পণ্ডিত মদন মোহন মালবীয়ের জন্মজয়ন্তী ২৫শে ডিসেম্বর পালিত হয়। ১৮৬১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর এলাহাবাদে (বর্তমান প্রয়াগরাজ) তাঁর জন্ম হয়। পণ্ডিত মালবীয় ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা, সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ এবং কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। ভারতীয় সমাজ ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তাঁকে "মহাত্মনা" উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছিল, যা তাঁর মহত্ত্ব এবং কাজের প্রতীক। তাঁর জীবন সত্য, ধর্ম, শিক্ষা ও সমাজ সেবার জন্য উৎসর্গীকৃত ছিল এবং তিনি তাঁর পুরো জীবন দেশ এর উন্নয়ন ও উন্নতির জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর জন্মজয়ন্তীতে, সারা দেশে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় এবং তাঁর অবদান স্মরণ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
মহাত্মনা পং মদন মোহন মালবীয়, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, ভারতীয় সমাজের মহান নেতা এবং রাষ্ট্র নির্মাতা ছিলেন। তাঁর জীবন কেবল দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনী দ্বারা অনুপ্রাণিত নয়, তিনি ভারতীয় সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। ১৮৬১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া পং মালবীয়ের জীবন একটি অনুপ্রেরণা, যা আমাদের কেবল দেশপ্রেমের অনুভূতি দেয় না, বরং আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনও করে।
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
পং মদন মোহন মালবীয় প্রয়াগরাজে (বর্তমান এলাহাবাদ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ধর্মীয় এবং সংস্কৃতি-প্রেমী ছিল, যার কারণে তিনি ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। পাঁচ বছর বয়সে পং মালবীয়কে সংস্কৃত শিক্ষা লাভের জন্য ধর্ম জ্ঞানোপদেশ পাঠশালায় পাঠানো হয়। এর পরে তিনি এলাহাবাদের জেলা স্কুল থেকে শিক্ষা লাভ করেন।
পং মালবীয়ের শিক্ষাজীবন ছিল খুবই অনুপ্রেরণামূলক। তিনি মেয়র সেন্ট্রাল কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও, তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং ব্যায়ামেও আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তাঁর জীবন কেবল বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি সমাজ সেবা এবং দেশের জন্য সংগ্রামের পথেও এগিয়ে গিয়েছিলেন।
মহাত্মনার অবদান: শিক্ষা, সমাজ ও জাতি গঠন
পং মদন মোহন মালবীয়ের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সংস্কৃতি, সংস্কৃত এবং বিজ্ঞানের সমন্বয়ে একটি সামগ্রিক শিক্ষা প্রদান করা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ছিল এমন ছাত্র তৈরি করা, যারা দেশের সেবায় নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারবে এবং ভারতকে গৌরবময় করে তুলবে।
মালवीयজী জীবন সত্য, ব্রহ্মচর্য, দেশপ্রেম এবং আত্মত্যাগের এক জীবন্ত উদাহরণ ছিলেন। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির একনিষ্ঠ রক্ষক ছিলেন এবং সর্বদা তাঁর আচার-আচরণে সরলতা ও নম্রতার পরিচয় দিতেন। তাঁর জীবন কর্মের প্রতি অবিচল নিষ্ঠার প্রতীক ছিল এবং তিনি প্রতিটি কাজে সততা ও নির্লিপ্ততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
রাজনৈতিক জীবন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা
পং মালবীয়ের রাজনৈতিক জীবনও ছিল তেমনই অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন প্রধান নেতা ছিলেন এবং চারবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। স্বরাজের জন্য তাঁর সংগ্রাম ছিল অসাধারণ। তিনি ভারতীয় সমাজে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের পক্ষে ছিলেন এবং কংগ্রেসের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করেছিলেন।
মতভেদ থাকা সত্ত্বেও, পং মালবীয় সবসময় ভারতীয় সমাজের জন্য তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর অবদান ছিল বিশেষত মতভেদের রাজনীতিতে, যেখানে তিনি বিভিন্ন আদর্শকে এক মঞ্চে আনার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর জীবন আমাদের শেখায় যে, সত্যিকারের নেতা তারাই যারা তাদের দেশ ও সমাজের জন্য নিবেদিত, যতই কঠিন পরিস্থিতি আসুক না কেন।
সমাজ সংস্কার ও সংস্কৃতির রক্ষা
পং মালবীয় ভারতীয় সমাজের সংস্কারের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাঁর অবদান বিশেষভাবে হিন্দু ধর্মের রক্ষা এবং সংস্কারে ছিল। তিনি হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠ দিকগুলো তুলে ধরেন এবং ভারতীয় সংস্কৃতিকে গর্বের সাথে উপস্থাপন করেন। তাঁর সংস্থা 'হিন্দু মহাসভা' ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করে এবং সমাজে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে।
শিক্ষার প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সংস্কারের জন্ম দিয়েছে এবং তিনি সর্বদা বিশ্বাস করতেন যে, শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল জ্ঞান দান করা নয়, বরং মানুষের চরিত্র এবং সমাজের প্রতি তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করাও।
স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং তাঁর সংগ্রাম
স্বাধীনতা সংগ্রামে পং মদন মোহন মালবীয়ের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মতভেদ থাকা সত্ত্বেও তিনি কংগ্রেসের মধ্যে থেকে ভারতীয় স্বাধীনতার লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে তাঁর সাথে ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ তপস্যা ও সংগ্রাম তাঁকে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ নায়ক করে তুলেছে।
তাঁর অবদানের প্রতিধ্বনি আজও
পং মালবীয়ের জন্মজয়ন্তী ২৫শে ডিসেম্বর একটি জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। ভারত সরকার ২০১৪ সালে তাঁকে ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করে, যা তাঁর জীবন ও কর্মের এক অনন্য সম্মান। এছাড়াও, তাঁর স্মৃতিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তা এবং প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে।
মহাত্মনা পং মদন মোহন মালবীয়ের জীবন উৎসর্গ, সংগ্রাম এবং দেশপ্রেমের এক উদাহরণ। তাঁর অবদান কেবল শিক্ষা, সমাজ সংস্কার এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তিনি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মের সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর জীবন আমাদের শেখায় যে, কোনও জাতির মহত্ত্ব তার নেতাদের দূরদর্শিতা, সততা এবং সমাজের প্রতি তাদের উৎসর্গের উপর নির্ভর করে।
```