিজাবাই শাহাজী ভোঁসলে, যিনি রাজমাতা জিজাবাই নামে পরিচিত, মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজী মহারাজের মাতা ছিলেন। তার জন্মদিন প্রতিবছর ১২ জানুয়ারী উদযাপিত হয়। জিজাবাইয়ের জীবন ও অবদান মারাঠা সাম্রাজ্য গঠনে অতুলনীয় ছিল, এবং তাঁরই मार्গদর্শনে শিবাজী একজন মহান শাসক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন।
রাজমাতা জিজাবাই শাহাজী ভোঁসলে ভারতীয় ইতিহাসে একজন আদর্শ ও প্রেরণার উৎস হিসেবে স্বীকৃত। তার জন্ম ১২ জানুয়ারী ১৫৯৮ সালে মহারাষ্ট্রের বুলढাণা জেলার সিন্দখেড় রাজারে। তার শৈশব কেটেছে সমৃদ্ধ ও সংস্কৃত পরিবেশে, পিতা লক্ষুজিরাও জাধব ও মাতা মহালসাবাই জাধবের আশীর্বাদে।
জিজাবাইয়ের বিবাহ খুব কম বয়সে বেড়ুল গ্রামের বাসিন্দা শাহাজী ভোঁসলের সাথে হয়, যিনি নিজামের অধীনে একজন সামরিক কমান্ডার ছিলেন। শাহাজী ভোঁসলের সাথে বিবাহ তাঁর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়, কারণ এটি তাঁকে রাজকীয় পরিবারে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয় এবং ভবিষ্যতে তাঁর নাম ইতিহাসে অমর হয়ে থাকে।
জিজাবাইয়ের অবদান ও শিবাজীর লালন-পালন
জিজাবাইয়ের জীবন তাঁর পুত্র, মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজীর জন্য এক প্রেরণার উৎস ছিল। তিনি শিবাজীর লালন-পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তাঁকে একজন শক্তিশালী ও প্রেরিত নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। জিজাবাইয়ের শিক্ষা, নীতি ও প্রেরণা শিবাজীকে একজন মহান যোদ্ধা ও জাতি-নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলেছে।
জিজাবাইয়ের ব্যক্তিত্বে মাতৃত্বের সাথে সাথে প্রশাসনিক দক্ষতাও ছিল। তিনি শিবাজীকে নৈতিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতা ও স্বরাজ্যের ধারণার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর প্রদত্ত শিক্ষা ও প্রেরণা শিবাজীকে কেবল যুদ্ধ কৌশলেই পারদর্শী করে তুলেনি, বরং তাঁকে একজন মহান শাসকও বানিয়েছে।
জিজাবাইয়ের মৃত্যু
১৭ জুন ১৬৭৪ সালে রায়গড় দুর্গের কাছে পাচড় গ্রামে জিজাবাইয়ের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা শিবাজীর রাজ্যাভিষেকের মাত্র এগারো দিন পরে ঘটে, যা তাঁর জীবনের এক দুঃখজনক ও ঐতিহাসিক ঘটনা। জিজাবাইয়ের মৃত্যু মারাঠা সাম্রাজ্যের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি ছিল, কারণ তাঁর উপস্থিতি ও मार्গদর্শন শিবাজীকে শক্তি ও প্রেরণা দিয়ে আসছিল।
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে জিজাবাইয়ের প্রতিচ্ছবি
জিজাবাইয়ের অবদান কেবল ইতিহাসেই সীমাবদ্ধ থাকে নি, বরং তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনেও একজন আদর্শ নারী হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছেন। মারাঠি চলচ্চিত্র শিল্পে তাঁর জীবনীকাহিনী অবলম্বনে অনেক ছবি ও ধারাবাহিক তৈরি হয়েছে। খ্যাতনামা অভিনেত্রী সুলোচনা লাটকর মারাঠি চলচ্চিত্র "মারাঠা টিটুকা মেলওয়াভা"-তে জিজাবাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
এছাড়াও, ২০০৮ সালে মৃণাল কুলকর্ণী "রাজা শিবছত্রপতি" ধারাবাহিকে জিজাবাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যা দর্শকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল। ২০১১ সালে শিল্পা তুলস্কার "বীর শিবাজী"-তে জিজাবাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন, আর স্মিতা দেশমুখ ২০১১ সালের "রাজমাতা জিজাউ" চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন যা জিজাবাইয়ের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত।
তদুপরি, "তাঞ্ঞাজী" চলচ্চিত্রে পদ্মাবতী রাও জিজাবাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যা একটা ঐতিহাসিক জীবনী ছিল। এই ছবি ও ধারাবাহিকগুলিতে জিজাবাইয়ের নেতৃত্ব ও মাতৃত্বকে प्रभावশালী ढংঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।
জিজাবাইয়ের ঐতিহাসিক অবদান
জিজাবাইয়ের জীবন ও কর্ম কেবল মারাঠা সাম্রাজ্য গঠনেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বরং তিনি ভারতীয় সমাজে নারীদের জন্য এক আদর্শ স্থাপন করেছিলেন। তিনি একজন এমন আদর্শ ছিলেন যিনি তাঁর পুত্রকে কেবল শারীরিক শক্তিই দেননি, বরং মানসিক ও নৈতিক বলও দিয়েছিলেন। তাঁর জীবন এ কথার উদাহরণ যে, একজন মা কীভাবে তাঁর সন্তানদের কেবলমাত্র ভালোবাসা ও যত্নই দেন না, বরং সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধও জাগ্রত করেন।
জিজাবাই তাঁর সময়ে প্রতিটি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন এবং সর্বদা মারাঠা সাম্রাজ্যের উত্থানের জন্য কাজ করেছেন। তাঁর নেতৃত্ব ও আশীর্বাদে শিবাজীকে কেবল একজন যোদ্ধা হিসেবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি, বরং জাতি গঠনের দিকও দেখানো হয়েছিল।
এক অবিস্মরণীয় নাম
জিজাবাইয়ের নাম ভারতীয় ইতিহাসে চিরকাল অমর থাকবে। তাঁর ভূমিকা কেবল একজন মাতা হিসেবেই নয়, বরং একজন মহান मार्গদর্শক ও প্রেরণার উৎস হিসেবেও স্মরণীয় হবে। শিবাজীর সাফল্যে জিজাবাইয়ের শিক্ষা ও मार्গদর্শনের অবদান অতুলনীয়।
আজও যখন আমরা মারাঠা সাম্রাজ্যের গাথা ও শিবাজীর মহান কাজের কথা বলি, তখন জিজাবাইয়ের অবদান স্মরণ করা হয়। তাঁর জীবন এক প্রেরণা যে, একজন শক্তিশালী ও প্রেরিত ব্যক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন সমাজ ও দেশের জন্য।
জিজাবাই শাহাজী ভোঁসলের জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় যে, একজন নারীর নেতৃত্ব ও অবদান যেকোনো সমাজ বা সাম্রাজ্যের সাফল্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাঁর জীবন ও কর্ম আজও আমাদের প্রেরণা যোগায় এবং আগামী প্রজন্মের জন্য এক অমূল্য উত্তরাধিকার হিসেবে বহাল থাকবে।