ভারতে প্রতি বছর ২৩শে ডিসেম্বর জাতীয় কৃষক দিবস (National Farmers Day) পালন করা হয়। এই দিনটি কৃষকদের অবদানকে সম্মান জানাতে এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য পালন করা হয়। আসুন, এই গুরুত্বপূর্ণ দিবসটির ইতিহাস, তাৎপর্য এবং কিছু আকর্ষণীয় তথ্য সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
জাতীয় কৃষক দিবসের ইতিহাস
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিং-এর জন্মদিন ২৩শে ডিসেম্বর জাতীয় কৃষক দিবস হিসেবে পালিত হওয়া শুরু হয়। চৌধুরী চরণ সিং কৃষকদের কল্যাণের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং তিনি কৃষকদের অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। তাঁর অবদানকে স্মরণ করে ২০০১ সালে এই দিনটিকে জাতীয় কৃষক দিবস হিসেবে পালন করার সূচনা করা হয়।
চৌধুরী চরণ সিং ভারতীয় কৃষি খাতের উন্নতির জন্য অনেক প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন, যার মধ্যে বিশেষভাবে কৃষক ঋণ মকুব প্রকল্প এবং গ্রামীণ এলাকায় সেচের ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অবদানকে আজও দেশের কৃষক এবং নেতারা প্রশংসা করেন।
জাতীয় কৃষক দিবসের তাৎপর্য
· জাতীয় কৃষক দিবসের মূল উদ্দেশ্য হল কৃষকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের সমস্যাগুলির বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই দিনটি নিশ্চিত করে যে ভারতের কৃষি খাতে ক্রমাগত উন্নতি ও বিকাশ হয়।
· ভারতের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে এবং বেশিরভাগ ভারতীয় কৃষক কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই এই দিনটির তাৎপর্য আরও বেড়ে যায়, কারণ এটি কৃষকদের অসুবিধাগুলি তুলে ধরতে এবং তাদের সমর্থন করার একটি মাধ্যম।
· এই দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির আয়োজন করা হয়, যেখানে কৃষকদের কল্যাণের জন্য নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং তাদের নতুন প্রযুক্তিগত তথ্য দেওয়া হয়।
কৃষকদের জন্য প্রধান প্রকল্প ও কর্মসূচি
জাতীয় কৃষক দিবসের অনুষ্ঠানে কৃষকদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প ও কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ঋণ মকুব, সেচ ব্যবস্থার বিস্তার, কৃষি সরঞ্জাম সহজলভ্য করা এবং বাজারের মূল্য বৃদ্ধি করার মতো প্রকল্প। সরকার কর্তৃক কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা দেওয়ার জন্য অনেক কর্মসূচিও চালানো হয়, যার মাধ্যমে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো যায় এবং তারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে।
আকর্ষণীয় তথ্য - কৃষক দিবস সম্পর্কে
· চৌধুরী চরণ সিং-এর অবদান: চৌধুরী চরণ সিং ১৯০২ সালের ২৩শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর পুরো জীবন ভারতীয় কৃষকদের স্বার্থে কাজ করে কেটেছে। তিনি কৃষক সমাজের অধিকার রক্ষার জন্য অনেক আইন তৈরি করেন এবং সংস্কার করেন।
· কিষাণ দিবসের সূচনা: 2001 সালের 23শে ডিসেম্বর থেকে এই দিনটি জাতীয় কৃষক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
· ভারতে কৃষির গুরুত্ব: ভারতে প্রায় ৬০% এর বেশি মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং এটি দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
· কৃষক আন্দোলন: ভারতে অনেকবার কৃষক আন্দোলনের আয়োজন করা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ২০২০-২০২১ সালের কৃষক আন্দোলন, যা কৃষি আইন নিয়ে হয়েছিল।
কৃষকদের সাহায্য করার জন্য সরকারের প্রকল্প
· প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি (PM-KISAN): এই প্রকল্পটি কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য শুরু করা হয়েছে, যেখানে প্রতি বছর কৃষকদের ৬০০০ টাকা সাহায্য করা হয়।
· কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (KCC): কৃষকদের কম সুদের হারে ঋণ দেওয়ার জন্য এই প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে এবং তাদের কাজ সহজ হতে পারে।
· রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা (RKVY): এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল কৃষি খাতকে উন্নত করা এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
জাতীয় কৃষক দিবস শুধু ভারতীয় কৃষকদের অবদানকে সম্মান জানায় না, বরং এটি তাদের সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য একধাপ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও করে দেয়। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা ছাড়া দেশের অর্থনীতির চাকা চলতে পারে না। তাই আমাদের কৃষকদের সম্মান করা উচিত এবং তাদের মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করা উচিত।