৩০ মে ২০২৫: বিনায়ক চতুর্থী, পঞ্জিকা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতীয় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পঞ্জিকার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিটি দিনের শুভ-অশুভ যোগ, তিথি, নক্ষত্র এবং গ্রহের অবস্থানের উপর জীবনের বিভিন্ন কাজের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করে। এই ধারাবাহিকতায় ৩০ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দও ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনটি শুক্রবার হওয়ার সাথে সাথে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের চতুর্থী তিথিও।

এছাড়াও এই দিনে বিনায়ক চতুর্থীর ব্রত পালন করা হবে, যা ভগবান গণেশকে উৎসর্গীকৃত। আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেই ৩০ মে ২০২৫-এর পঞ্জিকার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, শুভ মুহূর্ত, রাহুকাল এবং সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সময়।

৩০ মে ২০২৫-এর তিথি ও যোগ

৩০ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে জ্যৈষ্ঠ শুক্ল পক্ষের চতুর্থী তিথি, যা রাত ৯ টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। এই তিথি ভগবান গণেশের পূজা-অর্চনার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়, বিশেষ করে বিনায়ক চতুর্থী হিসেবে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই দিনে ব্রত পালনকারী ভক্তগণ ভগবান গণেশের পূজা করে তাঁর আশীর্বাদ লাভ করেন।

এই দিন রবি যোগও থাকবে, যা রাত ৯ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত প্রভাবশালী থাকবে। রবি যোগ সূর্যের প্রভাব সম্পন্ন যোগ এবং এটিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই যোগে কোনও কাজ করলে তা অবশ্যই সফল হয়। বলা হয় যে রবি যোগ সকল কুপ্রভাব, কুযোগ এবং নেতিবাচক শক্তিকে ধ্বংস করার অসাধারণ ক্ষমতা রাখে। তাই এই যোগের সময় শুরু করা কাজে বাধা আসে না এবং সেগুলি সম্পূর্ণ সফল হয়।

নক্ষত্রের অবস্থা

৩০ মে রাত ৯ টা ২৯ মিনিট পর্যন্ত পুনর্বসু নক্ষত্র থাকবে। পুনর্বসু নক্ষত্রকেও শুভ বলে মনে করা হয়, বিশেষ করে ধর্মীয় কर्मकांड, পূজা, দান-পুণ্য ইত্যাদি কাজের জন্য। এই নক্ষত্রের অবস্থানে করা কাজ থেকে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

বিনায়ক চতুর্থী ব্রতের গুরুত্ব

৩০ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে বিনায়ক চতুর্থীর ব্রত পালন করা হবে, যা ভগবান গণেশকে উৎসর্গীকৃত। বিনায়ক চতুর্থীতে ব্রত করলে বুদ্ধি ও সমৃদ্ধি লাভ হয়। এই ব্রত বিশেষ করে গণেশজীর কৃপা লাভ করার জন্য করা হয় যাতে জীবনের বাধা দূর হয় এবং প্রতিটি কাজ সফল হয়। এই ব্রতে ভক্তরা পুরো দিন নিরজল থাকতে পারেন অথবা ফলাহার করতে পারেন, এরপর ভগবান গণেশের বিধিপূর্ণ পূজা-অর্চনা করা হয়।

পূজার পর ভোগ দেওয়া হয় এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এই ব্রত সমস্ত গণেশ ভক্তদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়।

রাহুকালের সময় – কখন এড়িয়ে চলা উচিত?

৩০ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে রাহুকালের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দিনের শুভ কাজের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয় না। রাহুকালে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা শুভ কাজ শুরু করা উচিত নয় কারণ এই সময়ে গ্রহের অবস্থান নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রধান শহরগুলির জন্য রাহুকালের সময় নিম্নরূপ:

  • দিল্লি: সকাল ১০:৩৫ থেকে ১২:১৯ পর্যন্ত
  • মুম্বই: সকাল ১০:৫৭ থেকে ১২:৩৬ পর্যন্ত
  • চণ্ডীগড়: সকাল ১০:৩৬ থেকে ১২:২০ পর্যন্ত
  • লখনউ: সকাল ১০:২১ থেকে ১২:০৪ পর্যন্ত
  • ভোপাল: সকাল ১০:৩৭ থেকে ১২:১৮ পর্যন্ত
  • কলকাতা: সকাল ০৯:৫৪ থেকে ১১:৩৪ পর্যন্ত
  • আহমেদাবাদ: সকাল ১০:৫৬ থেকে ১২:৩৭ পর্যন্ত
  • চেন্নাই: সকাল ১০:৩০ থেকে ১২:০৬ পর্যন্ত

এই সময়কালে শুভ কাজ স্থগিত করা উচিত।

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়

দিনের শুরু এবং শেষকে চিহ্নিত করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়কেও পঞ্জিকায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ৩০ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে সূর্যোদয়ের সময় সকাল ৫:২৪ টা, এবং সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৭:১৩ টা। এই সময়গুলি দৈনন্দিন জীবনের নিয়মিত কাজ এবং ধর্মীয় ক্রিয়া-কলাপের জন্য নির্দেশক হিসেবে কাজ করে।

পঞ্জিকা অনুযায়ী অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

৩০ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ধর্মীয় কার্যকলাপ এবং পূজা-পাঠের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত বলে মনে করা হয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের চতুর্থী তিথি ভগবান গণেশের পূজার জন্য একটি শুভ সুযোগ। রবি যোগ এবং পুনর্বসু নক্ষত্রের সমাবেশের ফলে দিনটি আরও বেশি ফলপ্রসূ হয়ে উঠে। এইভাবে ব্রত, দান এবং পূজা-অর্চনার মাধ্যমে পুণ্য লাভ হয় এবং জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।

পঞ্জিকা বিশেষজ্ঞ আচার্য ইন্দু প্রকাশের বার্তা

আচার্য ইন্দু প্রকাশের মতে, ৩০ মে ভগবান গণেশের বিশেষ কৃপা লাভের জন্য অতুলনীয় সুযোগ। এই দিনে বিনায়ক চতুর্থীর ব্রত পালন করলে জীবনের বাধা দূর হয় এবং সাফল্যের দ্বার উন্মোচিত হয়। এছাড়াও রবি যোগে করা কাজে বাধা আসে না, তাই এই দিনে নতুন কাজ শুরু করা বা পূজা করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আচার্যের আরও মতামত, রাহুকালের সময় শুভ কাজ এড়িয়ে চলা উচিত এবং সূর্যোদয়ের আগে বা পরে পূজা-পাঠ করা উত্তম।

Leave a comment