ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে বন্ধুত্বের আসল অর্থ শিখুন

🎧 Listen in Audio
0:00

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে বন্ধুত্বের আসল অর্থ শিখুন Learn the true meaning of friendship from Lord Krishna

মানুষ প্রায়শই অভিযোগ করে যে পৃথিবীতে কেউ কারও সত্যিকারের বন্ধু নয়। তারা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার বেদনাদায়ক কবিতা বা গানে সান্ত্বনা খুঁজে। শুধু তাই নয়, বন্ধুত্ব নিয়ে একটি সিনেমার গান সবার পছন্দের গান হয়ে যায়। কিন্তু, সত্যিই কি সবাই ভালো বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক চায়? বিশ্বাস করা হয় যে সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে আসে, আর বন্ধুত্ব কাকতালীয়ভাবে পাওয়া যায়। তবে, সম্পর্ক মানেই প্রত্যাশা, যেখানে বন্ধুত্ব মানে সমতার চেষ্টা।

প্রত্যেকেই ভালো বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক চাইলেও, তা পাওয়ার জন্য অন্য পক্ষের বিশ্বাসের প্রয়োজন। তারা বলে যে প্রয়োজনের সময় সাহায্য করাই বন্ধুত্বের আসল পরীক্ষা। মানুষ সবসময় অন্যদের পরীক্ষা করে। যখন আমাদের সততার পরীক্ষা হয়, তখনই বোঝা যায় আমরা কতটা ভালো এবং খাঁটি হতে পারি। আব্রাহাম লিঙ্কন বিশ্বাস করতেন, যদি বন্ধুত্ব কারও সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়, তবে তিনিই সবচেয়ে শক্তিশালী।

যখন দুজন ভিন্ন মানুষের জীবন একত্রিত হয়, তখন সেই সম্পর্কের গুরুত্ব বা রহস্য ব্যাখ্যা করা যায় না। বুঝতে হবে যে ভালো বন্ধুত্বের পিছনে একটি ঐশ্বরিক শক্তি কাজ করে, যার কারণে দুজন অপরিচিত মানুষ কাছাকাছি আসে। এর পিছনে ত্যাগ এবং ভালোবাসার গভীরতা প্রয়োজন। যদিও বন্ধুত্বের দিন উদযাপন করার প্রথা পশ্চিমা দেশ থেকে ভারতে এসেছে, তবে এর উদ্দেশ্য বন্ধুদের ধন্যবাদ জানানো। তবে, এই আধুনিক যুগের বাইরে গিয়ে, আপনার দেশের প্রাচীন সংস্কৃতির দিকে মনোযোগ দিলে, আপনি দেখতে পাবেন যে এখানকার মানুষ সত্যিকারের বন্ধুত্বের প্রতি কতটা নিবেদিত, তাদের বন্ধুদের সমানভাবে সম্মান করে এবং তাদের সাথে বহু যুগ ধরে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

আজ আমরা দ্বাপর যুগের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা বলব, যিনি শুধু বন্ধুত্বই নয়, প্রতিটি সম্পর্কই নিঃস্বার্থভাবে পালন করেছেন। আধুনিক যুগে যখন মানুষ তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবন থেকে আমাদের অনুপ্রেরণা নেওয়া প্রয়োজন। আসুন জেনে নিই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেই বন্ধুদের সম্পর্কে, যারা প্রয়োজনে তাঁর কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার পাশাপাশি, সারা জীবন তাঁর কাছ থেকে সম্মানও পেয়েছেন।

কৃষ্ণ-সুদামা

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বন্ধুদের মধ্যে সুদামার নাম প্রথম মনে আসে। শ্রীকৃষ্ণ যখন প্রাসাদের রাজা ছিলেন, তখন সুদামা ছিলেন একজন দরিদ্র ব্রাহ্মণ, তবে শ্রীকৃষ্ণ এই পার্থক্যকে তাঁর বন্ধুত্বের মাঝে আসতে দেননি। শ্রীকৃষ্ণের বাল্যবন্ধু সুদামা যখন আর্থিক সাহায্য চাইতে দ্বারকায় আসেন, তখন তিনি সন্দেহ করেছিলেন যে শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে চিনতে পারবেন কিনা। কিন্তু, শ্রীকৃষ্ণ সুদামার নাম শোনার সঙ্গে সঙ্গেই, খালি পায়ে তাঁর সাথে দেখা করতে ছুটে যান। তিনি তাঁকে সম্মানের সাথে প্রাসাদে নিয়ে যান, যেখানে সুদামা আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদতে শুরু করেন। সুদামা যে সামান্য চিঁড়ে এনেছিলেন, তিনি সেটা বিশেষ খাবার হিসেবে গ্রহণ করেন এবং শুধু তাই নয়, শ্রীকৃষ্ণ তাঁর চিন্তা বুঝতে পেরে, না চাইতেই তাঁকে সবকিছু দিয়ে ধনী করে দেন।

কৃষ্ণ-অর্জুন

অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণের ভাই হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু তিনি তাঁকে নিজের বন্ধু মনে করতেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে, শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের সারথি ছিলেন এবং যখন অর্জুন দুর্বল বোধ করছিলেন, তখন তিনি তাঁকে ধর্মের পথ শিখিয়ে উৎসাহিত করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের পথনির্দেশনার মাধ্যমেই অর্জুন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং অবশেষে পান্ডবরা বিজয়ী হয়েছিলেন।

কৃষ্ণ-দ্রৌপদী

দ্রৌপদী ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিজের ভাই ও বন্ধু মনে করতেন। শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে 'সখী' বলে ডাকতেন। যখন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করা হচ্ছিল, তখন তিনি শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করেছিলেন, আর তিনি তাঁকে রক্ষা করতে এসে বস্ত্রহরণের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। এটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, কষ্টের সময়ে আমাদের বন্ধুদের সাহায্য করা উচিত।

কৃষ্ণ-অক্রুর

অক্রুর সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণের মামা ছিলেন, তবে তিনি তাঁর একজন নিবেদিত ভক্তও ছিলেন। অক্রুরই শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরামকে বৃন্দাবন থেকে মথুরায় নিয়ে গিয়েছিলেন। পথে শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে তাঁর আসল রূপ দেখিয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্কে সত্য জানার পর অক্রুর নিজেকে তাঁর কাছে সমর্পণ করেছিলেন। ঈশ্বর এবং ভক্তের মধ্যে সম্পর্ক হলেও, শ্রীকৃষ্ণ এটিকে স্বাভাবিকভাবেই বন্ধুত্বের মতো করে দেখতেন। আজ শ্রীকৃষ্ণ এবং অক্রুরকে দেখে বোঝা যায়, মন পবিত্র এবং কলুষতামুক্ত হলে, ঈশ্বর এবং ভক্তও সত্যিকারের বন্ধু হতে পারে।

Leave a comment