ভারতীয় ঐতিহ্যগুলি তাদের গভীর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য পরিচিত। এই ঐতিহ্যগুলির মধ্যে একটি হল ‘শাখা পোলা’, যা বাংলা, আসাম ও ওড়িশার বিবাহিতা নারীদের জন্য কেবলমাত্র আভরণ নয়, বরং একটি পবিত্র দায়িত্ব ও দাম্পত্য পরিচয়ের প্রতীক।
কী হল শাখা পোলা?
‘শাখা পোলা’ দুটি আলাদা চুড়ির একত্রীকরণ। ‘শাখা’ হল সাদা শঙ্খ দিয়ে তৈরি চুড়ি, যা পবিত্রতা ও নির্মলতার প্রতীক; অন্যদিকে ‘পোলা’ হল লাল প্রবাল দিয়ে তৈরি চুড়ি, যা জীবনের শক্তি ও উদ্দীপনার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বিবাহের পর প্রতিটি বাঙালি নারী এগুলি তাদের হাতে পরে, যা তাদের নতুন দায়িত্ব গ্রহণ ও দাম্পত্য জীবনে প্রবেশের ইঙ্গিত দেয়।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
শাখা পোলা পরার ঐতিহ্য কেবলমাত্র একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং গভীর বিশ্বাস ও ধর্মীয় আস্থার সাথেও জড়িত। বিশ্বাস করা হয় যে, এই চুড়িগুলি পরলে নারীর উপর ঈশ্বরের কৃপা বজায় থাকে এবং সে নেতিবাচক শক্তি থেকে সুরক্ষিত থাকে। সাদা শঙ্খ দিয়ে তৈরি শাখা ‘পবিত্রতা’র প্রতীক, অন্যদিকে লাল প্রবাল দিয়ে তৈরি পোলা ‘সক্রিয়তা’ ও ‘জীবনশক্তি’র প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
স্বামীর দীর্ঘায়ুর প্রতীক
বাংলার বিশ্বাস অনুযায়ী, ‘শাখা পোলা’ পরলে স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের কামনা পূর্ণ হয়। নারীরা তাদের জীবনসঙ্গীর সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির জন্য এটি পরে থাকে। এটি কেবলমাত্র একটি আভরণ নয়, বরং একজন স্ত্রীর তার স্বামীর প্রতি প্রেম ও সমর্পণের প্রতীক।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিচয়
শাখা পোলা একজন বিবাহিতা নারীর পরিচয়। বিবাহের পর এটি পরা নারীর নতুন জীবনে প্রবেশ ও তার সামাজিক অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। এই চুড়িগুলি নতুন দায়িত্বের স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তাকে পরিবারের সমৃদ্ধি ও সুখ-শান্তির জন্য অনুপ্রাণিত করে।
ভাঙ্গা অশুভ বলে মনে করা হয়
শাখা পোলার ভাঙ্গা অশুভ বলে মনে করা হয়। যদি কোনও বিবাহিতা নারীর শাখা পোলা ভেঙে যায়, তাহলে তা পুনরায় পূজা করে পরতে হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই ঐতিহ্য পালন করলে ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে।
পরিবর্তনশীল সময়েও অটুট রয়েছে ঐতিহ্য
পরিবর্তনশীল সময়ের মধ্যেও, শাখা পোলার ঐতিহ্য আজও তার পরিচয় ধরে রেখেছে। আধুনিকতার মাঝেও নারীরা এটি গর্বের সাথে পরে, কারণ এটি তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি পরা কেবলমাত্র একটি ঐতিহ্য পালন নয়, বরং তাদের দাম্পত্য পরিচয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখার একটা উপায়।
‘শাখা পোলা’ কেবলমাত্র একটি আভরণ নয়, বরং বাংলা, আসাম ও ওড়িশার বিবাহিতা নারীদের জন্য এক আস্থা, প্রেম ও সামাজিক দায়িত্বের প্রতীক। এই ঐতিহ্য তাদের জীবনে পবিত্রতা, শক্তি ও সমর্পণের অনুভূতি জোগায় এবং তাদের জীবনে একটি নতুন পরিচয় দেয়।
