মেজর জসবন্ত সিংহ জসোলের জন্মদিন ও তাঁর অসাধারণ জীবন

🎧 Listen in Audio
0:00

প্রতি বছর ৩ জানুয়ারি ভারতের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা মেজর জসবন্ত সিংহ জসোলের জন্মদিন পালিত হয়। এই দিনটি তাঁর অসংখ্য অবদান এবং জীবনের সংগ্রামগুলি স্মরণ করার একটি সুযোগ। তাঁর জীবন ভারতীয় রাজনীতি, সেনাবাহিনী এবং কূটনীতিতে অনন্য ছিল।

প্রাথমিক জীবন এবং সামরিক সেবা

জসবন্ত সিংহের জন্ম হয় ৩ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে রাজস্থানের বাড়োতরা জেলার জসোল গ্রামে। এক রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী জসবন্ত সিংহ তাঁর জীবনের প্রারম্ভে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মজীবন গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মেয়ো কলেজ এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা একাডেমি থেকে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৬০-এর দশকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর তিনি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১০ বছর সামরিক কর্মজীবনে কাটানোর পর ১৯৬৬ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা

মেজর জসবন্ত সিংহ ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে ভারতীয় জনসংঘে যোগদান করে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)-এর সক্রিয় সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৮০ সালে তাঁকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত করা হয় এবং এর পর থেকে তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেন।

বাজপেয়ী সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পদ

মেজর জসবন্ত সিংহ অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশের অর্থনৈতিক দিক উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে একটি নতুন দিক দেন এবং আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিন্টনের ভারত সফরের সময় দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বিবাদ এবং বহিষ্কার

মেজর জসবন্ত সিংহের রাজনৈতিক জীবন শুধুমাত্র সাফল্য ও সম্মানে পূর্ণ ছিল না। ২০০৯ সালে তাঁর লেখা 'জিন্নাহ—ইন্ডিয়া, পার্টশন, ইন্ডিপেন্ডেন্স' বইতে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রশংসা এবং নেহেরু-প্যাটেলের সমালোচনার কারণে তাঁকে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে পরে তাঁকে পার্টিতে ফিরিয়ে আনা হয়।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে, BJP-এর টিকিট না পাওয়ার পর জসবন্ত সিংহ বাড়মের-জয়সলমের নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তবে তিনি পরাজিত হন এবং এর পর ছয় বছরের জন্য পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন।

সিংহের অবদান এবং সম্মান

মেজর জসবন্ত সিংহ ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর ছাপ রেখে গেছেন। ২০০১ সালে তিনি "শ্রেষ্ঠ সাংসদ" পুরস্কার পান এবং তিনি সর্বদা একজন নিষ্ঠাবান এবং সৎ নেতা হিসেবে স্মরণীয় থাকবেন। তাঁর অবদানের জন্য তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে এক সম্মানিত স্থান অর্জন করতে সক্ষম হন।

স্বাস্থ্য এবং মৃত্যু

জীবনের শেষ বছরগুলিতে জসবন্ত সিংহ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হন। ৭ আগস্ট ২০২০-তে পড়ে গিয়ে তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে এবং তিনি কোমায় চলে যান। ২০২০ সালে তাঁর অবস্থা আরও অবনতি হয় এবং ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০-তে তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর পর

জসবন্ত সিংহের মৃত্যু ভারতীয় রাজনীতি এবং সেনাবাহিনীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি ছিল। তাঁর নাম শুধুমাত্র রাজনীতিতে নয়, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্যও সর্বদা স্মরণীয় থাকবে। তাঁর জীবন সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং দেশের প্রতি নিষ্ঠার প্রতীক হয়ে থাকবে। মেজর জসবন্ত সিংহ জসোলের জীবন একটি অনুপ্রেরণা। তাঁর সামরিক কর্মজীবন, রাজনীতিতে তাঁর অবদান, অথবা তাঁর মতামত থেকে উদ্ভূত বিতর্ক, যাই হোক না কেন, তাঁর জীবন শিক্ষা দেয় যে সত্যতা, সততা এবং রাষ্ট্রসেবা সর্বদা প্রাধান্য পায়। তাঁর অবদান সর্বদা স্মরণীয় থাকবে, এবং তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে একজন আদর্শ নেতা হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

Leave a comment