লোহড়ি: লোহড়ি হল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় উৎসব যা প্রধানত পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি এবং উত্তর ভারতের অন্যান্য অংশে উদযাপিত হয়। এটি বিশেষ করে রবি ফসলের কাটা এবং শীতের শেষের প্রতীক। লোহড়ি উৎসব মকর সংক্রান্তির ঠিক একদিন আগে পালিত হয়, এবং এটি বিশেষ করে কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের বিভিন্ন অংশে লোহড়ি উৎসব ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালিত হয়। বিশেষ করে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মানুষের জন্য এই উৎসবের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই উৎসব মূলত রবি ফসলের কাটা সংগ্রহের সাথে জড়িত, এবং এটি আগুনের পূজার উৎসবও বলা হয়। লোহড়ির দিনে লোকেরা তাদের বাড়িতে আগুন জ্বালায় এবং আগুনের চারপাশে নাচ করে আনন্দ উদযাপন করে। এইবার লোহড়ি কখন পালিত হবে, এর গুরুত্ব কী এবং এর পৌরাণিক কাহিনী কী, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
লোহড়ি ২০২৫ লোহড়ি কখন পালিত হবে?
প্রতি বছর লোহড়ি উৎসব মকর সংক্রান্তির ঠিক একদিন আগে পালিত হয়। ২০২৫ সালে লোহড়ি উৎসব ১৩ জানুয়ারি পালিত হবে। এই উৎসব বিশেষ করে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় পালিত হলেও, এখন দেশের অন্যান্য অংশেও এটি উৎসাহের সাথে পালিত হচ্ছে। লোহড়ি উৎসব বাগানি ও কৃষিকাজের সাথে জড়িত, বিশেষ করে রবি ফসলের কাটা সংগ্রহের সময়। এই উৎসব কৃষি সম্প্রদায়ের জন্য নতুন শুরু এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
লোহড়ির ধর্মীয় গুরুত্ব
লোহড়ির ধর্মীয় গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, এবং এই উৎসব বিশেষ করে আগুনের দেবতা এবং সূর্য দেবতার পূজার সাথে জড়িত। এই দিন লোকেরা আগুন জ্বালিয়ে তাকে সম্মান জানায় এবং আগুনের চারপাশে নাচে। এছাড়াও এই দিনে তিল, মিষ্টি, রেওড়ি এবং গজকের মতো জিনিসপত্র আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। এইভাবে লোকেরা আগুনের মাধ্যমে তাদের পাপের ধ্বংসের আশা করে। লোহড়ির দিন লোকেরা কেবল আনন্দ উদযাপন করেই না, বরং তাদের ফসলের সফলতার জন্য ধন্যবাদ জানায়।
লোহড়ির দিন সূর্যোদয়ের আগে ব্রহ্ম মুহূর্তে স্নান করা এবং এরপর সারা দিন পুণ্য কাজ করা শুভ বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে কৃষকদের জন্য এই দিনটি বিশেষ, কারণ এটি তাদের জন্য ফসলের সাফল্যের প্রতীক। এই দিনে রবি ফসলের কাটা সংগ্রহের পাশাপাশি, ঘরে ঘরে আনন্দের পরিবেশ থাকে এবং লোকেরা পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানায়।
লোহড়ির পৌরাণিক কাহিনী
লোহড়ি উৎসবের সাথে একটি বিখ্যাত পৌরাণিক কাহিনী জড়িত, যা আজও প্রত্যেক বাড়িতে বলা হয়। এই কাহিনী একজন সিখ যোদ্ধার সাথে জড়িত, এবং এই দিনের গুরুত্বকে স্পষ্ট করে। কাহিনী অনুযায়ী, মুঘল শাসনের সময় একজন বীর ডাকাত দুল্লা ভট্টি ছিলেন। তিনি দরিদ্রদের সাহায্য করতেন এবং তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করতেন। একবার দুল্লা ভট্টি জানতে পারেন যে কিছু জমিদার দুইজন দরিদ্র বোন—সুন্দরী ও মুন্দরী—কে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তাদের উদ্ধারের জন্য দুল্লা ভট্টি জমিদারদের সাথে লড়াই করে তাদের মুক্তি দিয়ে, বনে একটি নিরাপদ স্থানে তাদের বিবাহ করিয়ে দেন। এই ঘটনা লোহড়ির দিনে ঘটেছিল, এবং এরপর দুল্লা ভট্টি পাঞ্জাবে নায়কের উপাধি পান।
আজও লোহড়ির দিন লোকেরা লোকগান গায়, যাতে দুল্লা ভট্টি ও তার বীরত্বের কথা বলা হয়। বিশেষ করে শিশুরা এই গান গেয়ে লোহড়ির দিনকে আরও বিশেষ করে তোলে।
লোহড়ির দিনের প্রধান রীতি
লোহড়ি উৎসব সাধারণত একটি সম্মিলিত উৎসব। এই দিনে লোকেরা তাদের বাড়িতে লোহড়ি জ্বালায় এবং এর চারপাশে নাচে। এছাড়াও, লোহড়ির দিনে লোকেরা পরস্পরকে তিল, মিষ্টি, রেওড়ি এবং গজকের মতো খাবার বিতরণ করে। এই দিনে লোকেরা আতশবাজিও জ্বালায় এবং রাতভর আনন্দ উদযাপন করে।
এছাড়াও, অনেক জায়গায় এই দিনে পাখিওড়াও হয়। বিশেষ করে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় এই রীতিটি খুবই জনপ্রিয়। লোকেরা এই দিনে ভাল স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির কামনা করে নতুন বছর শুরু করে। এর পাশাপাশি, এই দিনে বিশেষ পূজা করা হয় এবং বাড়িতে বিশেষ খাবার তৈরি করা হয়।
লোহড়ি কেবল একটি সাংস্কৃতিক উৎসবই নয়, এটি কৃষকদের জন্য আনন্দ ও সমৃদ্ধির প্রতীকও বটে। এই দিনে লোকেরা তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল ভোগ করে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে। এছাড়াও, এই উৎসব সামাজিক ও পারিবারিক মিলনকে উৎসাহিত করে, যার ফলে একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধও দৃঢ় হয়।
এই বছর ১৩ জানুয়ারি লোহড়ি উৎসব পালিত হবে, এবং এই দিন আপনার জন্যও আনন্দ ও সমৃদ্ধির শুরু হতে পারে। সুতরাং এই দিনটি উদযাপন করুন এবং আপনার বাড়ি ও সমাজে আনন্দের পরিবেশ ছড়িয়ে দিন।