বাবা জীবন সিং জী: আত্মত্যাগ ও বীরত্বের প্রতিমূর্তি

🎧 Listen in Audio
0:00

বাবা জীবন সিং জী শহীদি দিবস প্রতি বছর ২৩শে ডিসেম্বর পালিত হয়। এই দিনটি বাবা জীবন সিং জীর অতুলনীয় আত্মত্যাগ স্মরণ এবং সম্মান জানানোর জন্য পালিত হয়। বাবা জীবন সিং জী শিখ ধর্মের মহান গুরু গুরু গোবিন্দ সিং জীর সাথে মিলিত হয়ে মুঘলদের বিরুদ্ধে বহু যুদ্ধ লড়েছিলেন এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

শিখ ধর্মের ইতিহাসে ভাই জীবন সিং-এর নাম অবিস্মরণীয়। তিনি কেবল নিজের বীরত্বের মাধ্যমে শিখ সম্প্রদায়কে গৌরবান্বিত করেননি, বরং নিজের আত্মত্যাগ ও কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে অমর হয়ে আছেন। বাবা জীবন সিং, যিনি পূর্বে ভাই জৈতা নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি ছিলেন গুরু গোবিন্দ সিং-এর বিশ্বাসভাজন এবং শিখ ধর্মের প্রথম সেনাপতি। তাঁর জীবন শিখ ঐতিহ্য, আত্মত্যাগ এবং কর্তব্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

প্রারম্ভিক জীবন

ভাই জৈতার জন্ম ১৬৬১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর পাটনা (বিহার)-এ এক মজহবি শিখ পরিবারে হয়েছিল। তাঁর পিতার নাম সদা নন্দ এবং মাতার নাম প্রেমো ছিল। শৈশবকাল থেকেই তিনি নির্ভীক এবং কর্মঠ ছিলেন। পাটনায় থাকার সময় তিনি অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন এবং যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

তিনি ঘোড়ায় চড়া, সাঁতার এবং সঙ্গীতেও পারদর্শী ছিলেন।

তাঁর শিক্ষা-দীক্ষায় কীর্তন এবং শিখ ধর্মের গভীর অধ্যয়ন অন্তর্ভুক্ত ছিল।

পরে তাঁর পরিবার পাঞ্জাবে ফিরে আসে এবং তিনি রামদাস গ্রামে বাবা বুদ্ধের প্রপৌত্র ভাই গুরদিত্তার সাথে বসবাস করতে শুরু করেন। সুরজন সিং-এর কন্যা বিবি রাজ কউরের সাথে তাঁর বিয়ে হয়।

গুরু তেগ বাহাদুরজীর শাহাদাত এবং ভাই জৈতার অবদান

১৬৭৫ সালে, যখন শিখদের নবম গুরু গুরু তেগ বাহাদুরকে মুঘলরা দিল্লির চাঁদনী চকে শহীদ করে, তখন ভাই জৈতা ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় লেখেন।

গুরুর শহিদ মস্তক নিরাপদে বাঁচিয়ে তিনি তা গুরু গোবিন্দ সিং-এর কাছে পৌঁছে দেওয়ার সাহসী কাজ করেছিলেন।

গুরু গোবিন্দ সিং এই আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে "রংরেটা গুরু কা বেটা" উপাধিতে ভূষিত করেন।

এই ঘটনা শিখ ধর্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে এবং ভাই জৈতা শিখ ইতিহাসে অমর হয়ে যান।

ভাই জৈতা থেকে বাবা জীবন সিং হওয়ার যাত্রা

গুরু গোবিন্দ সিং ভাই জৈতার নাম পরিবর্তন করে বাবা জীবন সিং রাখেন।

তাঁকে শিখ ধর্মের প্রথম সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

তিনি গুরু গোবিন্দ সিং-এর সাথে ভাঙ্গানি, নাদৌন, আনন্দপুর সাহেব এবং চামকৌরের যুদ্ধসহ বহু যুদ্ধ লড়েছিলেন।

তাঁর মহত্ত্ব কেবল তাঁর বীরত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি 'শ্রী গুরু কথা' নামক একটি বই লিখেছিলেন, যেখানে গুরু গোবিন্দ সিং-এর অনন্য কাজের বর্ণনা রয়েছে।

চামকৌরের যুদ্ধ এবং শাহাদাত

১৭০৪ সালে চামকৌরের ঐতিহাসিক যুদ্ধের সময় বাবা জীবন সিং তাঁর গুরু এবং শিখ ধর্মের সুরক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

এই যুদ্ধে তিনি অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

তাঁর শাহাদাত শিখ ধর্মে এক মহান আত্মত্যাগ হিসেবে স্মরণ করা হয়।

তাঁর স্মরণে গুরুদ্বার শহীদ বুর্জ সাহেব নির্মাণ করা হয়েছে, যা আজও তাঁর আত্মত্যাগের সাক্ষ্য বহন করে।

ভাই জীবন সিং-এর অবদান ও প্রেরণা

ভাই জীবন সিং-এর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আত্মত্যাগ, নিষ্ঠা এবং কর্তব্যপরায়ণতা কীভাবে ধর্ম ও সমাজকে শক্তিশালী করতে পারে।

তিনি শিখ ধর্মকে সংকট থেকে উদ্ধার করেন এবং এটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।

তাঁর জীবন কেবল শিখ সম্প্রদায়ের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য অনুপ্রেরণা।

উপসংহার

ভাই জীবন সিং-এর অবদান শিখ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাঁর বীরত্ব এবং আত্মত্যাগ শিখ ধর্মকে নতুন দিশা দিয়েছে। আজ, তাঁর শাহাদাত এবং নিষ্ঠা আমাদের প্রতিটি পরিস্থিতিতে নিজেদের কর্তব্যের প্রতি নিবেদিত থাকার প্রেরণা যোগায়।

Leave a comment