পৌষ পূর্ণিমা: পৌষ পূর্ণিমা হিন্দু ধর্মে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র দিন বলে বিবেচিত হয়। এই দিনটি বিশেষ করে পুণ্য অর্জন, দান করার এবং গঙ্গায় স্নান করার জন্য আদর্শ সময় বলে মনে করা হয়। এই বছর পৌষ পূর্ণিমা পালিত হবে ১৩ জানুয়ারী ২০২৫। এর সাথে জড়িত ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যগুলি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই দিনের গুরুত্ব ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিক শান্তি অর্জন করার জন্যও রয়েছে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক এই দিনের সাথে জড়িত প্রধান বিষয়গুলি, যা এই বছর বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
পৌষ পূর্ণিমার গুরুত্ব
পৌষ পূর্ণিমা হিন্দু পঞ্জিকার পৌষ মাসে পড়ে, যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাসগুলির মধ্যে একটি। বিশেষ করে এই দিন গঙ্গা স্নান এবং দান-পুণ্য করলে ব্যক্তির সমস্ত পাপ দূর হয়ে যায় এবং জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে ভগবান বিষ্ণু এবং দেবী লক্ষ্মীর পূজা করলে ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি আসে।
পৌষ পূর্ণিমা ২০২৫ এর তারিখ এবং সময়
হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, পৌষ পূর্ণিমার তারিখ ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ০৫ টা ০৩ মিনিট থেকে শুরু হবে এবং ১৪ জানুয়ারী ২০২৫ রাত ০৩ টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। তাই, ১৩ জানুয়ারী উদয় তিথিতে হওয়ার কারণে পৌষ পূর্ণিমার উৎসব এই দিনেই পালিত হবে। এই দিনের সাথে মহাকুম্ভের সূচনাও হচ্ছে, যা এটিকে আরও পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
পৌষ পূর্ণিমা ২০২৫ স্নান ও দানের মুহূর্ত
পৌষ পূর্ণিমার দিন স্নান ও দান করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। ব্রহ্ম মুহূর্ত, যা সকাল ৫:২৭ থেকে ৬:২১ পর্যন্ত, বিশেষ করে পুণ্যকর্মের জন্য আদর্শ সময়। এই সময়ে নদীতে স্নান এবং দান করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি, অভিজিৎ মুহূর্ত, যা দুপুর ১২:০৯ থেকে ১২:৫১ পর্যন্ত, একটি শুভ সময়।
বিজয় মুহূর্ত, যা দুপুর ২:১৫ থেকে ২:৫৭ পর্যন্ত, একই রকম কাজের জন্য উপযুক্ত সময় বলে মনে করা হয়। এছাড়াও, রবি যোগ, যা সকাল ৭:১৫ থেকে ১০:৩৮ পর্যন্ত, যে কোনও শুভ কাজের জন্য একটি উত্তম সময় বলে মনে করা হয়।
মহাকুম্ভের সূচনা
পৌষ পূর্ণিমার দিনে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ধর্মীয়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব মহাকুম্ভের সূচনা হচ্ছে। এই দিনে লক্ষ লক্ষ ভক্ত গঙ্গা, যমুনা সহ অন্যান্য পবিত্র নদীতে স্নান করার জন্য একত্রিত হন। এই দিনটি বিশেষ করে পুণ্যের দিন বলে মনে করা হয় এবং এই দিনে করা কাজ থেকে ব্যক্তির জীবনে মুক্তি লাভ বলে মনে করা হয়।
পৌষ পূর্ণিমায় বিশেষ পূজা পদ্ধতি
পৌষ পূর্ণিমার দিনে বিশেষ করে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা হয়। এছাড়াও দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পেতে ঘরে প্রদীপ জ্বালা এবং ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা হয়। এই দিনে বিশেষ করে ব্রাহ্মণদের খাবার খাওয়ানো, তাদের বস্ত্র ও দক্ষিণা দেওয়া অত্যন্ত পুণ্যকর্ম বলে মনে করা হয়।
পৌষ পূর্ণিমার দিনে এই বিশেষ কাজ করুন
• গঙ্গা স্নান: এই দিন গঙ্গা বা কোনও পবিত্র নদীতে স্নান করলে শারীরিক এবং মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
• দান-পুণ্য: এই দিন বিশেষ করে দরিদ্র ও ব্রাহ্মণদের দান করা উচিত, যা পুণ্য অর্জন করে।
• পূজা ও ব্রত: ভগবান বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর পূজা করে সমৃদ্ধির কামনা করুন।
• মহামন্ত্র জপ: এই দিনে বিশেষ করে শ্রী বিষ্ণু মন্ত্রের জপ করলে জীবনে সমৃদ্ধি আসে।
পৌষ পূর্ণিমা একটি বিশেষ দিন, যা শুধুমাত্র ধর্মীয় দিক দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি আধ্যাত্মিক শান্তি এবং মানসিক ভারসাম্য অর্জন করার সময়ও। এই দিনে করা ধর্মীয় কাজ থেকে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে এবং আগামী সমস্যা থেকে মুক্তি পায়। এই দিনটি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আস্থার সাথে পালন করুন এবং আপনার জীবনকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করার জন্য প্রচেষ্টা করুন।
```