হিন্দু ধর্মে সংকষ্টী চতুর্থীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই দিনটি ভগবান গণেশের পূজা-অর্চনার শ্রেষ্ঠ উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়, যা মাসিকভাবে প্রতিটি কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্থী তিথিতে পালিত হয়। ২০২৫ সালে কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থীর উৎসব ১৪ জুন। এই দিনের শুভ মুহূর্ত, যোগ এবং বিশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব ধর্মগ্রন্থ এবং বৈদিক পঞ্জিকায় বিস্তারিতভাবে বর্ণিত রয়েছে।
এই প্রবন্ধে আমরা আপনাকে ২০২৫ সালের কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থীর সম্পূর্ণ তথ্য দেব, কবে এই উৎসব, এর শুভ মুহূর্ত, যোগ, পঞ্জিকা এবং পূজা পদ্ধতি সম্পর্কে। পাশাপাশি জানবো এই তিথিতে ভগবান গণেশ এবং ভগবান শিবের পূজা কেন অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়।
কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থী ২০২৫ কবে?
বৈদিক পঞ্জিকা অনুসারে, আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথি ১৪ জুন ২০২৫, দুপুর ০৩ টা ৪৬ মিনিটে শুরু হবে এবং পরের দিন ১৫ জুন দুপুর ০৩ টা ৫১ মিনিটে শেষ হবে। এই বছর কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থী এই দিনটিতে, অর্থাৎ ১৪ জুন পালিত হবে। এই দিনের চন্দ্রোদয় (চাঁদের উদয়) রাত ১০ টা ০৭ মিনিটে, যা এই তিথির পবিত্রতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
সংকষ্টী চতুর্থীতে চন্দ্রমার উদয় গুরুত্বপূর্ণ। ভগবান গণেশের পূজা চন্দ্রমার উদয়ের পর করা হয় যাতে তাঁর কৃপায় সকল বাধা দূর হয় এবং জীবনে সুখ-শান্তি বজায় থাকে।
কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থীর ধর্মীয় গুরুত্ব
সংকষ্টী চতুর্থীকে ভগবান গণেশের বিশেষ পূজার জন্য উৎসর্গীকৃত বলে মনে করা হয়। বলা হয় যে, এই দিনে গণেশজীর বিধিপূর্ণ পূজা করলে ব্যক্তির সকল কষ্ট এবং বিঘ্ন দূর হয়। বিশেষ করে আর্থিক টানাপড়েন, মানসিক চাপ এবং পারিবারিক কলহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থীতে রাখা ব্রত অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
এই ব্রত কেবল সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য নিয়ে আসে না, বরং সাধকের মনোকামনা পূর্ণ করে। সংকষ্টী ব্রত নিয়মিত পালন করলে ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি এবং সৌহার্দ্য বজায় থাকে।
কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থীর শুভ মুহূর্ত এবং পঞ্জিকা
- চতুর্থী তিথি আরম্ভ: ১৪ জুন, দুপুর ০৩:৪৬ টা
- চতুর্থী তিথি সমাপ্তি: ১৫ জুন, দুপুর ০৩:৫১ টা
- চন্দ্রোদয়: রাত ১০:০৭ টা
- সূর্যোদয়: সকাল ০৫:২৩ টা
- সূর্যাস্ত: সন্ধ্যা ০৭:২০ টা
- চন্দ্রাস্ত: সকাল ০৭:৪৪ টা
- ব্রহ্ম মুহূর্ত: সকাল ০৪:০২ টা থেকে ০৪:৪৩ টা পর্যন্ত
- বিজয় মুহূর্ত: দুপুর ০২:৪১ টা থেকে ০৩:৩৭ টা পর্যন্ত
- গোধূলি মুহূর্ত: সন্ধ্যা ০৭:১৯ টা থেকে ০৭:৩৯ টা পর্যন্ত
- নিশিতা মুহূর্ত: রাত ১২:০১ টা থেকে ১২:৪২ টা পর্যন্ত
কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থীর শুভ যোগ
এই দিনে বিশেষ করে দুটি যোগের সংযোগ হচ্ছে:
- ইন্দ্র যোগ: দুপুর ০৩:১৩ টা থেকে শুরু হবে। এই যোগ দেবতা ইন্দ্রের সাথে সম্পর্কিত, যা সমৃদ্ধি, শক্তি এবং বিজয়ের প্রতীক।
- ভদ্রাবাস যোগ: এই যোগও এই দিনে রয়েছে, যা শুভ কাজ এবং পূজা-পাঠের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়।
এই যোগের সময় ভগবান গণেশের পূজা করলে মনোকামনা পূর্ণ হয় এবং জীবনে আসা বাধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দূর হয়ে যায়।
শিবাবাস যোগের গুরুত্ব
এই বছর কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থীতে শিবাবাস যোগেরও সংযোগ রয়েছে, যা দুপুর ০৩:৪৬ টা থেকে শুরু হবে। এই যোগ ভগবান শিবের কৃপা এবং শক্তির প্রতীক। বিশ্বাস করা হয় যে, এই যোগে ভগবান শিবের অভিষেক করলে সাধক ভৌতিক এবং আধ্যাত্মিক উভয় প্রকারের সুখ পায়। শিব ও পার্বতীর এই যোগে পূজা করলে পরিবারে সুখ-শান্তি বৃদ্ধি পায়, ধন-সম্পদের প্রাপ্তি হয় এবং সকল কষ্ট দূর হয়। এই সময় ভগবান গণেশ এবং ভগবান শিব উভয়ের আরাধনার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থী ব্রত এবং পূজা পদ্ধতি
সংকষ্টী চতুর্থীর দিন ব্রত পালন করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়। এই ব্রতে ভগবান গণেশের পূজা বিশেষভাবে করা হয়। ব্রত পদ্ধতি নিম্নরূপ:
- সকালে ব্রহ্ম মুহূর্তে উঠে স্নান করুন।
- পরিষ্কার পোশাক পরিধান করুন এবং পরিষ্কার স্থানে গণেশজীর প্রতিমা বা ছবি স্থাপন করুন।
- গণেশজীর জন্য লাল ফুল, মোদক, দুর্বা এবং ফল অর্পণ করুন।
- সংকষ্টী চতুর্থীর বিশেষ মন্ত্র বা গণেশ স্তোত্র জপ করুন।
- সারাদিন ব্রত রাখুন এবং কেবলমাত্র একবার খাবার গ্রহণ করুন, যা হালকা এবং সাধুব্রত।
- চন্দ্রমার উদয়ের পর ব্রত ভাঙ্গুন এবং ভগবান গণেশকে প্রসাদ অর্পণ করুন।
- এই ব্রতের সময় মনে কেবলমাত্র শুভ এবং ইতিবাচক চিন্তা রাখুন। ব্রতের পুণ্যে ব্যক্তির জীবনে সকল বাধা দূর হয় এবং সাফল্যের দ্বার উন্মোচিত হয়।
কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থীর ফল
ভগবান গণেশের পূজা এবং সংকষ্টী ব্রতের নিম্নলিখিত সুফল মনে করা হয়:
- মানসিক শান্তি এবং চাপ থেকে মুক্তি
- আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি
- পারিবারিক জীবনে সুখ-শান্তি এবং সৌহার্দ্য
- সকল প্রকার বিঘ্ন ও বাধা দূর হওয়া
- শিক্ষা, ব্যবসা এবং স্বাস্থ্যে উন্নতি
- ভগবান গণেশের বিশেষ কৃপা এবং আশীর্বাদ লাভ
কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থী ২০২৫ একটি পবিত্র উৎসব যা ভক্তদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই দিনে গণেশজী এবং শিবজীর পূজা-অর্চনার মাধ্যমে ব্যক্তির জীবনের সকল বাধা দূর হয় এবং মনোবাসিত সাফল্য অর্জিত হয়। এই বছর ১৪ জুন আগমনী এই চতুর্থীতে নির্ধারিত শুভ মুহূর্ত এবং যোগের সুযোগ গ্রহণ করে আপনিও আপনার জীবনকে সুখময় এবং সমৃদ্ধশালী করে তুলতে পারেন।
ধর্মীয় আস্থার সাথে এই ব্রত পালন করলে কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক শান্তিই পাওয়া যায় না, বরং ভৌতিক জীবনেও স্থায়িত্ব এবং সমৃদ্ধি আসে। তাই এই কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থীতে ভগবান গণেশ এবং শিবজীর ভক্তিতে লিপ্ত হয়ে আপনার জীবনে নতুন শক্তি এবং উৎসাহ নিয়ে আসুন।