হিন্দু ধর্মে একাদশী ব্রতকে বিশেষ ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। বছর পুরোতে মোট ২৪টি একাদশী আসে, যার প্রত্যেকটিরই নিজস্ব বিশেষ মহিমা আছে। আষাঢ় মাসের কৃষ্ণ পক্ষের একাদশীকে যোগিনী একাদশী বলা হয়। এই তিথি শুধুমাত্র পাপের বিনাশের সুযোগ নয়, বরং ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভেরও শ্রেষ্ঠ সময়।
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, যোগিনী একাদশীর ব্রত রাখলে ৮৮ হাজার ব্রাহ্মণকে ভোজন করানোর সমান পুণ্য লাভ হয়। এই ব্রত পালন করলে জীবনে আসা কঠিনতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং ব্যক্তি আধ্যাত্মিক ও পারিবারিক সুখ লাভ করে।
যোগিনী একাদশী ২০২৫: তিথি ও শুভ মুহূর্ত
পঞ্চাঙ্গ অনুসারে,
- একাশী তিথি আরম্ভ: ২১ জুন ২০২৫, সকাল ৭:১৮ টা
- একাশী তিথি সমাপ্তি: ২২ জুন ২০২৫, সকাল ৪:২৭ টা
উদয় তিথিকে মেনে যোগিনী একাদশীর ব্রত ২১ জুন (শনিবার) পালন করা হবে।
ব্রত পারণের সময়
ব্রত পারণ অর্থাৎ ব্রত ভাঙ্গার সময় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
পারণ মুহূর্ত: ২২ জুন ২০২৫, দুপুর ১:৪৭ টা থেকে বিকেল ৪:৩৫ টা পর্যন্ত
এই সময়ের মধ্যে ব্রত পারণ করা শুভ ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।
যোগিনী একাদশীর ধর্মীয় গুরুত্ব
যোগিনী একাদশীর ধর্মীয় গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি বলে মনে করা হয়। এই দিন ব্রত ও পূজা করলে ব্যক্তির পাপ ধ্বংস হয় এবং জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি আসে। এই ব্রত বিশেষ করে ভগবান বিষ্ণুকে প্রসন্ন করার জন্য করা হয়। মনে করা হয় যোগিনী একাদশীর পুণ্য হাজার হাজার গরুর দান, তীর্থযাত্রা এবং বেদের অধ্যয়নের সমান ফল দেয়। সত্যিকারের মনে ব্রত রাখলে ভগবান বিষ্ণু সকল ইচ্ছা পূর্ণ করেন এবং জীবনের দুঃখ থেকে মুক্তি দান করেন।
যোগিনী একাদশী ব্রত ও পূজা পদ্ধতি
যোগিনী একাদশীর ব্রত দশমী তিথির সন্ধ্যা থেকেই শুরু বলে মনে করা হয়। এই দিন থেকে খাদ্য ও আচরণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। পূজা পদ্ধতি নিম্নরূপ:
দশমী তিথির সাবধানতা
- রাতের খাবার হালকা করুন, যাতে গম, মুগ ও যব না থাকে।
- লবণের ব্যবহার পরিহার করুন।
- মানসিক শুদ্ধি বজায় রাখুন এবং পরের দিন ব্রতের সংকল্প করুন।
একাশী তিথির পূজা পদ্ধতি
১. স্নান ও সংকল্প
সকালে তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করুন এবং পরিষ্কার পোশাক পরিধান করুন। ভগবান বিষ্ণুর সামনে ব্রতের সংকল্প করুন যে পুরো দিন উপবাস ও ভক্তি সহকারে পূজা করবেন।
২. পূজনস্থলের প্রস্তুতি
পূজা স্থান পরিষ্কার করে চৌকিতে হলুদ বস্ত্র বিছিয়ে ভগবান বিষ্ণুর প্রতিমা বা ছবি স্থাপন করুন।
৩. পূজন সামগ্রী
- হলুদ ফুল
- তুলসী দল
- দীপক, ধূপ
- পঞ্চামৃত
- ভোগ (খির, ফল, মিষ্টান্ন)
৪. পূজন পদ্ধতি
- ভগবান বিষ্ণুকে গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করান (যদি সম্ভব হয়)।
- চন্দন, অক্ষত, ফুল অর্পণ করুন।
- তুলসী পাতার সাথে ভোগ অর্পণ করুন।
- ‘ॐ नमो भगवते वासुदेवाय’ মন্ত্র জপ করুন।
- শেষে বিষ্ণুসহস্রনাম বা বিষ্ণু চালিসার পাঠ করুন।
৫. রাত জাগ্রণ
একাশীর রাতে ভগবদ্গীতা, পুরাণ বা ভগবান বিষ্ণুর কথার পাঠ করুন। এটি অত্যন্ত পুণ্যদায়ক।
যোগিনী একাদশী সংক্রান্ত পৌরাণিক কথা
প্রাচীনকালে অলকাপুরীর রাজা কুবেরের বাগানী প্রধান হেমমালীকে যোগিনী একাদশীর ব্রত পালন করতে হয়েছিল, কিন্তু তিনি একদিন তাঁর স্ত্রীর প্রেমে পড়ে ব্রত ভঙ্গ করেছিলেন। এর ফলে তাঁকে কুষ্ঠরোগ হয়েছিল এবং রাজা তাকে রাজ্য থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। তিনি হিমালয়ে গিয়ে ঋষি মার্কণ্ডেয়ের কাছে যোগিনী একাদশীর ব্রত বিধি মেনে পালন করেছিলেন, যার ফলে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন এবং সকল পাপ ধ্বংস হয়েছিল।
যোগিনী একাদশীর ব্রতের ফলে প্রাপ্ত লাভ
- জীবনের সংকট থেকে মুক্তি
- মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিক বল
- পাপের ক্ষয় ও শুভ কर्मের বৃদ্ধি
- সন্তান সুখ ও পারিবারিক কল্যাণ
- রোগ ও কষ্ট থেকে মুক্তি
- ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ কৃপা
যোগিনী একাদশী শুধুমাত্র উপবাসের প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক সাধনা, শুদ্ধতা ও ভক্তির প্রতীক। এই দিন ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভের জন্য সত্যিকারের মনে পূজা করা উচিত। যারা এই দিন ব্রত পালন করেন, তারা জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও মোক্ষের পথে অগ্রসর হন।