তামিলনাড়ু, ১৭ মে — ভারতের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম চোল রাজবংশের মন্দিরগুলি আজও জীবন্ত স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় এক হাজার বছর আগে নির্মিত এই মন্দিরগুলি শুধুমাত্র ধর্মীয় আস্থার প্রতীক নয়, বরং স্থাপত্য, মূর্তিশিল্প এবং সামাজিক সংগঠনের অসাধারণ উদাহরণও। দক্ষিণ ভারতের চোল শাসকরা ৯ম থেকে ১৩শ শতাব্দীর মধ্যে শাসন করে তামিলনাড়ুতে অপূর্ব ও কলাত্মক মন্দিরগুলির নির্মাণ করেছিলেন।
এই মন্দিরগুলির অনেকে আজও পূজা স্থল হিসেবে সক্রিয় এবং “দ্য গ্রেট লিভিং চোল টেম্পলস” নামে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।
ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত
চোল যুগের এই তিনটি প্রধান মন্দির আজও স্থাপত্য বিজ্ঞান এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে টিকে আছে:
- বৃহদীশ্বর মন্দির, তঞ্জাবুর
- নির্মাণ বছর: ১০১০ খ্রিষ্টাব্দ
- নির্মাতা: রাজরাজ চোল I
- এই বিশাল শিব মন্দিরটি তার ৬৬ মিটার উঁচু বিমান (শিখর) এর জন্য বিখ্যাত।
- মন্দিরের শীর্ষে অবস্থিত ৮০ টন ওজনের গ্রানাইট পাথর স্থাপত্য বিজ্ঞানের এক অদ্ভুত রহস্য, যা ৬ কিলোমিটার লম্বা র্যাম্পের সাহায্যে উপরে উঠানো হয়েছিল।
- প্রাচীরগুলিতে সুন্দর খোদাই, নৃত্যমুদ্রা এবং ধর্মীয় চিত্রাঙ্কন মন্দিরের শিল্পকৌশল প্রদর্শন করে।
গঙ্গাইকোণ্ড চোলপুরম মন্দির, আরিয়ালুর
- নির্মাণ বছর: ১০৩৫ খ্রিষ্টাব্দ
- নির্মাতা: রাজেন্দ্র চোল I
- এই মন্দিরটি একটি বিশাল শিবলিঙ্গ এবং মূর্তিশিল্পের সূক্ষ্ম কাজের জন্য পরিচিত।
- মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী বৃহদীশ্বর মন্দির থেকে অনুপ্রাণিত তবে এটি আরও সূক্ষ্ম এবং কোমল বিবরণে পরিপূর্ণ।
এরাবতেশ্বর মন্দির, দারাসুরম
- নির্মাণকাল: ১২শ শতাব্দী
- নির্মাতা: রাজরাজ চোল II
- এই মন্দিরের সিঁড়িগুলি সংগীত তৈরি করে – একটি অনন্য স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য।
- এখানকার প্রাচীর ও স্তম্ভে জীবন ও ধর্মের সাথে সম্পর্কিত চিত্র খোদাই করা আছে।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
ঐতিহাসিকদের মতে, এই মন্দিরগুলি কেবলমাত্র পূজা স্থল ছিল না, বরং সেই সময়ের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্রও ছিল। মন্দিরগুলিতে:
- নাট্যশালা (শাস্ত্রীয় নৃত্যের প্রদর্শনের জন্য)
- গ্রন্থাগার এবং শিক্ষাকেন্দ্র
- জল ব্যবস্থাপনা এবং খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা
দ্রাবিড় স্থাপত্যের অসাধারণ উদাহরণ
চোল মন্দিরগুলিতে দ্রাবিড় স্থাপত্য শৈলীর ছাপ স্পষ্ট। গ্রানাইটের মতো কঠিন পাথরে সূক্ষ্ম খোদাই, উঁচু গোপুরম এবং গাণিতিকভাবে নিখুঁত মণ্ডপ ও গর্ভগৃহ এগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই মন্দিরগুলি সিমেন্ট বা চুন ছাড়াই নির্মিত হয়েছে, তবুও এগুলি হাজার বছর ধরে টিকে আছে।
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি
১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো এই মন্দিরগুলি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করে এবং এগুলিকে "লিভিং টেম্পলস" বলে অভিহিত করে — কারণ এগুলি আজও ধর্মীয়ভাবে সক্রিয় এবং লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও পর্যটককে আকর্ষণ করে।
কিছু আকর্ষণীয় তথ্য
- বৃহদীশ্বর মন্দিরের শীর্ষস্থানীয় পাথরটি এখনও রহস্য হিসেবে থেকে গেছে যে এটি এত উঁচুতে কীভাবে রাখা হয়েছিল।
- মন্দিরগুলিতে আজও ভরতনাট্যমের মতো শাস্ত্রীয় নৃত্যের প্রদর্শন হয়।
- এই মন্দিরগুলিতে প্রাচীন মূর্তিশিল্পীদের কার্যশালা এবং সংগীত বিদ্যালয়ও কার্যকর ছিল।