আজকের যুগে যেখানে সবকিছুই ডিজিটাল হয়ে উঠছে, সেখানেও একটা জিনিস আছে যা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ থাকবে – সেটা হলো জ্ঞান। আর এই জ্ঞানকে সংরক্ষণ, সংরক্ষণ এবং সঠিক ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন গ্রন্থাগারিকরা। প্রতি বছর ১৬ই এপ্রিল সারা দেশে জাতীয় গ্রন্থাগারিক দিবস পালন করা হয়, যাতে তাদের অবদান স্মরণ করা যায় এবং তাদের সম্মান করা যায়।
কেন এই দিনটি বিশেষ?
১৬ই এপ্রিলের দিনটি বিশেষ করে তাদের জন্য উৎসর্গ করা হয় যারা গ্রন্থাগারের দায়িত্ব পালন করেন। এটি কেবল বইগুলিকে আলমারিতে সাজিয়ে রাখার কাজ নয়, বরং সঠিক তথ্য সঠিক ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়া, মানুষকে পড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করা এবং সকল বয়সের মানুষকে শেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করা, এটাই তাদের আসল কাজ।
গ্রন্থাগারিকদের কাজ যতটা শান্ত মনে হয়, ততটাই দায়িত্বপূর্ণ। তারা প্রতিদিন ছাত্রছাত্রী, গবেষক, সাধারণ মানুষ এবং বৃদ্ধদের কাছে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেন।
ডঃ এস. আর. রঙ্গনাথন কে ছিলেন?
ভারতে গ্রন্থাগারের ভিত্তি মজবুত করার জন্য একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন ডঃ এস. আর. রঙ্গনাথন। তাকে ভারতে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তিনি গ্রন্থাগারগুলিকে কেবল বইয়ের আধার নয়, বরং জ্ঞান ও শিক্ষার কেন্দ্র করে তুলেছেন। তার স্মরণে ১২ই আগস্ট "জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস" পালিত হয়, কিন্তু ১৬ই এপ্রিল বিশেষ করে তাদের জন্য নির্বাচিত হয়েছে যারা এই গ্রন্থাগারগুলিকে পরিচালনা করেন – অর্থাৎ গ্রন্থাগারিকরা।
ছাত্রছাত্রীদের জন্য গ্রন্থাগারের গুরুত্ব
একজন ছাত্রছাত্রীর কাছে গ্রন্থাগার কোনো ধনকোষের চেয়ে কম নয়। চাই বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি হোক কিংবা কোনো গবেষণা প্রকল্প, গ্রন্থাগার এবং সেখানে সাহায্যকারী গ্রন্থাগারিকরা সবসময় পাশে থাকেন। তারা ছাত্রছাত্রীদের বলতে সাহায্য করেন কোন বই কোন বিষয়ের জন্য উপযুক্ত, কোন ওয়েবসাইট নির্ভরযোগ্য এবং কোন সূত্র থেকে তারা সঠিক তথ্য পাবেন। আজকাল গুগলে হাজারো উত্তর আসে, তখন একজন গ্রন্থাগারিকই সঠিক পথ দেখান।
গ্রামীণ ভারতে আশার আলো
ভারতের গ্রামে যেখানে ইন্টারনেট বা ডিজিটাল সুবিধা সীমিত, সেখানে গ্রন্থাগার এবং গ্রন্থাগারিকরা শিক্ষার আসল আশার আলো হয়ে উঠেন। অনেক রাজ্য গ্রামে ছোট ছোট গ্রন্থাগার চালু করেছে, যেখানে মানুষ পড়তে পারে, সংবাদপত্র দেখতে পারে এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে। এ ধরণের জায়গায় কাজ করা গ্রন্থাগারিকরা মানুষকে পড়াশোনার প্রতি সচেতন করার কাজ করেন। তারা শিশুদের বইয়ের দিকে আকৃষ্ট করে এবং গ্রামে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে।
সরকারের প্রচেষ্টা
সরকারও এখন গ্রন্থাগারগুলিকে ডিজিটাল করার দিকে কাজ করছে। জাতীয় ডিজিটাল গ্রন্থাগার, ই-পাঠশালা এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া-র মতো পরিকল্পনার মাধ্যমে মানুষ মোবাইল ও কম্পিউটারের মাধ্যমে পড়ার সুবিধা পাচ্ছে। এছাড়াও অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স-এর মতো কোর্স রয়েছে, যার ফলে তরুণরা এই ক্ষেত্রে কর্মজীবন গড়ে তুলতে পারে।
এই বছরের অনুষ্ঠান
প্রতি বছরের মতো এবারও জাতীয় গ্রন্থাগারিক দিবসে বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ অনুষ্ঠান হচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও পাবলিক লাইব্রেরিতে বই প্রদর্শনী, বই আলোচনা, সেমিনার এবং লাইব্রেরি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হচ্ছে। কিছু জায়গায় অনলাইন ওয়েবিনারও হচ্ছে, যেখানে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করছেন আগামীতে গ্রন্থাগারের ভূমিকা কী হবে এবং প্রযুক্তির সাথে কীভাবে তাল মিলিয়ে চলা যায়।
বইয়ের জগতে হারিয়ে যাওয়া এই শান্ত স্বভাবের মানুষেরা আসলে সমাজের আসল নায়ক। তারা শিশুদের মধ্যে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন, বৃদ্ধদের নতুন তথ্য দেন এবং তরুণদের কর্মজীবন গঠনের পথ দেখান। জাতীয় গ্রন্থাগারিক দিবসে আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, যতটা সম্মান আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা শিক্ষককে দেই, ততটাই সম্মান এই জ্ঞানের রক্ষাকারীদেরও পাওয়া উচিত। কারণ এটাই তারা যারা আমাদের সমাজকে চিন্তা করার, বুঝার এবং এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেয়।