বিশ্ব পরিবেশ দিবস: পরিবেশ রক্ষায় আমাদের ভূমিকা

🎧 Listen in Audio
0:00

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব। আজ যখন দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি-এর মতো গুরুতর সমস্যা আমাদের পৃথিবীকে প্রভাবিত করছে, তখন আমাদের সচেতন হয়ে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। এসব কারণেই জাতিসংঘ ৫ই জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালনের সূচনা করেছে, যাতে পুরো বিশ্বকে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার প্রতি সচেতন করা যায়।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস কী?

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্দেশ্য হলো মানুষকে পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষিত করা এবং তাদের জীবনযাত্রায় এমন পরিবর্তন আনার জন্য অনুপ্রাণিত করা যা পৃথিবীর সংরক্ষণে সাহায্য করবে। এই দিবসটি প্রতি বছর বিভিন্ন থিম নিয়ে পালিত হয়, যা বিশ্বের বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যায় ফোকাস করে।

এই দিনে সকল দেশে পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মসূচী, সেমিনার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, গাছ লাগানোর অভিযান এবং অন্যান্য অনেক কার্যকলাপ আয়োজন করা হয়। মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের পরিবেশ রক্ষার প্রতিজ্ঞা করে এবং অন্যদেরও এ দিকে উৎসাহিত করে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ইতিহাস

জাতিসংঘ ১৯৭২ সালে স্টকহোম সম্মেলনের সময় পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে প্রথমবারের জন্য জোর দেয়। এর দুই বছর পর, ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের জন্য বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। তখন থেকেই এই দিবস প্রতি বছর ৫ই জুন বিশ্বের প্রায় ১৪৩টি দেশে ব্যাপক উৎসাহের সাথে পালিত হচ্ছে।

প্রতি বছর একটি আয়োজক দেশ নির্বাচিত হয়, যা সে বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রধান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যেমন, ভারত ২০১১ সালে, ব্রাজিল ২০১২ সালে, চীন ২০১৯ সালে এবং কলম্বিয়া ২০২০ সালে এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রতি বছরের থিমও সে সময়ের প্রধান পরিবেশগত সমস্যাগুলিকে তুলে ধরে, যেমন 'প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই', 'প্রকৃতির জন্য সময়', এবং 'আমাদের একটি পৃথিবী, আমাদের একটি ভবিষ্যৎ।'

বিশ্ব পরিবেশ দিবস কেন জরুরি?

আজকের সময় পরিবেশের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আমাদের দ্বারা করা অনেক কার্যকলাপ, যেমন:

  • বন উজাড়
  • বায়ু ও জল দূষণ
  • জলবায়ু পরিবর্তন
  • জনসংখ্যা বৃদ্ধি

পৃথিবীর সম্পদের উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করছে। যদি আমরা সময়মতো এ ব্যাপারে নজর না দেই, তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য এটি একটি বড় সংকট হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমাদের আমাদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে, শক্তি ও সম্পদের সংরক্ষণ করতে হবে এবং দূষণ কমাতে হবে পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। এটি এমন একটি দিন যখন আমরা ভাবি কিভাবে আমরা আমাদের পৃথিবীকে আরও ভালো করতে পারি।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস কীভাবে পালন করবেন?

১. স্থানীয় কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করুন

আপনার নিকটবর্তী কোনও পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মসূচীতে যোগ দিন। এটি গাছ লাগানোর অভিযান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান অথবা কোনও সচেতনতা সমাবেশ হতে পারে। সাথে সাথে, আপনার পরিবার ও বন্ধুদেরও সাথে নিয়ে আসুন যাতে তারাও এই দিবসের গুরুত্ব বুঝতে পারে।

২. স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করুন

যদি আপনি অনুপ্রাণিত হন, তাহলে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করুন। স্থানীয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিন, পুনর্ব্যবহার কেন্দ্রে সাহায্য করুন অথবা আবর্জনা তোলার কাজে অবদান রাখুন।

৩. অনলাইন কনটেন্ট দেখুন এবং শেয়ার করুন

আজ ইন্টারনেটে পরিবেশ সংক্রান্ত অনেক তথ্য পাওয়া যায়। আপনি 'আর্থ অ্যান্থেম' এর মতো কবিতা পড়তে পারেন, যা বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনুভূতিকে প্রকাশ করে। এগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সচেতনতা বাড়ান।

৪. আপনার নিজের সৃজনশীলতা দেখান

আপনি কি কবিতা লেখা পছন্দ করেন? নাকি চিত্রকর্মে আগ্রহী? বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আপনার নিজস্ব সৃষ্টি করুন এবং তা মানুষের সাথে শেয়ার করুন। এটি হৃদয়ের একটা অনন্য উপায় যার মাধ্যমে মানুষকে পরিবেশের প্রতি আকৃষ্ট করা যায়।

৫. ছোট ছোট অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন

  • LED বাল্ব ব্যবহার করুন
  • প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাবেন
  • আবর্জনা সঠিক জায়গায় ফেলুন
  • পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করুন
  • যত বেশি সম্ভব গাছ লাগান

এই ধরণের পদক্ষেপ আমাদের পরিবেশকে সুস্থ রাখতে অনেক সাহায্য করে।

পরিবেশ সংরক্ষণে আপনার ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। যদি আমরা আমাদের ঘরে বিদ্যুৎ ও পানি সাশ্রয় করি, আবর্জনা সঠিক জায়গায় ফেলি, প্লাস্টিকের কম ব্যবহার করি এবং আমাদের আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখি, তাহলে এর ফলে আমাদের পরিবেশ অনেক উপকৃত হবে। ছোট ছোট এই পদক্ষেপগুলি মিলেমিশে বড় পরিবর্তনের সূচনা করে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস আমাদের এটাই শেখায় যে যদি আমরা সকলে মিলে প্রয়াস করি, তাহলে আমরা আমাদের পৃথিবীকে সুরক্ষিত ও পরিষ্কার রাখতে পারব।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমাদের পৃথিবীর সুরক্ষা আমাদের সামूहিক দায়িত্ব। ছোট ছোট প্রচেষ্টা মিলেমিশে বড় পরিবর্তন আনে, তাই আমাদের পরিবেশ রক্ষার জন্য সর্বদা সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে।

Leave a comment